Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
    • ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
December 05, 2023

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
    • ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, DECEMBER 05, 2023
সিনে ব্যানার, রিকশা পেইন্টার হানিফ পাপ্পু: মন পড়ে থাকে এখনো বিশ ত্রিশ ফিটের সেই ক্যানভাসে!

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
23 July, 2022, 04:10 pm
Last modified: 24 July, 2022, 05:33 pm

Related News

  • ২০২৪-এ দর্শকের তুমুল আগ্রহে রয়েছে যেসব হলিউড সিনেমা
  • আইএমডিবি’র জরিপে এ বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা-সিরিজ যেগুলো
  • কোথায় গেল কাপড়ের ব্যানার?
  • গদার, তারকোভস্কি, তোরনাতোরে যখন ধানমন্ডির আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন
  • জেমস বন্ড নাম চুরি করেছি: ইয়ান ফ্লেমিং 

সিনে ব্যানার, রিকশা পেইন্টার হানিফ পাপ্পু: মন পড়ে থাকে এখনো বিশ ত্রিশ ফিটের সেই ক্যানভাসে!

সিনেমার নায়ক নায়িকাকে নিজ হাতে রাঙ্গানোর সুযোগ! নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু একমনে কাজ করতেন পাপ্পু। এ তো কাজ নয়, ভালোলাগার খেলা! এভাবেই ইচ্ছে আর পরিশ্রম দিয়ে ধীরে ধীরে বনে যান বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য পেশাদার সিনেমার ব্যানার শিল্পী
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
23 July, 2022, 04:10 pm
Last modified: 24 July, 2022, 05:33 pm

পাপ্পুর আঁকা চিত্রকর্ম। ছবি: রাজীব ধর/ টিবিএস

এখন পাপ্পু সারাদিন দোকানেই বসে থাকেন। দোকানের সামনে ছোটখাটো আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছে, প্রতিদিনই আড্ডার আসর বসে এখানে।একেকজন আসে গল্প করে, আবার চলে যায়। মাঝে মাঝে পাপ্পু নিজেও তাদের সঙ্গে গলা মেলান, কখনোবা সিগারেট ফুঁকেন বকশী বাজার লেনের এই দোকানটির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে, কখনোবা ছোটো ছোটো ঘর সাজানোর জিনিসে করেন নকশা। এভাবেই বিশ্রাম আর টুকিটাকি কাজে চলছে তার জীবন।      

অথচ, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৫-৯০ সাল পর্যন্ত হানিফ পাপ্পুর জীবন কেটেছে একপ্রকার না ঘুমিয়ে, না খেয়ে। ঠিকমতো ভাত খাবার সময়টুকুও পেতেন না তিনি। শুক্রবার দিন শুধু একটু বিশ্রাম করতে পারতেন। তাও দু' ঘণ্টা। অথচ, জীবনের সেই সময়টাই ছিল পাপ্পুর জন্য সোনালী সময়। 

দিন- রাত জেগে শুধু সিনেমার ব্যানার বানিয়েছেন। দর্শক এবং প্রযোজকের চাপে কখনো কখনো একেক দিনে ১০টি করেও ব্যানার এঁকেছেন তিনি। এজন্যই খুব গর্বের সঙ্গে পাপ্পু সবাইকে বলেন, 'পুরো জীবনটাই তো আমি দিয়ে দিয়েছি এই সিনেমাতে। এমন কোনো সিনেমা নেই, যার ব্যানার একটাবার হলেও আমরা বানাইনি।'     

একজন অবাঙ্গালী সিনেমা ব্যানার শিল্পী

হানিফ পাপ্পু। ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

হানিফ পাপ্পু কিন্তু একজন অবাঙ্গালী। বাংলা- উর্দু দুটো ভাষাতেই তিনি কথা বলেন। একটু আধটু পারেন মারাঠি ভাষাও। বাংলাদেশে যে কয়জন অবাঙ্গালী সিনেমা ব্যানার শিল্পী আছেন তার মধ্যে হানিফ পাপ্পু অন্যতম। তার বাবার পরিবার থাকতেন ভারতের মুম্বাইতে। বাবা মুম্বাই থেকে ব্যবসা করতে এ দেশে এসেছিলেন। পানের ব্যবসা করতেন তিনি, ছিল কাপড়ের ব্যবসাও। পরে বিয়ে করে এখানেই স্থায়ী হয়ে যান। 

