যে শুঁটকি বাজারে লাক্ষার শুঁটকি বিকোয় ৫০০০ টাকা কেজি দরে!
তপ্ত রোদের এক দুপুর বেলা। গাড়ি থেকে আসাদগঞ্জ নামতেই বোঝা গেল ঠিক কোথায় এসে থেমেছে গাড়ি। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি শুঁটকির দোকান। একটু সামনে এগোতেই দেখা গেল মাথায় করে বস্তাবন্দী শুঁটকি নিয়ে এক লোক হেঁটে চলেছেন। একটি দোকানের সামনে এসে থামতেই তার মাথা থেকে শুঁটকির বস্তা নামানোর কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসলেন আরও দুজন লোক। তারপর সেসব শুটকি বস্তা থেকে বের করে ঝুড়িতে ( চট্টগ্রামের ভাষায় খাঁচা) সাজিয়ে রাখছেন দোকানের অন্যান্য কর্মীরা। বেচাকেনায় ব্যস্ত দোকানির সেদিকে তাকানোর যেন ফুসরত নেই।
হরেক রকমের শুঁটকি সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিটি দোকানের সামনে। কমপক্ষে ৩০-৪০ ধরনের সাজিয়ে রাখা শুঁটকি আছে প্রায় প্রতিটি দোকানেই। বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন আকারের শুঁটকি ভর্তি ঝুড়িগুলোর সামনে ক্রেতাদের ভিড়। নিজ হাতে ধরে দেখে যাচাই-বাছাই করে তারা কিনছেন সেসব মাছ। এক দোকানে ক্রেতা এসে কিনে নিলেন ২০ কেজি লইট্ট্যা শুঁটকি। এতে বেশি দরাদরিও চললো না। বিক্রেতা মোহাম্মদ মহসিনকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, "উনি আমাদের এখান থেকে পাইকারি হিসেবে কিনে নিয়ে নিজ এলাকায় খুচরা বিক্রি করবেন। সাধারণত আমাদের এখান থেকে মানুষ বস্তা ভর্তি করেই কিনে নেয়। কেউ কেউ এক দুইবস্তা কেউ কেউ আরও বেশি।"
প্রায় ১০০ বছর আগে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষ চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে শুরু করেন শুঁটকি বিক্রির কাজ। ছোট পরিসরে কাজ শুরু হলেও আস্তে আস্তে তা বড় হতে থাকে। এভাবে হতে হতে তিনশোর অধিক দোকান নিয়ে গড়ে উঠে শুঁটকি পল্লী। আবার কেউ কেউ একে শুঁটকির রাজ্য বা শুঁটকি বন্দর হিসেবেও চিনতো। সময়ের পরিক্রমায় সে বৌদ্ধরা আর নেই। তারা না থাকলেও, ব্যবসাটা চলছে। বর্তমানে দেশের বৃহত্তম শুঁটকির বাজার আসাদগঞ্জ। শুঁটকি ক্রয়-বিক্রয়ের লক্ষ্যে প্রতিদিন এই বাজারে আনাগোনা হয় হাজারও মানুষের।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে লইট্ট্যা শুঁটকি
'মাছে-ভাতে বাঙ্গালি'র খাদ্য তালিকায় মাছ না থাকাটাই যেন অস্বাভাবিক। তাই এই দেশের মানুষের খাদ্যতালিকায় তাজা মাছের পাশাপাশি শুঁটকি স্থান করে নিয়েছে পাকাপোক্তভাবে। শুঁটকি ভর্তা, শুঁটকি ভুনা, বেগুন দিয়ে শুঁটকি, কচুমুখী দিয়ে শুঁটকি- এসব যেন খাবারে যোগ করে অন্যরকম মাত্রা। দিন দিন বেড়েই চলেছে শুঁটকির চাহিদা। এই তালিকায় সবার শীর্ষে আছে লইট্ট্যা শুঁটকি। দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় এই শুঁটকির আবেদন যেন শেষ হবার নয়।
শুঁটকি বিক্রেতা কায়সার বলেন, "এখানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় লইট্যা শুঁটকি। বিভিন্ন ধরনের লইট্যা শুঁটকি আছে আমাদের এখানে। দেশের বাইরে বিদেশ থেকেও লইট্যা শুঁটকি আসে। এই শুঁটকির দাম ৪০০-১২০০ পর্যন্ত হয় এখন।"
ক্রেতা হামিদুল হকের কাছে লইট্যার জনপ্রিয়তা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এই মাছে কাঁটা কম, আর স্বাদ অনেক বেশি। দেখবেন কাঁটাছাড়া মাছ খেতেও শান্তি লাগে। যাদের দাঁতের সমস্যা, শক্ত বা কাঁটাযুক্ত জিনিস খেতে পারে না তারাও এই লইট্ট্যা খেতে পারে।
