স্মার্ট ফোন আ্যলকোহলের মাত্রা বলে দেবে
এলোমেলো চলাফেরা, চোখের দৃষ্টি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা এসব বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে পানাহার করেছেন এমন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায় । আর ব্রিথালাইজার নামক যন্ত্রের সাহায্যে পুলিশ গাড়ির চালক মদ্যপান করেছেন কিনা, তা পরীক্ষা করেন। এই যন্ত্রটি নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের অ্যালকোহলের মাত্রা পরীক্ষা করতে সক্ষম। তবে, বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
গাড়ি চালানোর জন্য নির্ধারিত অ্যালকোহলের মাত্রা অতিক্রম করলেও, অনেকেই আছেন সাধারণ আচরণ করেন, আপাতদৃষ্টিতে বোঝা যায় না যে তারা মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করেছেন।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা শনাক্তকরণের নতুন একটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন, যার মাধ্যমে বোঝা যাবে কোনো ব্যক্তি মদ্যপান করেছেন কিনা। এই কাজে তারা প্রচলিত বাঁধাধরা একটি উপায়কেই কাজে লাগিয়েছেন। স্মার্টফোনের অ্যাক্সিলোমিটারের মাধ্যমে ব্যক্তির চলাফেরার গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন চিহ্নিত করেই কাজটি করা হবে। খালি চোখে বোঝা সম্ভব নয় এমন পরিবর্তন ও চিহ্নিত করা সম্ভব এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে।
ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমনই একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। গবেষণাটি থেকে দেখা যায়, স্মার্টফোন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে তারা বলে দিতে সক্ষম কোনো ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করেছেন কিনা। পরীক্ষায় ফলাফল ৯৩ শতাংশ সময়েই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষণার কাজটি খুব মজাদার শোনালেও, এর ফলাফল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সাধারণ ও পানাহারের পরের অবস্থার হাঁটাচলার তথ্য নেয়া হয়। তাদেরকে উভয় অবস্থায় দশ পা সামনে, এবং ঘুরে ১০ পা পেছনে হাঁটতে বলা হয়। পুরো সময়জুড়ে তাদের গতিপ্রকৃতি তথ্য স্মার্টফোনে লিপিবদ্ধ হয়।
প্রতিটি ব্যক্তির মাতাল ও সাধারণ অবস্থার বৈশিষ্ট্য আলাদা হওয়ায়, গবেষকরা একই ব্যক্তির দুই অবস্থার তুলনা করেন, এই কাজে তারা স্বতন্ত্র গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেন। তারা প্রতিটি ব্যক্তির দুই অবস্থার চলাফেরায় ভিন্নতা লক্ষ করেন।
তবে, পরীক্ষার সময় অংশগ্রহণকারীদের পিঠে স্মার্টফোন বেঁধে দেয়া। বাস্তব জীবনে মানুষ স্মার্টফোন পিঠে বেঁধে ঘোরেন না।একারণে, স্মার্টফোন পকেটে বা হাতে থাকা অবস্থায় পরবর্তী পর্যায়ের গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা করছেন তারা।
গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, এর দ্বারা প্রমানিত হয়েছে স্মার্টফোনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি মদ্য পান করেছেন কিনা তা শনাক্ত করা সম্ভব। ৯০ শতাংশ সময়েই কোনো ব্যক্তির দেহে অ্যালকোহলের অনুমোদিত পরিমান ০.০৮ অতিক্রম করলে তা শনাক্ত করা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অনেক সময় চলাফেরার ধরণ দেখে এই পরীক্ষা করেন। ওয়াক অ্যান্ড টার্ন নামের এই পরীক্ষায় চালককে শরীরের ভারসাম্য রেখে সোজা হাঁটতে হয় এবং ঘুরে পুণরায় পেছনের দিকে হেঁটে আসতে হয়। তবে শরীরে অ্যালকোহলের মাত্রা নির্ধারণের জন্য ব্রিথালাইজারের মতো যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।
অবশ্য কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার আগে চুইংগাম চিবালেও ভুল ফল আসতে পারে৷ তাই সন্দেহভাজনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই তৎক্ষনাৎ এই পরীক্ষা করা হয়না। অনুমোদিত যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে বেশিরভাগ মানুষই গাড়ি চালানোর মতো অবস্থায় থাকেন না। তবে সহনশীলতার মাত্রা, দ্রুত বিপাকক্রিয়া, ওজন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কারো ০.০৮ অন্য কারো ০.২০ হতে পারে।
ওরচেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ইমানুয়েল আগু এব্যাওয়ারে বলেন, "এর ফলে সহনশীলতা বেশি এমন অনেকেই ডিইউআই ( ড্রাইভিং আন্ডার ইনফ্লুয়েন্স) এ দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। চলাফেরা ও গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে এটি নির্ধারণই অধিক উপযুক্ত ও কার্যকর পন্থা হতে পারে।"