গ্রিন করিডোর, ফোয়ারা, পর্দা... প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে যেসব কৌশল নিয়েছে এ শহরগুলো!

নজিরবিহীন গরমে পুড়ছে পশ্চিম ইউরোপ। কয়েক সপ্তাহের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ফ্রান্সের মতো দেশে চলছে তাপপ্রবাহের তৃতীয় তরঙ্গ। দেশটিতে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) উপরে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মধ্য-আটলান্টিক ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলসহ যুক্তরাষ্ট্রের আশি ভাগ নাগরিক আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি তাপমাত্রা অনুভব করবে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ মিলিয়ন মানুষ গত দুই সপ্তাহ যাবত তাপপ্রবাহ-সতর্কতার মধ্যে রয়েছেন।
এর মানে বুঝতে কষ্ট হয় না যে, এসব দেশের শহুরে নাগরিকরা একটু শীতলতার ছোঁয়া পেতে মরিয়া হয়ে আছেন! জলবায়ু সংকটের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন ঘন প্রচন্ড গরম দেখা দিচ্ছে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। কিন্তু সঠিক ও সৃজনশীল পরিকল্পনা-নকশাবিহীন শহরে জনজীবন হয়ে উঠতে পারে আরো তপ্ত!
অনেকেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে সহজ যে সমাধানের কথা ভাবছেন তা হলো- এয়ার কন্ডিশনার (এসি)। কিন্তু এসি শুধুমাত্রই ঘরের ভেতরটাই গরম রাখে, বাইরে নয়। বরং এসির কারণে বাইরে আরো বাড়তি তাপমাত্রা যুক্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসির ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু সংকটকে তীব্রতর করে। আবার গরমের দিনে গণপরিবহনে যাতায়াত করা কষ্টকর বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে আসা মানে লম্বা ট্রাফিক জ্যাম এবং একই সাথে কার্বন নির্গমন ও পরিবেশকে উষ্ণতর করা। শহরে গাছপালা কম থাকা মানে ছায়া কম এবং ভবন নির্মাণে কালো পদার্থ ব্যবহার করা মানে ঘর আরো গরম হয়ে ওঠা, অর্থাৎ আরো বেশি এসির প্রয়োজনীয়তা!
এভাবেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই নির্মম চক্রটি চলতে থাকে। কিন্তু এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ও উদ্ভাবন করেছে অনেকে। আজ জানাবো বিশ্বের তেমনই ৮টি শহর ও তীব্র গরম থেকে বাঁচতে তাদের সৃজনশীল কৌশলের কথা!
মেডেলিন, কলম্বিয়া: শুধু পার্কে নয়, রাস্তাজুড়েও থাকবে গাছ
প্রচন্ড গরমে অনেকেই হয়তো ঘরে এসির মধ্যেই থাকতে পছন্দ করেন, কিন্তু সবার তো সেই সৌভাগ্য হয় না! তাহলে প্রতিদিন যারা শহরের পথে বের হবেন, তারা শীতল পরিবেশ পাবেন কোথায়? এর জন্য অবশ্যই পার্ক একটি ভালো জায়গা। তাই কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মেডেলিন তাদের 'গ্রিন করিডোর' প্রকল্পের অধীনে পুরো শহরে গাছের শীতল ছায়ার ব্যবস্থা করেছে।
ওয়েব-নেটওয়ার্কের মতো দেখতে এই প্রকল্পের অধীনে শহরের ১৮টি রাস্তা ও ১২টি জলপথকে গ্রিন সাইক্লিং লেন ও ওয়াকওয়েতে রূপ দেওয়া হয়েছে। আর এই সবগুলো পথকে যুক্ত করা হয়েছে শহরের বিভিন্ন পার্কের সাথে। অর্থাৎ, চাইলেই কেউ এই ওয়াকওয়ে ধরে হেঁটে পার্কে গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারেন।

জানা গেছে, এ উদ্যোগের ফলে মেডেলিন শহরের এসব এলাকার তাপমাত্রা প্রায় ৫.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট নিচে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, ২০৩০ সালের আগেই এখানকার তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমে আসবে। আদ্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন সেন্টারের পরিচালক ক্যাথি বাউম্যান ম্যাকলিওড বলেন, "একটি শহরের তাপমাত্রা কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শহুরে বনায়ন। মেডেলিন নগরী তাদের গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা্র হারও কমিয়ে ফেলেছে যা একটি দুর্দান্ত ব্যাপার!"