লইট্ট্যা শুঁটকির নিয়মিত ক্রেতা রোকসানা আক্তার বলেন, "এই মাছ যেমন খেতে মজা, কাঁটা কম, তেমনি এই মাছ কাটাও সহজ। এমনকি রান্নার সময়ও দ্রুত সিদ্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে লইট্যা মাছ এইজন্য বেশি কিনি।"
পাওয়া যায় ৮০-রও বেশি ধরনেরও শুঁটকি
শত বছর ধরে চলমান এই বাজারে সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে শুঁটকির ধরনও। আগে ২০-৩০ ধরনের শুঁটকির উৎপাদন হতো, সেখানে বর্তমানে পাওয়া যায় ৮০-রও বেশি ধরনের শুঁটকি। প্রতিটি শুঁটকির রঙ, আকার-আকৃতিও আলাদা হয়ে থাকে। সমুদ্রে খাওয়ার উপযুক্ত যত মাছ আছে, প্রায় সব মাছের শুঁটকি এই বাজারে পাওয়া যায়। তাই অনেক বিক্রেতার মতে হিসেব করতে গেলে ১২০ এর বেশি ধরনের শুঁটকি পাওয়া যাবে এই বাজারে।
লইট্ট্যা, ছুরি, চিংড়ি, ফাইস্যা, ফাত্রা, চ্যাপা, কাচকি, মইল্যা, কোরাল, চান্দা, রুপচাঁদা, লাক্ষা ইত্যাদি হলো শুঁটকির কিছু জনপ্রিয় ধরন। খাবারকে মুখরোচক বানাতে শুঁটকির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় খাবারের হোটেলগুলোতে কয়েক পদের শুঁটকি ভর্তার আয়োজন থাকা যেন বাধ্যতামূলক। কারণ যারা খেতে আসেন তাদের বেশিরভাগের চাহিদায় থাকে শুঁটকি ভর্তার বিভিন্ন পদ।
আকার ভেদে শুঁটকির দামও হয়ে থাকে ভিন্ন। একই মাছ আকারে বড় হলে দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ। যেমন, রুপচাঁদা মাছ আকারে বড় হলে দাম শুরু হয় ৪০০০ থেকে। যদি আকারে ছোট হয় সে দাম দ্বিগুণ কমে গিয়ে দাঁড়ায় দুই হাজারে।
আসাদগঞ্জের এই বাজারে লইট্যা শুঁটকির দাম ৪০০-১২০০, ছুরি শুঁটকির দাম ২০০-২০০০, কাচকি শুঁটকি ৪০০-৫০০, মইল্যা শুঁটকি ৫০০-৬০০, ফাইস্যা শুঁটকি ৬০০-৭০০, রুপচাঁদা শুঁটকি ২০০০-৪০০০ এবং লাক্ষা ৫০০০ থেকে শুরু করে ১০০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সবচেয়ে দামী শুঁটকি 'লাক্ষা'
শুঁটকির এই বাজারে সবচেয়ে কম দামের শুঁটকি হচ্ছে মিশালী শুঁটকি। মিশালী শুঁটকি হলো অনেক প্রজাতির ছোট ছোট মাছ একসাথে শুকানো অবস্থায় থাকা। সাধারণত এইসব মাছ অনেকেই তাজা অবস্থায় সেভাবে খেতে চায় না। তখন জেলেরা সেগুলো শুকিয়ে ফেলে। এতে তাজা মাছের তুলনায় ভালো দাম পাওয়া যায়।
তবে সবচেয়ে দামী শুঁটকি হলো লাক্ষা। এই শুঁটকির দাম শুরু হয় ৫০০০ থেকে। এই শুঁটকির স্বাদ অনন্য হওয়ায় অনেকেই একে তুলনা করেন গরুর মাংসের সাথে! আসাদগঞ্জের লাক্ষা শুটকির ক্রেতা রেজাউল বলেন, "এই শুঁটকির স্বাদ অন্য সব শুঁটকির স্বাদকে হার মানাতে পারবে অনায়াসে। যারা লাক্ষা খায়নি তারা আসল শুঁটকির স্বাদ কী বুঝতেই পারবে না। তবে দাম বেশি হওয়ার অনেকে চাইলেও কিনতে পারেন না। আমিও আধা কেজির মতই কিনি। কিন্তু তাতেও ২-৩ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে যায়।"
রেজাউলের মতো অনেকেই লাক্ষা শুঁটকি খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও টাকার সমীকরণ মেলাতে না পেরে আর খাওয়া হয়ে উঠে না। এই শুটকির দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, "এই মাছ অন্যান্য মাছের তুলনায় এত বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় না। তার উপর অনেক বড় একটা মাছকে শুকালে পরিমাণে অনেক কম হয়ে যায়। শুকানোর প্রক্রিয়াও বেশ কঠিন। মাছের শরীরে প্রচুর পরিমাণে মাংস থাকার কারণে ঠিকঠাক শুকাতে দীর্ঘদিন সময় লাগে।"
দাম বাড়লেও কমেনি চাহিদা