পাপ্পুর জন্ম ১৯৬২ সালে, বড় হয়েছেন ঢাকার নবাবপুরে নানাবাড়িতেই। নানার পরিবার হাজী পরিবার হওয়ায় কঠোর ধর্মীয় শাসনে চলতো সেই বাড়ির সব কাজ। কিন্তু এরমধ্যেও পাপ্পুর মামা লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমার ব্যানার আঁকতেন। আর পাপ্পু স্কুল থেকে ফিরে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে যেতেন মামা মোহাম্মদ রফিকের দোকানে খাবার দিতে।

মামার কাছে গিয়ে সেখানে ক্যানভাসে লাল-হলুদ-সবুজ রঙের মাখামাখি দেখে তারও ইচ্ছে হলো রঙ নিয়ে খেলতে। তার ওপর সিনেমা প্রেম তো ছিলই। তাই সিনেমার সেই ভিলেন, নায়ক, নায়িকাকে যখন লাল নীল রঙ দিয়ে আঁকতে দেখলেন, তার ভেতর শুরু হলো এক মুগ্ধতা। 

সেই মুগ্ধতা থেকে কিশোর বেলাতেই ব্যানার আঁকার কাজে লেগে যান। সিনেমার নায়ক নায়িকাকে নিজ হাতে রাঙ্গানোর সুযোগ! নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু একমনে কাজ করতেন। এ তো কাজ নয়, এ তো ভালোলাগার খেলা! এভাবেই ইচ্ছে আর পরিশ্রম দিয়ে ধীরে ধীরে বনে যান বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য পেশাদার সিনেমার ব্যানার শিল্পী।    

লেখাপড়া হয়নি বেশিদূর 

ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

এই লাইনে ছুটতে গিয়ে লেখাপড়া আর বেশিদূর হয়নি তার। স্বাধীনতার আগে আহমেদ বাওয়ানি একাডেমিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি মিডিয়ামে পড়েছেন। স্বাধীনতার পর বাংলা মিডিয়ামে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। এরপর আর হয়নি। রঙ তুলির ছোঁয়ায় সিনেমা আঁকার নেশা তাকে এতটাই পেয়ে বসলো যে, মন, শক্তি, পরিশ্রম সবকিছুই এখানে দিয়ে গেছেন। 

এরপর ঢুকলেন রূপায়ণ আর্ট পাবলিসিটিতে। সেসময়ের স্বনামধন্য সিনেমা ব্যানার ফার্ম। যার কপিরাইট নিয়ে বর্তমানে কাজ করে চলেছে রুপায়ন ট্রেড সেন্টার ফার্মটি।  

যদিও বাবা চাইতেন ছেলে তার ব্যবসার চাবিই ধরুক, কিন্তু তাই বলে নিরুৎসাহিত করেননি কখনো। তবে নানার ভয়ে এই কাজ করতে হয়েছে লুকিয়ে লুকিয়ে।   

প্রথম সিনেমা ওরা ১১ জন 

ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

কাজ শুরুর দু'তিন বছর পর ১৯৭০ সাল থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন এগিয়ে আসতে থাকে, দেশ অশান্ত হতে শুরু করে। শহরে কারফিউ জারি হলো, দু ঘণ্টা শুধু বিরতি। কাজ কমে এলো। কিন্তু থেমে গেলো না। ঐ দু'ঘণ্টার মধ্যেই সিনেমা হলে গিয়ে বড় একটা ব্যানার লাগাতে হবে। আবার কারফিউ, আবার কাজ বন্ধ, আবার বিরতি, আবার গিয়ে আরেকটা ব্যানার বানানো। এভাবেই তখন চলতো।

দীর্ঘ ৫৫ বছর একটানা সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন হানিফ পাপ্পু। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি সিনেমার ব্যানার আঁকার সৌভাগ্য হলো ১৯৭২ সালে। সিনেমার নাম ছিল ওরা ১১ জন। এরপর রংবাজ, অবুঝ মন, দুই রাজকুমার, বেদের মেয়ে জোসনা, সোনার হরিণ, বধূসহ আরও কত হাজার হাজার সিনেমা। 

শিল্পী নিতুন কুন্ডুর সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করেছিলেন শিল্পী পাপ্পুও 

১৯৭৩ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঢাকা সফর উপলক্ষ্যে রেসকোর্স ময়দানে নৌকা আকৃতির মঞ্চ তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পী নিতুন কুন্ডু। সেবার সেই মঞ্চ সাজানোর কাজে নিতুন কুন্ডুর সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করেছিলেন শিল্পী পাপ্পুও। 

ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

এরপর চোখের পলকে কেটে যায় তিনটি দশক। কাজ আর কাজ। নিজেকে আর কোনো মানুষ নয়, মেশিন মনে হতে লাগলো পাপ্পুর। কিন্তু এই ব্যবসায় ভাটা পড়ে ২০০০ সাল থেকে ডিজিটাল প্রিন্ট চলে আসার পর। ধীরে ধীরে হাতে আঁকা ব্যানারের ক্যানভাস গিলে খেল ডিজিটাল ব্যানার ।  

'একেকটা ব্যানারে ২০০ টাকা খরচ, আর বিক্রি করতাম ২ হাজার, তিন হাজারে। আর এখন বানাতেই লাগে ৩০-৬০ হাজার টাকা। তাই দাম হয়ে যায় ১ লাখ টাকা। কিন্তু ডিজিটালের যুগে এক লাখ টাকা দিয়ে এখন কেউ কি আর হাতে আঁকা সিনেমা ব্যানার বানাবে?' আফসোসের সঙ্গে বলেন পাপ্পু।   

রঙ-তুলিকে আত্মা থেকে মুছে ফেলতে পারেননি একদিনের জন্যও

এভাবেই সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের ব্যবসা পড়ে যেতে শুরু করলো। অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে লাগলো রূপায়ণ আর্ট পাবলিসিটির। কারখানা বন্ধ, হাতে নেই কাজ। ঘরে বসে বসে  যখন জমানো টাকা পয়সাও সব শেষের দিকে, তখন কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েই পড়েন তিনি। এতদিন তো কখনো ভবিষ্যতের কথা ভাবেননি। ইচ্ছেমতো আয় করেছেন, স্ত্রী আর এক মেয়ের ভরণপোষণ চালিয়েছেন। ভালো কলেজে মেয়েকে অনার্সে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু এখন?

সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের সঙ্গে যে মানুষগুলো জড়িত ছিলেন একসময়, তারাও হারিয়ে যেতে লাগলেন এক এক করে। কেউবা চায়ের দোকানে, কেউবা পোশাক কারখানায়। কিন্তু পাপ্পু ছিলেন সত্যিকারের অনুরাগী। রঙ-তুলিকে তিনি আত্মা থেকে মুছে ফেলতে পারেননি একদিনের জন্যও।  

বিশ্বাস ছিল সৃষ্টিকর্তা ঠিকই ফিরে তাকাবেন। বিশ্বাস, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর সাথে বুদ্ধি এই তিনটেই তাকে এখনো সবার মাঝে বাঁচিয়ে রেখেছে। বাকিরা হারিয়ে গেলেও তিনি ঠিকই নতুন পথ বের করার চেষ্টা করলেন। ভেবে দেখলেন, বড় জিনিস থেকে এই শিল্প ছোটো জিনিসে নিয়ে গেলে কেমন হয়?  

ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

পাত্রপাত্রীকে নায়িকা আর বাবাকে ভিলেন করে শুরু করলেন হলুদের ব্যানার 

এরইমধ্যে একদিন ছোটো ভাই ফারাদ এসে উপস্থিত তার কাছে। সামনে তার বিয়ে, ভালবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তাই বিয়ে হবে জাঁকজমকপূর্ণ। কিন্তু কীভাবে হলুদের কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

পাপ্পু বললেন, 'আমি আছি, আমি তোর হলুদের স্টেজ সাজিয়ে দিবো।' করলেনও তাই। একটা তিন ফিট বাই দুই ফিট ক্যানভাসে আঁকলেন পাত্র, পাত্রী আর বাবা মায়ের ছবি। প্রেমের বিয়ে বলে, দুষ্টুমি করে সিনেমার ব্যানারের মতো পাত্র-পাত্রীকে বানালেন নায়ক-নায়িকা। আর বাবাকে বানিয়ে দিলেন ভিলেন চরিত্র। উপরে লেখা '...গায়ে হলুদ'। 

