নীতা আম্বানি বনাম প্রীতি আদানি: ভারতের শীর্ষ দুই বিলিয়নিয়ারের স্ত্রীদের মধ্যে কে এগিয়ে!
তাদের স্বামীরা দেশের অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু। সারাক্ষণই গণমাধ্যমে উঠে আসছে তাদের জীবনের খুঁটিনাটি থেকে বিস্তারিত সব সংবাদ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয়ের পাশাপাশি মুকেশ আম্বানি (৬৫) এবং গৌতম আদানি (৬০) একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে! আর সে কারণেই যেকোনো একজনের উত্থান-পতনের খবরে অপরজনকে টেনে না আনলেই নয়! কারণ তারা দুজনই ভারতের সবচেয়ে ধনী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর দুই ব্যক্তি।
ব্লুমবার্গ সূত্র অনুযায়ী, ১৩৩ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে গৌতম আদানি এই মুহূর্তে ভারতের শীর্ষ ধনী; ৮৩ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে তার ঠিক পরেই রয়েছেন আরেক বিলিয়নিয়ার মুকেশ আম্বানি। ব্যবসার জগতে এই দুজন যখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তখন তাদেরকে সমর্থন দিতে ও সাহস যোগাতে পাশে আছেন তাদের স্ত্রীরা। বলা হচ্ছে মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানি (৫৮) এবং গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির (৫৭) কথা। স্বামীরা বিলিয়নিয়ার তকমা্ পেয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই তাদের সঙ্গীনি হিসেবে আছেন এই দুই নারী। প্রশ্ন হচ্ছে, স্বামীদের মতো নীতা-প্রীতিও কি বাস্তব জীবনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন? বিলিয়নিয়ারদের স্ত্রী হিসেবে তাদের জীবনযাপনের ধরন কেমন? তাদের কর্মজীবনই বা কেমন? আর এই দুজনের মধ্যে কোনো মিল আছে কী? এই সব প্রশ্নের উত্তরই পাঠকদের জানাবো আজ...
পারিবারিক সূত্রে পরিচয়
নীতা আম্বানি ও প্রীতি আদানি, দুজনেরই পরিবারের মাধ্যমে তাদের স্বামীদের সাথে পরিচয় ঘটে। মুকেশ আম্বানির বাবা ধীরুভাই আম্বানি নীতাকে তার ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ধীরুভাই কোনো একটি অনুষ্ঠানে নীতাকে নাচতে দেখেন এবং সে মুহূর্তেই তাকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করেন। এরপর তিনি নীতাকে ডেকে কথা বলেন।
আরও জানা যায়, মুকেশ আম্বানি তার জন্য পাত্রী খোঁজার দায়িত্ব বাবার ওপরে ছেড়ে দিলেও শেষ সিদ্ধান্ত তার নিজেরই হবে বলে জানিয়েছিলেন। এরপরে নীতা ও মুকেশ দেখা করেন এবং মুকেশও নীতাকে এতটাই পছন্দ করে ফেলেন যে একদিন গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ নীতাকে প্রস্তাব দিয়ে বসেন!
এদিকে ইওর স্টোরি'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রীতি আদানি জানান, তার বাড়ির বড়রাই গৌতম আদানির সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছিল। সেসময় তিনি ডেনটিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করতেন এবং বিয়ের পর তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। প্রীতি জানান, গৌতম আদানিই তাকে পড়াশোনা শেষ করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে বারবার জোর উৎসাহ দিয়েছেন।
অমিতব্যয়ী নীতা আম্বানি, সাদাসিধে প্রীতি!