৪৫ জন আড়তদার এবং ২৮০টি খুচরা দোকান নিয়ে আসাদগঞ্জের এই শুঁটকি বাজার। সর্বাধিক কম মূল্যে শুঁটকি পাওয়া যায় বলে এই বাজার থেকে নানা প্রান্তের মানুষ পাইকারি হিসেবে কিনে নিয়ে যান শুঁটকি। কিন্তু করোনার ভয়াবহ প্রভাব এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শুঁটকির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একবছর আগে যে লইট্ট্যার বাজার দর ছিল ৪০০ টাকা, সেটির দাম এখন ৮০০ টাকা। তাছাড়া এই মূল্য বৃদ্ধির আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো শুঁটকির উৎপাদন কমে যাওয়া।
২০ বছর ধরে শুঁটকি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত জাহাঙ্গীর বলেন, "মাছের দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো আমাদের এই ব্যবসার উপর করের পরিমাণও বৃদ্ধি করেছে সরকার। আগে এত কর দিতে হয়নি আমাদের। ফলে ব্যবসায়ীরা শুঁটকির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। এক বছরে কেজি প্রতি মাছের দাম ২০০-১৫০ করে বেড়েছে। তাছাড়া যে মাছ আগে ৫০০ ছিল সেটা এখন ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি করি আমরা।"
বছরে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি, সাধারণত এই ২-৩ মাসই শুঁটকি আসে বাজারে। শীতকাল ছাড়া বাকি ৯ মাস এত বেশি শুঁটকি থাকেনা। ফলে সেভাবে ব্যবসাও হয়ে ওঠে না। কিন্তু মানুষের চাহিদার যোগান দিতে শুঁটকির সিজনে অনেক মাছ মজুদ করে রাখা হয়। এর ফলে পরিমাণে কম হলেও সারাবছরই শুঁটকি পাওয়া যায়।
সপ্তাহে শনিবার এবং মঙ্গলবার হলো বাজারবার। এই দুইদিন বাজারবারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায় শুঁটকি কেনাবেচার উদ্দেশ্যে। এই বাজার থেকে মাছ কিনে কেজিতে ২০-৩০ টাকা লাভে অন্যদের কাছের বিক্রি করে অনেক খুচরা বিক্রেতা। শুঁটকি বিক্রি করে মাসে প্রত্যেক ব্যবসায়ী আয় করেন লাখ টাকা। প্রতিদিন ৬-৭ হাজার টাকার কেনাবেচা চলতেই থাকে। তবে বাজারবারে বিক্রির পরিমাণ এসে দাঁড়ায় লাখ টাকায়।
বর্তমানে শুঁটকির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে আসাদগঞ্জ শুঁটকি ব্যবসায়ী দোকান কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, "দাম বাড়ার কারণ হলো শুঁটকি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক আগের তুলনায় বেড়ে ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সাগরে সে পরিমাণ মাছও আসলে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে যদি ৭ কেজি মাছ শুকানো হয় তবে তা কমে গিয়ে ১-২ কেজিতে চলে আসে। এইজন্য বেশি লাভের আশায় অনেকেই মাছ কাঁচা বিক্রি করে দেয়। যার ফলে শুঁটকি উৎপাদন কমে গিয়েছে।"
তিনি মনে করেন আগের তুলনায় দাম বাড়লেও মানুষ শুঁটকি কেনা কমাচ্ছে না যেটা ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো দিক। তারা হয়তো অল্প পরিমাণে কিনছে, কিন্তু কেনা অব্যাহত আছে। এমনকি অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী যোগান দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না বলেও জানান তিনি।
আমদানী-রপ্তানিও হয় শুঁটকি
বাংলাদেশের উৎপাদিত সামুদ্রিক শুঁটকি সবচেয়ে বেশি আসে কক্সবাজার থেকে। তাই কক্সবাজারের নাজিরাটেক এলাকাকে দেশের শুঁটকি উৎপাদনের বৃহত্তম কেন্দ্রস্থল বলেও আখ্যায়িত করা হয়। আসাদগঞ্জ শুঁটকি বাজারেও কক্সবাজার থেকেই আসে সবচেয়ে বেশি শুঁটকি। তাছাড়া কুতুবদিয়া, মহেশখালী, বাঁশখালী, টেকনাফ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, দুবলার চর ইত্যাদি জায়গা থেকেও প্রচুর পরিমাণে শুঁটকি আসে এই বাজারে।