বাংলাদেশের রিকশায় সিনেমা পেইন্টিংয়ের যাত্রা কিন্তু শুরু হয় পাপ্পুর হাত ধরেই     

এরপর পরপর আরও অনেক অর্ডার আসতে লাগলো তার কাছে। তিনিও অর্ডার নিতে লাগলেন। শুধু হলুদের ব্যানার না, বিভিন্ন ফটোফ্রেমও তৈরি করতে লাগলেন। সিনেমার ব্যানারে নেই তো কি হয়েছে, সিনেমা আর্ট তো এখন নতুন একটি জায়গাতেও স্থান পাচ্ছে!

পাঁচ বছরের মতো এই ব্যবসা চললো তার। এরপর এলো ডিজিটাল, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের আমল। কে আর দশ হাজার দিয়ে হাতে আঁকা ব্যানার বানাবে তখন? তাই এই ব্যবসাও পড়ে গেলো।   

এরপর রিকশাতেও এঁকেছেন। এঁকেছেন রাজনৈতিক পোস্টারও। এখনো এঁকেই চলেছেন। তবে রিকশায়। রিকশায় রিকশা আর্ট এখন কমে গেলেও অনেকে শখে এসে কিনে নিয়ে যায়। তাদের জন্যই রিকশার পেছনের প্লেটগুলো এঁকে বিক্রি করেন। মূল্য পড়ে ১০ হাজারের মতো। 

'রিকশা আর্ট গ্যালারী'

ইউনেস্কো কর্তৃক রিকশা আর্ট স্বীকৃতি পাওয়ার পর রিকশাচিত্র স্থান পেলো রিকশা থেকে ঘর–গৃহস্থালির নানা অনুষঙ্গে। সেই সাথে ঢুকে পড়লো সিনেমা ব্যানারও। পাপ্পুও তখন শুরু করলেন নিজের দোকান। 

বকশীবাজার লেনে তার দোকানের নাম দিলেন 'রিকশা আর্ট গ্যালারি'। সিনেমা ব্যানার থেকে গ্লাস, প্লেট, হারিকেন, কেটলি, সানগ্লাস, বোতল আর হারিকেনের চিমনির মতো বিচিত্র ক্যানভাসে আঁকতে শুরু করলেন রিকশাচিত্র। ব্যানারের মতো এসবেও নিজের হাতের ছোঁয়া বুলিয়ে গেলেন। বিভিন্ন শোপিসে রঙ মাখিয়ে, নকশা করে আর নায়ক-নায়িকাদের ছবি এঁকেই এখন দিন কাটছে তার। বড় বড় ক্র্যাফটের দোকানগুলো তার থেকেই নিয়ে এখন এসব বিক্রি করছে। 

'আড়ং, যাত্রা এখান থেকে একটা চশমা কেনে ৫০০ টাকায়, ওরা সেটা বেচে ১২০০ টাকায়। আবার এই হারিকেন, জগগুলো আমি বিক্রি করি ১২০০ টাকায়। ওরা সেটা বেচে ১৫০০, ২০০০ টাকায়,' পাপ্পু বলেন। 

সরলা, পাশে আছি ইনিশিয়েটভের মতো অনলাইন কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আর যাত্রা বিরতির মতো কয়েকটি দোকানই এখন তার গ্রাহক। করোনার সময়ে পাশে আছি ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে কাজ করে বিভিন্ন সতকর্বাতাও দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। আবার বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়েও এঁকেছেন রিকশায়।

ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

যেমন, 'ঐ ভাতিজা মাস্ক কই', ' মাস্ক না পড়লে তোরে কইট্টাল্বাম', ''মানবো না আমরা আর- ধর্ষণ ও অত্যাচার', 'রাস্তাঘাটে দিলে গায়ে হাত, লাথি খাবি ধুমধাম', 'আমার পোশাক নয়, তোমার মানসিকতা ধর্ষণের কারণ,' 'পুরুষশাসিত সমাজ আর নয়, নারী-পুরুষ সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করো' এরকম বার্তা। 