মুকেশ আম্বানি ভারতের শীর্ষ ধনীর তালিকায় উঠে আসার পর নীতা আম্বানির সাজপোশাক ও জীবনযাপনেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে, বিয়ে কিংবা বলিউডি তারকাদের সাথে সাক্ষাতেও নীতাকে দেখা গেছে চোখ ধাঁধানো পোশাক-অলঙ্কারে। এখনো তাকে গ্ল্যামার কুইন বলা হয় এবং বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকে ধরা দেন নীতা। জীবনের সব আনন্দ উপভোগে বা বিলাসিতায় কোনো কার্পণ্য রাখেন না নীতা।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নীতা আম্বানি কখনো একজোড়া জুতা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করেন না। মার্কেটিং মাইন্ড ইন্ডিয়া এও জানিয়েছে যে, নীতা আম্বানির জুতার সংগ্রহে জিমি চু, মার্লিন ও গার্সিয়ার মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের প্রচুর জুতা রয়েছে। একসময় ৫০,০০০ ডলারের একটি শাড়ি পরে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন নীতা। জানা গেছে, নীতার সেই শাড়িটি রুবি, পান্না ও মুক্তাখচিত ছিল।
বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য নীতা আম্বানি খবরের শিরোনাম হলেও, প্রীতি আদানি সাদাসিধেভাবে থাকতেই পছন্দ করেন। গণমাধ্যমের স্পটলাইট এড়িয়ে চলা এই নারী ছিমছাম শাড়ি ও হালকা গয়নায় নিজেকে সাজাতে পছন্দ করেন। টাইমস নাও নিউজ সূত্র অনুযায়ী, প্রীতি একজন ভাল ডেন্টিস্ট ছিলেন, কিন্তু গৌতম আদানিকে বিয়ের পর তিনি আদানি ফাউন্ডেশন-এর কাজে মনোনিবেশ করেন।
ইওর স্টোরিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রীতি এও জানান, তিনি এই ফাউন্ডেশনে কাজ করাকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন যাতে করে তিনি হাজার হাজার মানুষকে সাহায্য করতে পারেন।
দুজনেই মানবসেবী ও দাতা হিসেবে পরিচিত
আম্বানি-আদানিদের টাকার যেমন অভাব নেই, তেমনই তারা দানও করেন প্রচুর। নীতা আম্বানি ভারতে নারী শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং ধীরুভাই আম্বানি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারপারসন। ২০১৯ সালে ফেমিনা'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নীতা বলেন, তিনি নিজেকে অসংখ্য শিশুর মা মনে করেন।
অন্যদিকে, প্রীতি আদানি নিজেদের পারিবারিক সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত। এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, কমিউনিটি হেলথ এবং টেকসই জীবনমান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পেছনে কাজ করে বলে এটির ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়।
২০০১ সালে ভুজ ভূমিকম্পে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর পর আদানি মান্দ্রাতে আদানো ডিএভি পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যেন ঐ দুর্যোগের পরেও শিশুদের পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়।
তারা নিজ নিজ পরিবারের শক্তিদাতা
নীতা আম্বানি ও প্রীতি আদানি, দুজনেই নিজ নিজ পরিবারের সুরক্ষা ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের সন্তানদের মুখে শোনা গেছে মাকে নিয়ে স্তুতি। ২০১৬ সালে যখন নীতা আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি তার ১০৮ কেজি ওজন কমিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেন, তখন নীতা নিজেও ছেলের সাথে একই ডায়েট অনুসরণ করে তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে নীতা বলেছিলেন, "একজন শিশু তার মাকেই অনুসরণ করে, তাই আমার ছেলেকে ডায়েটে রেখে আমি নিজে খেতে থাকবো তা হয় না। তাই আমিও অনন্তর সাথে ডায়েট করেছি। সে যা যা খেয়েছে, আমিও তাই খেয়েছি। যখন সে ব্যয়াম করেছে, আমিও করেছি। যখন সে হাঁটতে গিয়েছে, আমিও তার সাথে গিয়েছি। তার মা হিসেবে সেসময় আমিও ওজন কমিয়েছি। অনন্তই ছিল তখন আমার মূল অনুপ্রেরণা এবং এখনো আছে। আমরা এখনো বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। অনেকের সন্তানেরই এই সমস্যাটা আছে, কিন্তু মায়েরা তা বলতে খুবই লজ্জা পান।"
মেয়ে ইশা আম্বানির সাথে নিজের সম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন নীতা। ফেমিনা'কে তিনি বলেন, ইশার বিয়ের পর সে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, তাই তিনি মেয়েকে ভীষণ মিস করেন। মেয়ের সাথে সাথে তৈরি হওয়া বা দুজনে মিলে রাতের খাবার খাওয়া, এই ছোট ছোট ব্যাপারে তিনি মেয়েকে মিস করেন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইশা জানিয়েছিলেন কিভাবে তার মা নীতা সবসময় ছেলেমেয়েদের পাশে থেকেছেন, কিভাবে তারা ভালো মানুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠে সেই ভারসাম্য বজায় রেখেছেন।
এদিকে, গৌতম আদানির বড় ছেলে করণও বরাবরই নিজের মায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ২০১৮ সালে মা দিবসে এক টুইটার পোস্টে করণ লিখেছিলেন, তার মা তাকে প্রতিনিয়তই অনুপ্রেরণা জোগান। আরেকটি পোস্টে তিনি বলেছিলেন, তার মা প্রীতি আদানি একজন চমৎকার ব্যক্তিত্ব এবং তার জীবনের পথপ্রদর্শক।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট