‘খাবার কষ্ট, তাই স্ত্রীকে গ্রামে পাঠিয়েছি’
কড়াইল বস্তির জামাই বাজার এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ। বয়স ২৫ পেরুনো এই যুবকের পৈত্রিক নিবাস উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে। শৈশব-কৈশোর গ্রামে কাটলেও তারপর তিনি থিতু হয়েছেন রাজধানীর এই বস্তিতে।
একসময় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। কোভিড সংক্রমণের মাঝে গতবছরের শেষের দিকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। এরপর দিনমজুরি থেকে শুরু করে নানান কাজে জড়িয়েছেন। তবে স্থায়ী হতে পারেননি কোথাও। ফেরার সুযোগ হয়নি নির্মাণ কাজেও।
এখন স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সহকারী হিসেবে কাজ করছেন, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন নির্মাণ সামগ্রী। বিনিময়ে মাসে ৫ হাজার টাকা বেতন পান। সেই হিসেবে সারা দিন কাজ করে তার গড় আয় দেড়শ টাকার কিছু বেশি মাত্র।
এই ৫ হাজার টাকার মধ্যে বস্তির এক রুমের বাসা ভাড়া দিতে হয় ২ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ, বাকি ২ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে পুরো মাস সংসার চালাতে হয়।
বছর দুয়েক হল বিয়ে করেছেন তিনি। টানাটানির সংসারে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দিতে না পেরে তাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই ৩০ হাজারের বেশি টাকা ঋণ করতে হয়েছে তাকে। এই টাকা পরিশোধ করা নিয়ে আছেন মহা দুঃশ্চিন্তায়।
আবু সাঈদ দ্য বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাডকে বলেন, "যখন রাজমিস্ত্রীর কাজ করতাম তখন আমার মাসিক আয় ছিল ১৫ হাজারের বেশি। দিন প্রতি ৫০০ টাকার কম আয় হতো না, বেশিই হতো। কিন্তু এখন রাজমিস্ত্রীর কাজ নেই। যে কাজ করি এবং যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলেনা,"
"মাস দুয়েক হলো বউকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছি। যে আয় করি তাতে দুজনের চলেনা। বেতনের টাকা শেষ হলে অধিকাংশ দিন চুলা জ্বালানো সম্ভব হয় না। বলতে পারেন, এখানে খরচ বেশি। খেতে দিতে পারিনা বলেই স্ত্রীকে গ্রামে পাঠিয়েছি,"
"আমার বাবা সামান্য কৃষিজীবী। তাতে চার জনের সংসার কোনোভাবে চলে যায়। এরমধ্যে আমার স্ত্রীকে রেখে আসলাম, বাড়তি চাপ হয়ে গেল। কিন্তু এছাড়া আসলে কিছু করার ছিল না। আমি নিজেই খেতে পাই না। তাকে এখানে রেখে কষ্ট দেয়ার মানে হয় না," বলেন তিনি।
গত বছর লকডাউনে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার সময়ও ঢাকা ছাড়েনি তিনি। ভেবেছিলেন পরিস্থিতি অতিসত্বর ঠিক হয়ে যাবে। গত ছয় মাসে রাজমিস্ত্রীর কাজও জুটাতে পারেননি। যে গ্রুপের সাথে তিনি কাজ করতেন তারা সবাই আলাদা হয়ে গেছে বলে জানালেন আবু সাঈদ।
"এখন আমার ৫ মাসের ভাড়া বাকি আছে। আবার লকডাউন এলো, এই মাসেও ভাড়া পরিশোধ করতে পারবো বলে মনে হয় না। এভাবে কতোদিন চলা যায় বলেন। যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। আবার অন্য কোনো কাজও খুঁজে পাচ্ছিনা। এখন যেখানে কাজ করি, এই লকডাউনে সেখানকার ব্যবসাও ভালো না। তার মানে এটাও মাথায় রাখতে হবে এ মাসের বেতন পেতে সমস্যা হবে। এমন হলে আবার ঋণ করতে হবে,"
ঋণের কারণেই তিনি এখন ঢাকা ছাড়তে পারছেন না বলে জানান।
আবু সাঈদের সাথে কথা বলতে বলতে তার কাজের ডাক আসলো, চলে যেতে চাইছেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, "গরীবের অনেক দুঃখ ভাই। আমাদের দেখার কেউ নেই। আমরা বস্তির মানুষ আমাদের জীবনের দাম নেই।"