২০১৯ সালের মধ্যে মেডেলিন শহরে আট হাজারেরও বেশি বৃক্ষরোপণ করা হয়, গুল্ম-ঝোপ জাতীয় গাছ লাগানো হয় ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি। শহরের একটি মেট্রো লাইনের নিচে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেগুলো ব্রিজের ওপর থেকে ফোয়ারার মতো ছড়িয়ে গাছগুলোতে পানি দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
ভিয়েনা: পানির ফোয়ারা
ইউরোপের বহু মানুষের মতো ভিয়েনায়ও অনেকের বাড়িতে এসি নেই, তাই অস্ট্রিয়ার রাজধানীকে শীতল রাখতে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দানিয়ুব নদীতে ডুব দেবার অবকাশ যাদের নেই, তাদের জন্য এই শহরে আছে নানা রকম পানির ফোয়ারা।
পার্কগুলোতে গাছের মধ্যে এমন ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে যে গাছের নিচে দাঁড়ালেই শিশিরের মতো ফোটা পড়বে টুপটাপ! এসব 'কুলিং পার্ক' এ গিয়ে সাধারণ মানুষ চাইলে গোসল করতে পারবে কিংবা এগুলোর আশেপাশে ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে বসে সময় কাটাতে পারবে। সাধারণত গরমে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি কাবু হয়, তাই ভিয়েনায় ফোয়ারাগুলোতে শিশুদের হুটোপুটি খুবই পরিচিত দৃশ্য। আবার রাস্তার ধারে একপাশে হোসপাইপ দিয়ে ছোটখাটো ফোয়ারার ব্যবস্থাও আছে। প্রচন্ড গরমে এসব পাইপের মুখ খুলে দেয় নগর কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও, ভিয়েনার ১.৯ মিলিয়ন বাসিন্দার পানি খাওয়ার জন্য আছে ১১০০র বেশি ফোয়ারা। রাস্তাঘাটে তৃষ্ণার্ত মানুষ যেন যেকোনো সময় পানি খুঁজে পায়, সেজন্যেই এই ব্যবস্থা। পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করারও একটি অন্যতম উপায় এটি।
ম্যাকলিওড এর ভাষ্যে, "ঘরে এসি লাগানো একটা সহজ সমাধান হতে পারে, কিন্তু এটা টেকসই-দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। কারণ বিদ্যুৎ ছাড়া এসি চালানো অসম্ভব এবং এসির ব্যবহারের ফলে বাইরের পরিবেশ আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাই ঠান্ডা বাতাসের জন্য পানির সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যবহার করা এবং পুরনো ভবনগুলোতে জানালা খোলা রাখাই ভালো সমাধান। প্রাকৃতিকভাবে যতটা বাতাস পাওয়া যায় সেটাই গরম কমাতে সহায়ক হবে।"
আবু ধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত: শীতল রাখতে প্রাচীন প্রযুক্তির আধুনিকায়ন
মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম অঞ্চলগুলোর একটি। আবু ধাবিতে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত উঠতে পারে। তাই শহরটিতে এয়ার কন্ডিশনিং প্রায় অত্যাবশ্যকীয় বস্তু এবং মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরেই থাকে।

কিন্তু আবু ধাবির সব মানুষের বাড়িতেই যে এসি আছে, তা নয়। তাই শহরকে ঠান্ডা রাখতে তারা প্রাচীন আরবীয় একটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে এবং তাতে যোগ করেছে আধুনিক টুইস্ট! 'মাশরাবিয়া' বলতে ঝাঁঝরির মতো দেখতে পর্দাকে বোঝায় যা প্রায়ই ইসলামী স্থাপত্যে দেখা যায়। ব্যালকনির বাইরে এই পর্দা ব্যবহার করে বাইরের সূর্যালোক থেকে ঘরকে ঠান্ডা রাখা হতো। এগুলো এমনভাবে তৈরি করা হতো যাতে ঘরের ভেতর বাতাস ঢোকে, কিন্তু সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা দেয়। এই পর্দা ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি সূর্যালোক যেন ভবনের গায়ে না লাগে।
'মাশরাবিয়া' পদ্ধতির আধুনিকায়ন করে একটি 'সোলার শেডিং সিস্টেম' চালু করেছে আবু ধাবির আল-বাহার টাওয়ার। ২৫তলা এই ভবনের বাইরের দিক প্রায় পুরোটাই ঢেকে দেওয়া হয়েছে এমন একটি পর্দা দিয়ে যা ছাতার মতো খোলা ও ভাঁজ করা যায়। ভবনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি হেক্সাগনাল শেড, যেগুলোর মধ্যে থাকা বিল্ট-ইন সিস্টেম সূর্যের আলোতে সাড়া দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তখন পর্দা খুলে যায়। আধুনিক এই পর্দা না থাকলে আবু ধাবির বহুতল ভবনটির বাইরের অংশে তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও হতে পারতো! কিন্তু এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে ভবনটিতে এখন এসির প্রয়োজনীয়তা অর্ধেক কমে গেছে। ব্যাপারটা দারুণ না?
মায়ামি: সবচেয়ে উষ্ণ জায়গা চিহ্নিত করা
বিশ্বের অনেক শহরেই বাসে ওঠার জন্য লাইন ধরা খুবই পরিচিত দৃশ্য। আর প্রচন্ড গরমের মধ্যে যদি সেই লাইনে দাঁড়াতে হয়, তাহলে তা এক প্রকার শাস্তিস্বরূপ হয়ে ওঠে! কিন্তু যাত্রী ছাউনি যদি এমনভাবে তৈরি হয় যা প্রাকৃতিকভাবে ছায়া দেবে, তাহলে কেমন হয়?

মায়ামির ডেইড কাউন্টি শহরের কোন কোন স্থানে গরম সবচেয়ে বেশি পড়ে তা আগে চিহ্নিত করেছে। 'নিট স্ট্রিট মায়ামি' নামের একটি কাউন্টি কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা বাস স্টপেজগুলোকে তাপপ্রবাহের সময় সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারপর তারা ১০টি স্টপেজের কাছে গাছ লাগিয়েছে। কোন গাছ সবচেয়ে ভালো কাজ করে এবং কোথায় লাগাতে হবে তা নিয়ে নির্দেশিকা তৈরি করেছে তারা, যাতে অন্যরাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে।
ডেইড কাউন্টির এই কৌশল কাজেও দিয়েছে বেশ! বর্তমানে তাদের ৭১টি 'গ্রিন বাস স্টপেজ' রয়েছে এবং এসব এলাকার মানুষেরা নিজেরা সরকারের কাছে আবেদন করে গাছ লাগানোর জন্য সহায়তা নিয়েছেন। এ উদ্যোগকে আরো মজাদার করে তুলতে উদ্যোক্তারা কবিতা লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছেন এবং এগুলোর মধ্য থেকে সেরা দশটি কবিতা নির্বাচন করে বাস স্টপেজের সাইডওয়াকে লাগিয়ে দিয়েছেন।
এথেন্স: নিজেদের যা আছে তা নিয়েই কাজ করো
বর্তমান বিশ্বে খুব কম শহরে প্রাচীন জলাধারের অস্তিত্ব থাকলেও, সৌভাগ্যবশত প্রাচীন গ্রিক রাজধানীতে তা আছে। এথেন্সের হাদ্রিয়ান জলাধার একসময় ছিল নগরীর পানির মূল উৎস। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে পাইপের মাধ্যমে তারা পানির মূল উৎস থেকে শহরে পানি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছিল।

যদিও বর্তমানে এই জলাধারের পানি পানের উপযুক্ত নয়, কিন্তু এখানে থেকে বছরে যে ৮০০,০০০ কিউবিক মিটার পানি সমুদ্রে বর্জ্য হিসেবে চলে যাচ্ছে, তা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এথেন্স। এর একটি হবে তাদের নতুন গ্রিনবেল্টে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং ২০ কিলোমিটারের কাঠামোর পাশ দিয়ে পানি বয়ে চলার ব্যবস্থা, যাতে করে এর আশেপাশের এলাকা শীতল থাকে। এছাড়াও, ভিয়েনার মতো করে পানি থেকে শিশির তৈরির ব্যবস্থাও করা হবে।
এথেন্সকে দেখে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে যে শহরের অকেজো-পুরনো জলাধারকেও নতুনভাবে ব্যবহার করা যায়।
লস অ্যাঞ্জেলেস: সাদা রঙের ব্যবহার
অনেক শহরেই ভবনের ছাদ সাদা রঙ করা হয় যাতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলে তাপ কম লাগে। তাই লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের সব রাস্তা সাদা রঙে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তার কালো পিচে সুর্যের আলো পড়লে তা প্রচন্ড গরম হয়ে ওঠে এবং পিচ সূর্যের তাপ শুষে নিয়ে তা আবার বাতাসে নির্গত করে। ফলে পরিবেশ আবারও গরম হয়ে ওঠে। তাই লস অ্যাঞ্জেলেসের এই উদ্যোগ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তবে এর মধ্যে কিছু সুবিধাও রয়েছে। গবেষক আরিয়ান মিডেল ও ভি কেলি টার্নার বলছেন, এ পদ্ধতিতে রাস্তার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির মতো কমে যায়, আবার একই গবেষকেরা বলছেন বাড়তি তাপমাত্রা পরিবেশে ফিরে আসে! কিন্তু সুবিধাটা হচ্ছে, আপনি যদি এই রাস্তার কয়েক ব্লক দূরে থাকেন তাহলে গরম কিছুটা কম লাগবে। কিন্তু যদি আপনি নিজেই রাস্তায় থাকেন, তাহলে গরম আরো বেশি লাগবে।
তবে নানা বিতর্ক সত্ত্বেও লস অ্যাঞ্জেলেস তাদের এই প্রকল্প চালিয়ে নিচ্ছে ফলাফল বোঝার জন্য। বর্তমানে তারা 'কুলসিল' নামের ধূসররঙা এক প্রকার রঙ ব্যবহার করছে। তবে অন্য ধরনের রঙ ব্যবহার করলে ফলাফল ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
অন্যদিকে, ছাদে রঙ করায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাপমাত্রা এবং ভবনের ছাদ তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণের উপর ভিত্তি করে ফলাফলে পার্থক্য হয়। ভারতের আহমেদাবাদের মতো উষ্ণ স্থানে দেখা গেছে, ছাদের তাপমাত্রা কমাতে পারলে ঘরের তাপমাত্রা ৩-৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমে যায়।
প্যারিস: সবকিছুই থাকবে গোছানো
গ্রীষ্মকালে প্যারিসে থাকে তীব্র গরম। এবারের গ্রীষ্মে সেই তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ছাড়িয়েছে। কিন্তু বহুতল ভবন, লাইমস্টোন মন্যুমেন্ট এবং পিচঢালা রাস্তার কারণে তাপমাত্রা আরো বেশি অনুভূত হয়।
তাছাড়া, শহরে হিট আইল্যান্ড ইফেক্টের কারণে গরমের দিনে প্যারিসের পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে শহরের কেন্দ্রীয় স্থানগুলোতে ১৮ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা থাকে।