তবে পাপ্পু জানান, প্রধান গ্রাহক হলেন শখে কিনতে আসা মানুষগুলোই। দেশের বাইরে থেকে দু'একটা কাস্টমার এলেই এক মাস দু'মাস চলে যায় তার।  
পাপ্পুর মন পড়ে থাকে সেই বিশ ত্রিশ ফিটের বড় বড় ক্যানভাসে

শহরের আকাশ ঢেকে দেওয়া সিনেমার ডিজিটাল ব্যানারগুলো দেখে তার মনে পড়ে হাতে আঁকা সেই ব্যানারগুলোর পেছনের শ্রম, নিষ্ঠা, ভালোবাসা, প্রতিটা তুলির আঁচড়ের কথা। বুকের কোথায় যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। তারপরও সব কষ্ট চেপে রেখে রোজ রাত–দিন কাজ করে চলেছেন পাপ্পু। তাঁর ভাষায়, কাজ ছাড়া তিনি শান্তি পান না। 

টাকার জন্য তো আর এই কাজ করেন না তিনি। তাহলে তো ব্যবসা বদল করে এতদিনে ফুলে ফেঁপেও উঠতে পারতেন। লোকে তাকে রিকশা আর্টিস্ট হিসেবে চিনুক আর সিনেমা আর্টস্ট হিসেবে, তিনি ভালোবাসেন রঙ তুলি দিয়ে খেলতেই। একাজেই তার শান্তি।   

ছবি আঁকার জন্য সিনেমার চরিত্রগুলো বুঝতে হতো নিপুণভাবে

ব্যানারগুলো আঁকার জন্য ছবির মূল বিষয়বস্তু ধরতে পারতে হতো এবং সে অনুযায়ী ফুটিয়ে তুলতে হতো। একারণে শুটিংয়ে তোলা ছবিগুলোর এলবাম দিয়ে দিতো তাদের হাতে। সাথে বলে দেওয়া হতো ছবির নাম। প্রাথমিকভাবে নাম শুনেই বুঝে ফেলতেন সিনেমা কোন ধরনের হবে। রোমান্টিক না অ্যাকশন না অন্যকিছু। রোমান্টির ছবি হলে নায়ক-নায়িকার ওপর জোর দিতেন। আবার অ্যাকশন সিনেমা হলে ভিলেইন আর নায়কের ওপর প্রাধান্য।   

আবার ভারতের কোনো সিনেমার নকল (রিমেক) করতে হলে, লং প্লে এনে দেওয়া হতো তাদের। লং প্লে তে পুরো সিনেমার অডিও শুনে নিতেন তারা। চরিত্রগুলো বোঝার চেষ্টা করতেন।  

এ প্রসঙ্গে স্মৃতিকাতর পাপ্পু জানান, 'সে সময় তো এসব ভারতীয় সিনেমা দেখার সুযোগ ছিল না। তাই ভারত থেকে তখন এই লং প্লে রেকর্ড আনতাম। সঞ্জয় দত্তের 'বাস্তব' সিনেমার নকল করে বাংলাদেশেও একই নামে একটা হয়। নায়ক ছিল মান্না। আমরা সারাদিন বসে বসে শুনতাম আর সঞ্জয় দত্তের চরিত্রটা বোঝার চেষ্টা করতাম। তারপর কল্পনা দিয়ে বানাতাম।' 

গ্রাফ কেটে নায়ক নায়িকাদের মুখগুলো আঁকতেন তারা। ফলে চেহারার গড়ন বোঝা যেত কে নায়িকা-নায়ক। তবে কল্পনার খুব দরকার ছিল বলে জানান পাপ্পু। তা না হলে ব্যানারে ফুটিয়ে তুলবেন কী করে? আর তখন তো সিনেমা ব্যানার দেখেই লোকে হলমুখী হতো। ব্যানার মনমতো না হওয়ায় কত গঞ্জনাও শুনতে হয়েছে তাদের!   

