সন্তানের দুধ কিনতে এক মায়ের অন্যরকম সংগ্রাম
একটি বাধাকপি, কিছু বেগুন, টমেটো আর ঢেড়শ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় রাস্তার পাশে কোলে সন্তানকে নিয়ে বসে আছেন এক মা। জনমানবহীন খালি ফুটপাতে এই ক'টি সবজি নিয়ে তিনি কি করছেন, তা জানতে আগ্রহ হলো। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দিলেন, একজনের খেতে দেওয়া সবজি বিক্রি করে নিজের শিশু সন্তানের জন্য দুধ কিনবেন।
লকডাউনের কারণে স্বামীর উপার্জন বন্ধ থাকায় সাড়ে তিন মাস বয়সী সন্তানের মা আসমা বেগম শিশু হালিমাকে কোলে নিয়ে সবজি বিক্রি করতে পথে বসেছেন। সন্তানের দুধের টাকা জোগাড় করতে অন্যের দেওয়া খাবারটুকু নিজেরা না খেয়ে এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল তাঁর ছিলো না বলে তিনি জানান।
আসমা বেগমের স্বামী সুমন মিয়া গত বছর করোনা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই ওয়াসার খণ্ডকালীন কাজটি হারান। সুমন আগে ওয়াসার পয়নিষ্কাশন লাইন পরিষ্কারের কাজ করতেন। প্রায় এক বছর ধরে কাজটি না থাকায় ভাঙ্গারি সংগ্রহ করেই বিক্রি করে কোনোভাবে জীবনযাপন করেছেন।
আগে তারা গুলিস্তানের স্টেডিয়াম এলাকার ফুটপাতে থাকতেন। চলমান লকডাউনের মধ্যে সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করে দেওয়ার পরে টিএসসির ফুটপাতে থাকা শুরু করেন কিন্তু সেখান থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন প্রতিদিন।
আসমা বেগম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত দু'দিন আগে এখানে সবজি ত্রাণ দিলে আমি তা সংগ্রহ করি। কিন্তু তখন ভাত না থাকায় সেদিনও সবজিগুলো ফুটপাতে বিক্রি করতে বসেছিলাম, তা বিক্রি হয়নি। পরে সেগুলো রান্না করি এবং কয়েকজনের সহযোগিতায় চাল কিনি এবং একজনে হাড়িপাতিল কিনে দেয়। রোববার রাতে শুধু পিয়াজ ভুনা দিয়ে কয়টা ভাত খেয়েছি। আজ (সেমাবার) দুপুর পর্যন্ত কিছুই খাইনি। সবজি দিয়েছেন একজন, সেগুলো বিক্রি করে সন্তানটির জন্য একটু দুধ কিনবো। আমরা না খেয়ে থাকতে পারি কিন্তু ওকে না খাইয়ে তো মেরে ফেলতে পারবো না।"
সুমন মিয়া ও আসমা বেগমের গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহনে। গ্রামে তাদের কিছুই নেই তাই ঢাকায় এসে ফুটপাতেই জায়গা করে নিয়েছিলেন তারা।
সুমন মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মানুষ আমাদের দেখে উপহাসই করে যায়। সহযোগিতার হাত কেউই বাড়াচ্ছে না। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ফুটপাতেও থাকতে দেয়না। বিড়ি সিগারেট বিক্রি শুরু করেছিলাম সেটাও করতে দিচ্ছে না। কিন্তু টিএসসিতে অন্যরা ঠিকই বিক্রি করছেন।"
আসমা বেগম জানান, তার জমজ সন্তান হয়েছিল কিন্তু ঠান্ডা লেগে চিকিৎসার অভাবে জন্মের ৬ দিন পরে এক সন্তান (আলি হোসেন) মারা যায়। এখন এই এক সন্তানকেও ক্ষুধা মিটিয়ে বাঁচাতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন আসমা।
গত কয় দিনে বেশ কয়েকজনই তাদেরকে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে আসমা বলেন, "লকডাউনের কারনে মানুষ বের হতে পারছে না তাই আমরা সহযোগিতাও পাচ্ছি না। তবে এর মধ্যেও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। আবার অনেকে করতে চাইলেও আমাদের নির্দিষ্ট যায়গায় পাচ্ছে না, কারণ তাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিভিন্ন যায়গায় থাকতে হচ্ছে আমাদের।"