কিন্তু প্রচন্ড দাবদাহ থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে প্যারিসের মেয়র অ্যান হিডালগো সবচেয়ে কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্যারিসে তৈরি করা হয়েছে 'কুল আইল্যান্ড'। প্যারিসবাসীরা 'এক্সট্রিমা' নামক একটি অ্যাপ ব্যবহার করে শহরজুড়ে ৮০০টির বেশি শীতল জায়গা খুঁজে পাবেন- এর মধ্যে থাকছে পার্ক, ফোয়ারা, ঝরনা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘর এবং প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা থাকে এবং ওয়াকওয়ে দিয়েই এসব জায়গায় যাওয়া যাবে। তাই এসব 'কুল আইল্যান্ড' শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বড়জোর সাত মিনিট হাঁটাপথের দূরত্বে।
ভিয়েনার মতো প্যারিসেও 'মিস্ট মেশিন' বা শিশির তৈরির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও আছে ডজনখানেক 'ফোয়ারা-ঝরনা'। সেই সাথে সাধারণ ঝরনা বা অগভীর পুল তো রয়েছেই।
এখানেই শেষ নয়, প্যারিসের নগর কর্তৃপক্ষের কাছে আছে সবচেয়ে দুর্বল যারা, তাদের তালিকা, যাতে করে কর্তৃপক্ষ থেকে ফোন দিয়ে তাদের খোঁজখবর নেওয়া যায়। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর শ্রেণীকক্ষে রয়েছে এসি এবং পাবলিক পার্ক ও পুলগুলোও অনেক রাত অবধি খোলা থাকে।
সেভিয়া, স্পেন: তাপপ্রবাহের নামকরণ করা
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন- হারিকেন, ভূমিকম্পের যেমন নামকরণ করা হচ্ছে, স্পেনের সেভিয়ায়ও সেই একই কারণে তাপপ্রবাহের নামকরণ করা হচ্ছে- যাতে লোকেরা এ বিষয়ে বেশি মনোযোগী হয়। সেভিয়াই প্রথম শহর হিসেবে তাপপ্রবাহের নামকরণ করেছে। জুলাইয়ে সেভিয়ার তাপপ্রবাহের নাম ছিল 'জোয়ে'।
ম্যাকলিওড বলেন, "তাপপ্রবাহের নামকরণ করা একটি ইতিবাচক ব্যাপার, কারণ আমরা জানি এটা কতটা বিপজ্জনক এবং স্থায়ী। আমাদের জীবনের সঙ্গে এর নাম জড়িয়ে থাকবেই।" কিন্তু সেভিয়ার এই নামকরণের পেছনে রয়েছে অন্য অনেক কারণ। নগর কর্তৃপক্ষ তাপপ্রভাবের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনা করে এগুলো শ্রেণীবদ্ধ করছেন। কিন্তু লোকে যাতে সহজে বুঝতে পারে, তাই বৈজ্ঞানিক নাম এড়িয়ে যাওয়া হবে। তাপপ্রবাহের ফলে মানুষের কী কী ক্ষতি হতে পারে সেই সতর্কতাও যুক্ত করা হবে।

২০১৮ সালে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০টি তাপপ্রবাহের সতর্কতা বার্তার মধ্যে ফিলাডেলফিয়ার সতর্কবার্তা কার্যকরী ছিল শুধু। কারণ সেটা মানুষের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে করা হয়েছিল।
ম্যাকলিওডের ভাষ্যে, "তাপপ্রবাহ ঠেকাতে সরাসরি হস্তক্ষেপের পাশাপাশি, এগুলোর নামকরণ ও শ্রেণীবদ্ধ করা একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। কারণ প্রচন্ড গরম মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে, কারণ মানুষ এ সমস্যার ব্যাপকতা সম্পর্কে সচেতন নয়।"