তবে ব্যবসায়িক সিনেমার পাশাপাশি আলমগীর কবির, জহির রায়হান,  ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিত রায়ের মতো সিনেমা মাস্টারদের সাথেও কাজ করেছেন আর্টফিল্মপ্রেমী এই শিল্পী। সূর্য দীঘল বাড়ি, অশনি সংকেত, জীবন থেকে নেয়া, সূর্য কন্যা, লেট দেয়ার বি লাইট, সীমানা পেরিয়ে, রূপালি সৈকতের মতো বহু সিনেমার ব্যানার।

এ পর্যন্ত করা সবচেয়ে দামী ব্যানার ছিল 'অবুঝ মন' সিনেমার ব্যানার। ঐ আমলেই এর জন্য ৩ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। 

কোপেনহেগেনে নিজেকে খুঁজে পেলেন 

হানিফ পাপ্পুর জীবন থেকে যখন আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা, গৌরব এসবকিছু হারিয়ে যেতে বসছিল, তখন তার সুযোগ হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের একটি কর্মশালায় অংশ নেওয়ার। 

২০১৪ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের আন্তর্জাতিক সে-ই কর্মশালায় পুরোনো দিন ফিরে পেলেন তিনি। চওড়া রাস্তায় আর বড় ক্যানভাসে বাংলাদেশি সিনেমার নায়ক–নায়িকার মুখ আঁকলেন পাপ্পু। ভিনদেশিরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পাপ্পু বলছিলেন, 'তখন বুঝলাম যে আমগো হাতের কাজেরও দাম আছে। একসময় ভাবছিলাম, এই লাইন পুরাপুরি খতম। কিন্তু তখন মনে হইল, নতুন কিছু করা যায়।'  

২০২৩ সালে জার্মানের একটি উৎসবের জন্য দুটো সিনেমা ব্যানার বানাচ্ছেন এখন তিনি। একটি রংবাজ সিনেমার, অপরটি বেদের মেয়ে জোসনার। বেদের মেয়ে জোসনার ব্যানারটি দেখিয়ে বললেন, '২০ ফিট বাই ১০ ফিটের এই ব্যানারটার জন্য দেড় লাখ টাকা পাবেন তিনি জার্মান থেকে।' সাথে শিল্পী মোহাম্মদ আহমেদের  দুটো রিকশাও যাবে এই উৎসবে। 

বিদেশে যাবার আর তেমন ইচ্ছে নেই তার। বিশেষ করে, জার্মান ডেনমার্ক, সুইডেন, ইউরোপ যাবার আর ইচ্ছে নেই তার। প্লেনের ভেতর ১৭/১৮ ঘণ্টা বসে থাকার কথা ভাবলেই আর কোথাও যেতে ইচ্ছে হয়না পাপ্পুর।  

বিজ্ঞাপনও বানিয়েছেন তিনি 

যদিও তা নিয়মিত ছিল না। তৎকালীন স্টার সিনেমা হলের মালিক মোহাম্মদ আলীর গাড়ির ব্যবসার বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু করে স্বাধীনতার পর মায়াবরীর বিজ্ঞাপন, কোকাকোলা বিজ্ঞাপন, রাজা কনডম, লাইফবয় সাবান, কসকো সাবান, কোকাকোলার যতগুলো বিজ্ঞাপন হতো সবই তার হাত দিয়ে গেছে। 
চারুকলায় ওয়ার্কশপে যান মাঝে মাঝে

পাপ্পু জানান, সেখানকার ছাত্রদের অনেক ইচ্ছে এই রিকশা, সিনেমা আর্টের প্রতি। ছাত্ররা নিজেরা এসে অনেক কাজ শিখে যান ব্যাক্তিগতভাবে। নিজেও যান কর্মশালায়। ঢাকা চারুকলা অনুষদে মাঝে মাঝে কর্মশালার জন্য যান তিনি। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে সিনেমার ব্যানার পেইন্টিংয়ের ওপর একটি ওয়ার্কশপ করতে গিয়ে নতুন করে এই শিল্পের প্রেমে পড়েন এই শিল্পী।  

করেছেন ট্রাক আর্টও

কিন্তু সেই একই কারণে, ট্রাক আর্টও এখন আর নেই। 

গত মে মাসে একটা প্রাইভেট জিপে তিনি নকশা করেছেন। সম্মানী পেয়েছেন এক লাখ টাকা। আবার অনেকে বিয়ের বাক্স আর্ট করিয়ে নেন তার কাছ থেকে। এভাবেই শৌখিন মানুষের শখগুলো বেঁচে আছে বলে , তার রুটি রোজগারও হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বস্ততায় সেরা পাপ্পু! 