আবার এই বাজার থেকে পাইকারি হিসেবে শুঁটকি কিনে নিয়ে যায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট রংপুর, কুমিল্লা এবং নোয়াখালীর ব্যবসায়ীরা।
চট্টগামের আসাদগঞ্জের এই শুঁটকি রপ্তানি হয় বাইরের দেশেও। এখান থেকে শুঁটকি দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, পাকিস্তান, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা হয়।
শুধু রপ্তানিই নয়, বিভিন্ন দেশ, যেমন; ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড থেকেও শুঁটকি আসে এই বাজারে। এর মধ্যে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে শুঁটকি আমদানি হয়ে থাকে। ভারত থেকে আমদানীকৃত মাছের মধ্যে আছে লইট্ট্যা, কাচকি, ফাইস্যা, ফাত্রা এবং মইল্যা। এগুলোর দাম ৩০০-৬০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে আসে লইট্যা, ফাত্রা এবং মইল্যা।
কেমিক্যালের ব্যবহার কি আছে?
মুখরোচক এবং বৈচিত্র্যময় এই খাবারের প্রতি মানুষের অনেক আগ্রহ থাকলেও অনেকেই চিন্তায় থাকেন খাবারটির স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে। এমনই একজন শামীম আহমেদ। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তির কাছে শুঁটকিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম। অত্যন্ত প্রিয় এই খাদ্যটিকে তিনি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, "শুঁটকি যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয় তবে তা একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যে পরিণত হবে। কিন্তু পোকা না আসার জন্য যে বিষ (কেমিক্যাল) এতে প্রয়োগ করা হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই প্রিয় এই খাদ্যকে এখন পুরোপুরি এড়িয়ে চলি।"
শামীম আহমেদের মতোই অনেকে চিন্তিত থাকলেও ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসায় নিয়োজিত শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. মহসিন কেমিক্যাল ব্যবহার নিয়ে শোনালেন আশার বাণী। তিনি বলেন, "বাংলাদেশি শুঁটকিগুলো বেশি পরিমাণে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এখন আর মেডিসিন ব্যবহার হয় না। ১৫-২০ বছর আগে কেমিক্যালের ব্যবহার ছিল। এখন যেহেতু আর হয় না তাই এই ব্যাপারে মানুষ নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে।"
শুঁটকি দোকান কর্মচারি সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, "বর্তমানে মেডিসিন ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আগে মেডিসিন ব্যবহার করতো কারণ সঠিকভাবে সংরক্ষণের কোনো পথ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে শুঁটকি কোল্ড স্টোরেজে রাখার ফলে নষ্ট হয় না। অনেকে সংরক্ষণে বেশি করে লবণ ব্যবহার করছে। অন্তত তাতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আর থাকে না।"
ভোজন রসিকদের জন্য শুঁটকিতে কোনোরকম কেমিক্যাল ব্যবহার না হওয়ার বিষয়টি যেমন সুখকর তেমনি অত্যন্ত স্বস্তিদায়কও। আর তাছাড়া, চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে তৈরি করা বালাচাউয়ের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনদিন। কিন্তু বর্তমানে অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির ফলে রাজকীয় খাবারে পরিণত হচ্ছে এটি। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে এ খাবার পরিণত হচ্ছে বিলাসবহুল পণ্যে।