সিলভিয়া প্লাথের প্রেমপত্র, রেসিপি কার্ড ও ট্যারট কার্ডের অন্বেষণ
অকালপ্রয়াত আমেরিকান কবি সিলভিয়া প্লাথের ব্যক্তিগত ব্যবহারের বেশ কিছু জিনিস গত সপ্তাহে একটি নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, যার সাকুল্য মূল্য এক মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জিনিসগুলোর মধ্যে রয়েছে রোলিং পিন, ওয়েডিং ব্যান্ড, রেসিপি কার্ড; এমনি প্রেমপত্রও।
ফোর্বসের তথ্য মতে, সিলভিয়া প্লাথ ও তার সাবেক স্বামী ব্রিটিশ কবি টেড হিউজেসের কন্যা ফ্রিদা হিউজেসের পক্ষে নিলাম কোম্পানি সোথবি'স এই জিনিসগুলো বিক্রি করে।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে ২,০৬,৮৮৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে ফরাসি ট্যারট কার্ডগুলো। ধারণা করা হয়, এই প্লেয়িং কার্ডগুলো সিলভিয়াকে তার ২৪তম জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন স্বামী টেড।
প্লাথের বেশকিছু লেখনীতে ট্যারটের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন ১৯৬০ সালে লেখা তার কবিতা 'দ্য হ্যাংগিং ম্যান'-এ একটি নির্দিষ্ট ট্যারট কার্ডের উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
'ফাইন বুকস অ্যান্ড কালেকশনস'- এর লেখিকা রেবেকা রেগো ব্যারি এবং আরও অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন, প্লাথ তার আংশিক আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস 'দ্য বেল জার' (১৯৬৩) এবং ১৯৬৫ সালে মরণোত্তর প্রকাশিত 'এরিয়েল' নামে কাব্যগ্রন্থটিকে সাজাতে এই ট্যারট কার্ডগুলোর সাহায্য নিয়েছিলেন।
নিলাম প্রতিষ্ঠান টেডের উদ্দেশ্যে লেখা অনেক চিঠিও বিক্রি করেছে। এরমধ্যে একটি টাইপ করা চিঠি চল্লিশ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছে।
১৯৬৫ সালে প্লাথ স্বামী টেডের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন, 'আমার দেহ ভেজা ঘাসের চেয়েও শীতল। তোমার কী জানা আছে, তুমি সবচেয়ে স্নিগ্ধ চেহারার অধিকারী! আর তোমার তরঙ্গায়িত চোখ, তোমার উষ্ণতা, পেশীবহুলতা এবং বলিষ্ঠতা... আমি উন্মাদ হয়ে যাই যখন তোমার কথা ভাবি।'
১৯৫৬ সালে প্রথম সাক্ষাতের মাত্র চার মাসের মাথায় টেড ও সিলভিয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, এসিয়া ওয়েভিলের সাথে টেডের প্রণয়ের প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে সিলভিয়া-টেড দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে। তাদের বিচ্ছেদের পূর্বে এই দম্পতি দুই সন্তানের পিতা-মাতা হন।
বিচ্ছেদের মাত্র সাত মাসের মাথায় ত্রিশ বছর বয়সী সিলভিয়া আত্মহত্যা করেন। তবে সেই সাত মাসের মাঝেই তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু সাহিত্য রচনা করে গেছেন।
নিলামে বিক্রি হওয়া জিনিসগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ছিল টেড ও সিলভিয়ার দাম্পত্যজীবনের প্রথম দিকের স্মৃতি সম্বলিত জিনিসপত্র।
তাদের কন্যা ফ্রিদা বলেন, 'এই নিলামটি আমার পিতামাতার দাম্পত্যজীবনের সবচেয়ে সুখের দিনগুলোকে নির্দেশ করে; যখন তারা একসঙ্গে কাজ করতেন, একে অপরকে সাহায্য করতেন এবং একে অপরের ভালোবাসা ও সমর্থনে উৎসাহী ছিলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আপনারা যদি আমার বাবার উদ্দেশে লেখা মায়ের কবিতাগুলো পাঠ করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন তাদের ভালোবাসা কতটা আসাধারণ ছিল।'
নিলামে প্লাথের গৃহস্থলির বেশকিছু জিনিসও বিক্রি করা হয়েছে। তার হাতে তৈরি তেত্রিশটি রেসিপি কার্ড এবং কাঠের তৈরি রোলিং পিন ২৭,৫০০ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়েছে। প্লাথের জার্নালগুলো তার রন্ধন শৈলী সম্পর্কিত লেখনীতে ভরা ছিল এবং তিনি প্রায়শই বাড়িতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাতেন।
জীর্ণ কার্ডগুলোতে অন্তর্ভুক্ত রেসিপিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চিকেন ফ্রিকাসি, চেরি ও কুটির-পনির মুচি এবং টেডের মায়ের 'স্কটস পোরিজ যবের বিস্কুট'।
'দ্য লেটারস অব সিলভিয়া প্লাথ'-এর সহ-সম্পাদক পিটার কে স্টেইনবার্গ বলেন, অনেক পর্যবেক্ষক এটা জানতে পেরে অবাক হবেন, 'আই ইট মেন লাইক এয়ার'- এমনতর ছত্রের লেখিকা ছিলেন একজন দুর্দান্ত রাঁধুনি ও গৃহকর্ত্রী।
১৯৫৭ সালের এক জার্নাল এন্ট্রিতে কবি নিজেকে উদ্দেশ্য করেই বলেছিলেন, 'আপনি একসময় নিজেই নিজেকে গৃহজীবনে বেঁধে ফেলবেন এবং হাসফাঁস করতে শুরু করবেন,' বলেন স্টেইনবার্গ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্লাথ গবেষক এবং অনুরাগীরা তার স্মরণে কাজ করে চলেছেন। ২০১৭ সালে স্মিথসোনিয়ানস ন্যাশনাল গ্যালারিতে 'ওয়ান লাইফ: সিলভিয়া প্লাথ' শিরোনামে একটি প্রদর্শনীতে কবির ছোটবেলার ছবি এবং লেখনী প্রদর্শন করা এবং কবির প্রতিভা ও দক্ষতা সম্পর্কেও জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এছাড়া লেখিকা রেবেকা ব্রিল এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাথের স্মরণে জনমনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রতিদিন তার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্লাথের রন্ধন রেসিপি প্রকাশ করে থাকেন।
'যখন কেউ প্লাথের রান্নাঘরের কথা চিন্তা করে, তখন তার চোখে কবির গ্যাস-ওভেন দ্বারা আত্মহত্যার ভয়ঙ্কর দৃশ্য ভেসে ওঠে। আমি চেষ্টা করছি যেন মানুষের চোখে ভেসে ওঠা সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসে এবং প্লাথের রান্নাঘর তার কাছে যেমন জীবন, আনন্দ ও পূর্ণতার প্রতীক ছিল, জনমনেও যেন এটা সেভাবেই প্রতিষ্ঠা পায়,' এটলাস অবসকিউরার এক সাক্ষাৎকারে বলেন রেবেকা ব্রিল।
-
সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন -
আরও পড়ুন: টেড হিউজকে লেখা সিলভিয়া প্লাথের প্রেমপত্র উঠছে নিলামে!