পাপ্পু শুধু একজন শিল্পীই নয়। তিনি ছিলেন অসম্ভব সৎ এবং বিশ্বস্ত একজন মানুষ। তার নৈতিকতাবোধেরই একটি ছোট্ট উদাহরণ- তখন পাকিস্তান আমল। রূপায়ন আর্ট পাবলিসিটির নাম তখন ছিল সিতারা আর্ট পাবলিসিটি। মালিক ছিলেন একজন অবাঙ্গালী মুসলিম। পাপ্পুর তখন সাত কি আট বছর বয়স। সাথে কাজ করতেন সুভাষ চক্রবর্তী ও গিরিন দাস। বিশ্বস্ত এবং বুদ্ধিমান ছিলেন বলে, কারখানার চাবিটি থাকতো তারই কাছে। 

ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

স্বাধীনতার পর যখন কারখানার এই অবাঙ্গালী মালিক পাকিস্তানে চলে যায়, এই জায়গাটি তখন মালিকের কাছ থেকে  কিনে নেন সুভাষ চক্রবর্তী এবং গিরিন দাস। একদিন সুভাষবাবু এলেন কিশোর পাপ্পুর কাছে। এসে কারখানার চাবিটি চাইলেন। কিন্তু ছোট্ট পাপ্পু মালিক ব্যতীত অন্য কাউকেই যে এই চাবি দেবে না। সুভাষ তাকে মালিকানা বদলের বিষয়টিও জানালেন। কিন্তু তারপরও পাপ্পু রাজি নয়। 

তিনি আগে মালিকের কাছে যাবে, মালিক বললে তবেই সে চাবিটি দিয়ে দেবে। কী আর করা। অগত্যা একদিন সুভাষ চক্রবর্তী আর পাপ্পু গেলেন মালিকের কাছে। মালিকের কাছ থেকে ঘটনা শোনার পর পাপ্পু যখন চাবিটি দিতে যাবেন, তখনি সুভাষ অস্বীকৃতি জানালেন। বললেন, 'নেবো না, তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করবো।'

এরপর পাপ্পুর বাবা আব্দুর গাফফার চৌধুরীর কাছে গিয়ে সুভাষ বললেন, 'আপনার এই ছেলেটিকে আমরা রেখে দিতে চাই। ওর মতো বিশ্বস্ত একজনকে হাতছাড়া করতে চাইনা'। 

এরপর থেকে তাদের সঙ্গেই কাজ শুরু করে পাপ্পু। কারখানার নামও হয়ে যায়, 'রূপায়ন আর্ট পাব্লিসিটি'।

নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে বিপুপ্তপ্রায় এই শিল্পগুলো সম্পর্কে

ছোটোবেলা থেকেই কর্মে পটু আর বিশস্ত হওয়ায় সবাই তাকে শিষ্য করতে চাইতো। মামা মোহাম্মদ রফিকের কাছ থেকে এর বুনিয়াদ শুরু হলেও, কাজ শিখেছেন গিরিন বাবু আর আনোয়ারের কাছ থেকে। তার নিজের বর্তমানে একজনই শিষ্য। আগে আরও ছিল। টাকা পয়সার অভাবে তা একজনে এসে নেমেছে। 

পাপ্পু জানেন কীভাবে সবকিছুর মধ্যে থেকেই কাজ বের করে আনা যায়। তা না হলে সিনেমা ব্যানারের সেই দুঃসময়েও সে যেভাবে আকড়ে ধরে শুধু প্লট বদলে গেছেন তা সত্যিই চাট্টিখানি কোনো কথা নয়। বারবার নিজের ক্যানভাস বদল ভালো না-কি খারাপ তা জানা নেই পাপ্পুর। 

