শেফ কোবে: হাঁটতে শেখার আগেই সোশ্যাল মিডিয়া তারকা

ছোট দুটি হাত। সেই হাতে তৈরি হচ্ছে মজাদার সব খাবার। কখনো পিজ্জা, কখনো পাস্তা, কখনো কুকি, কখনো জুস ,কখনো-বা বিভিন্ন শেক, আরও কত কি!
বলছি কোবে উইয়ানের কথা। তার বয়স এখন ২ বছর। কিন্তু বয়স ২ হলে কী হবে, তার নামের সঙ্গে আরও আগেই জুটে গেছে 'শেফ' শব্দটি। ইন্টারনেটে নাম লিখে সার্চ দিলেই চলে আসে তার রান্নার সব ভিডিও ও ছবি।
যখন শিশুরা হাঁটতে শেখে গুটি গুটি পায়ে, ঠিক তখনই এই ছোট্ট 'শেফ' মাকে রান্নায় সাহায্য করেছে। তবে যেভাবে শেফদের টুপি, অ্যাপ্রোন পরে রান্না করতে আসে, কখনো কখনো মনে হতে পারে সে নয়, বরং তার মা-ই তাকে সাহায্য করছেন!
ভাবতেই আদুরে লাগে, 'এইটুকু' একটি বাচ্চা রান্না করছে কত কিছু! শুধু রান্নাই নয়, রান্নার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একদিকে চলে সবকিছু গড়বড় করা, অন্যদিকে চলে হাতের কাছে সবকিছু মুখে পুরে নেওয়া।
তার গড়বড়ের নমুনা অনেকটা এমন: হয়তো ফ্রাইপেনে তেল ঢালতে গিয়ে তা মাটিতে ঢেলে দিল আর উৎসুক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখল- কীভাবে তেল গড়িয়ে পড়ছে।
আবার কখনো-বা ডিম ফাটাতে গিয়ে আস্ত ডিমটাই মাটিতে আছাড় দিল। কখনো ব্লেন্ডারের শব্দে ভয়ে লুকিয়ে পড়ল!
এসব করেই ক্ষান্ত থাকে না সে। খাবার টেস্টও করা চাই তার। তবে সবাই যেমন রান্নার পর টেস্ট করে, কোবে তা করে না। এই ছোট্ট শেফ বরং রান্নার আগেই টেস্ট করে নেয়! হয়তো পিজ্জায় চিজ ছড়িয়ে দিতে হবে, কিন্তু পিজ্জায় দেওয়ার আগেই তা আগে নিজের মুখে পুড়ে নেয় সে। তর সইতে না পেরে কখনো না বুঝে পেঁয়াজেও কামড় বসিয়ে দেয়, কখনো-বা লেবুতে।
অবশ্য তার রান্নার চেয়েও এই গড়বড়গুলোই বেশি উপভোগ করেন দর্শক।
লকডাউনের শুরুতে পুরো পৃথিবী যখন ঘরবন্দি, নিশ্চুপ বনে গিয়েছিল, তখন কোবে উইয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দেয় তার রান্না আর গুটি গুটি দাঁতের হাসি দিয়ে। কোভিডের মরণছোবলে মানুষ যখন হাসতে ভুলে গিয়েছিল, তখন এই ছোট্ট শেফ যেন এক ঝুড়ি হাসি নিয়ে হাজির হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কোবের মা এশলে উইয়ান জানান, তিনি ও কোবের বাবা কায়েল উইয়ান কখনো ভাবতেও পারেননি তাদের ছেলে দুনিয়াজুড়ে এতটা সাড়া ফেলে দেবে, এত মানুষের মুখে হাসি এনে দেবে, বিশেষ করে যখন পৃথিবী থমকে রয়েছে।
এশলে জানান, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সবার সঙ্গে শেয়ার করার জন্যই প্রথম প্রথম এই ভিডিওগুলো তিনি শেয়ার করতেন ইন্সটাগ্রামে। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে তাদের সেই সোশ্যাল মিডিয়া যাত্রা শুরু হয় এবং এপ্রিল পর্যন্ত ফলোয়ার ছিল ২০০। তারপর তা বাড়তে বাড়তে ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ছাপিয়ে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখে।
ভিডিওগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে যে বিষয়গুলো, তার মধ্যে রয়েছে রান্না ঘিরে কোবের আধো-আধো কথা। বলে রাখা ভালো, সে এখন শুধু রান্নার জগতেই সীমাবদ্ধ নেই, ফলোয়ারদের ভালোবাসায় তার ব্যবহৃত পোশাক, তার নামে গেঞ্জি, তার ব্যবহৃত সামগ্রীও এখন দিব্যি বিক্রি হচ্ছে।
এশলে জানান, ছেলের এই রান্না ঘিরে যেন তাদের পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ হয়েছে। তিনি মনে করেন, কোবের এই ভিডিওগুলো একসঙ্গে বসে খাবার খেতে এবং পারিবারিক সময় কাটাতে মানুষকে অনুপ্রাণীত করবে।
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি যখন প্রথম ভিডিওটি শেয়ার হয়, কোবের বয়স তখন ১ বছর।সেই থেকে দেড়'শয়ের মতো পোস্ট শেয়ার হয়েছে। প্রতিটি শেয়ারজুড়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের অগণিত ভালোবাসা ও আদর মাখানো কমেন্ট আর রিঅ্যাকশনের ছড়াছড়ি।
সিএনএন, ফোর্বস ম্যাগাজিন, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো বড় বড় গণমাধ্যমেও ছোট্ট এই রাঁধুনিকে নিয়ে লেখা হচ্ছে আর্টিক্যাল, নেওয়া হচ্ছে সাক্ষাৎকার।
আমাদের সমাজে একটি বাচ্চা নিজে ছেলে না মেয়ে তা বুঝে ওঠার আগেই ছেলে শিশুদের বল, গাড়ি ধরিয়ে দেওয়া হয়, আর মেয়ে শিশুদের দেওয়া হয় পুতুল ও হাড়ি-পাতিল। তার মানে, একটি শিশু বুঝে ওঠার আগেই সে জানছে সে মেয়ে, তার কাজ রান্না করা আর বাচ্চা দেখা।আর একটি ছেলে শিশু জানছে সে ছেলে; তার কাজ রান্না করা নয়, বরং গাড়ি চালানো, খেলাধুলা করা। সেখানে কোবে উইয়ান আমাদের জন্য এক উদাহরণ। ছেলে শিশু হয়েও তার বাবা-মা তাকে ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি আগ্রহী করে তুলছেন।
২০১৯ সালে আমেরিকার ভার্জিজিনিয়ায় জন্ম কোবের। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী ও পেশাদার জেলে এবং মা গৃহিণী।
সত্যি বলছি, আপনার মন ক্লান্ত কিংবা বিষণ্ণ থাকুক, ছোট্ট এই মানুষের ভিডিও দেখলে প্রশান্তি পাবেন, এ কথা এক ধরনের নিশ্চিত করেই বলা যায়!
- সূত্র: অনলাইন