তার নাম দিয়ে সার্চ করলেই, ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে পত্রপত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ভিডিও স্টোরিতে ছাপা হওয়া তার জীবনের গল্প। সবগুলোতেই একই গল্প বারবার বলতে হয় তাকে। বিনিময়ে কোনো সুযোগ সুবিধা বা অর্থনৈতিক লাভের ছিটেফোঁটাও নেই। কিন্তু তারপরও কাউকে কখনো ফিরিয়ে দেননি তিনি। তিনি মনে করেন, এই সাক্ষাৎকারগুলোতে, তার ব্যক্তিগত লাভ না হলেও নতুন প্রজন্মের, শিল্পী অনুরাগীদের ঠিকই হয়। নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে বিপুপ্তপ্রায় এই শিল্পগুলো সম্পর্কে। 

পাপ্পু বলেন, 'আমার লাভ পয়সার দিক দিয়ে হয়না। কিন্তু প্রসারের দিক দিয়ে হয়। লোকে আমাকে চেনে জানে, সালাম দেয়। সম্মান করে। এটুকুই তো যথেষ্ঠ। টাকা তো এই সুখ আমাকে দিতে পারতো না।' 

এখনো পাপ্পু আশাবাদী। নতুন প্রজন্ম হয়তো আগ্রহী হবে এই শিল্পের প্রতি। রিকশা আর্টের মতো সিনেমা ব্যানার শিল্পও জায়গা করে নেবে অন্য কোথাও। তবে খুব আফসোস করেন, সত্যিকারের রিকশা আর্ট নিয়ে। 

ইউনেস্কো রিকশা আর্টকে স্বীকৃত দেওয়ার পরই কিছু 'ভদ্রলোক' বেশধারী মানুষ নিজেদের ব্যবসার জন্য ছাপ দিয়ে এখন সহজেই রিকশা আর্টের মতো ব্যবহার্য জিনিস তৈরী করছে। অথচ, প্রকৃত রিকশা আর্ট এর চেয়ে অনেক আলাদা আর অনেক কষ্টসাধ্য, গুণসাধ্যের বিষয়। কিন্তু এই নকলের ভিড়ে  আজ প্রকৃত রিকশা আর্টই বিলুপ্তের পথে। জানান পাপ্পু। 
  
 
 
 

Related Topics

টপ নিউজ

সিনেমার পোস্টার / পোস্টার / সিনেমা হল / সিনেমা / ঢাকাই সিনেমা / ব্যানার শিল্পী

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • এইসব মাচাং ঘর আর দেখা যাবে না!
  • ব্যবসা বাড়লেও পাঁচ বছরে সম্পদ কমেছে শামীম ওসমানের
  • সাকিবের বার্ষিক আয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা, ব্যাংকঋণ ৩২ কোটি টাকা
  • নভেম্বরে রপ্তানি আয় আগের মাসের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেড়েছে
  • আয়রন ম্যান হিসেবে ডাউনি জুনিয়রের ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা নেই: কেভিন ফাইগি
  • বগুড়া-৭ আসন: ভাগ্যের ফেরে এমপি, শূন্য থেকে স্বামী-স্ত্রী কোটিপতি

Related News

  • ২০২৪-এ দর্শকের তুমুল আগ্রহে রয়েছে যেসব হলিউড সিনেমা
  • আইএমডিবি’র জরিপে এ বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমা-সিরিজ যেগুলো
  • কোথায় গেল কাপড়ের ব্যানার?
  • গদার, তারকোভস্কি, তোরনাতোরে যখন ধানমন্ডির আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন
  • জেমস বন্ড নাম চুরি করেছি: ইয়ান ফ্লেমিং 

Most Read

1
ফিচার

এইসব মাচাং ঘর আর দেখা যাবে না!

2
বাংলাদেশ

ব্যবসা বাড়লেও পাঁচ বছরে সম্পদ কমেছে শামীম ওসমানের

3
বাংলাদেশ

সাকিবের বার্ষিক আয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা, ব্যাংকঋণ ৩২ কোটি টাকা

4
অর্থনীতি

নভেম্বরে রপ্তানি আয় আগের মাসের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেড়েছে

5
বিনোদন

আয়রন ম্যান হিসেবে ডাউনি জুনিয়রের ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা নেই: কেভিন ফাইগি

6
বাংলাদেশ

বগুড়া-৭ আসন: ভাগ্যের ফেরে এমপি, শূন্য থেকে স্বামী-স্ত্রী কোটিপতি

EMAIL US
[email protected]
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2023
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - [email protected]

For advertisement- [email protected]