শয্যা শূন্যতায় ভুগবে স্পেস স্টেশনের নভোচারীরা!
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন আয়তনে একটি ফুটবল মাঠের চেয়ে বড় হলেও এতে স্থায়ী বিছানার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র সাতটি। যার প্রতিটির আকার বড়জোর একটি ফোন বুথের সমান।
সুতরাং ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে যখন বিছানার তুলনায় বেশি মানুষ থাকে, সেই বিরল সময়ের জন্য অভিনব কোন পন্থা খোঁজা ছাড়া আর উপায় থাকে না নাসার।
স্পেস স্টেশনে যদি আরো চার জন নতুন সদস্য আসেন, তাদের যোগ দিতে হবে ইতিমধ্যে সেখানে অবস্থান করা সাতজনের সঙ্গে। তখন দুইজন মহাকাশচারীকে ঘুমাতে হবে ডকড স্পেসএক্স ক্যাপসুলে। এরপরেও দেখা যাবে বিছানার অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে অবশিষ্ট দুই 'নিরীহ' নভোচারী।
তবে নাসা এ বিষয়টিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। নাসার মুখপাত্র ড্যান হুট বলেন, "মহাকাশে ঘুমানোর ব্যাপারে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে যেকোন স্থানই হতে পারে আপনার শয়নকক্ষ।"
স্পেস স্টেশনে বিছানাহীনতা খুবই সাময়িক একটা বিষয়। স্পেসএক্স নাসার নভোচারী শেন কিমব্রো এবং মেগান ম্যাকআর্থার, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির টমাস পেসকেট এবং জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির আকিহিকো হোশিদেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। এই চারজন নভোচারী আগামী ছয় মাস মহাকাশে কাটাবেন।
অন্যদিকে গত নভেম্বরে স্পেস স্টেশনে পৌঁছানো চার নভোচারীর আগামী সপ্তাহে পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
এই 'ট্রানজিশান পিরিয়ডের' সময়টুকুতে বিছানাহীনতায় থাকা দুই নভোচারী ঘুমাতে পারবেন তাদের যেখানে ইচ্ছে সেখানেই।
হুট বলেন, "তারা ফ্লাইট কন্ট্রোলারদের সাথে কথা বলে নেবে এবং নিজস্ব অস্থায়ী স্টেকআউট স্থাপনের জন্য স্টেশনে নির্ধারিত স্থান বেছে নিতে পারবে।"
স্টেশনে নভোচারীদের জন্য ঘুমের ব্যবস্থা করা কোনও নতুন সমস্যা নয়। স্পেস শাটল মিশনের সময়েও কখনও কখনও বেডরুমের চেয়ে বেশি নভোচারী ছিল।
যেহেতু নভোচারীরা স্টেশনে ভাসছেন, মেঝে, ছাদ বা প্রাচীর - যে কোনও পৃষ্ঠে নিজেদের স্লিপিং ব্যাগটি পেতে দিলেই তা ঘুমানোর জন্য এক দুর্দান্ত জায়গা হতে পারে।
নাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী নিকোল স্টটের মতে, "মহাকাশে ঘুম আমার সারা জীবনের সেরা ঘুম ছিল"। কক্ষপথে, স্পেস শাটল এবং স্পেস স্টেশনে ১০০ দিনেরও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন নিকোল।
২০০৯ সালে স্পেস স্টেশন রেকর্ড সংখ্যক ১৩ জন নভোচারীর নিবাসে পরিণত হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্পেস স্টেশনে মাত্র অর্ধডজন নভোচারীর বাস।
আরো একটা 'মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়' আছে যা নিয়ে নাসা মোটেও চিন্তিত নয়— টয়লেট।
সম্প্রতি একটি কার্গো উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে স্টেশনে আরো একটি নতুন টয়লেট যোগ হয়। সব মিলিয়ে স্টেশনে এখন স্পেস কমোডের সংখ্যা তিনটি।
স্টটের মতে, "এটা আশীর্বাদ যে সেখানে এখন ১১ জন ক্রুর জন্য তিনটি শৌচালয় রয়েছে"।
বেশি সংখ্যক ক্রুদের জন্য ঘুমের ব্যবস্থা এবং টয়লেটের মতো সমস্যাগুলোর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এটাই কী ইঙ্গিত দিচ্ছে না যে, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে নাসা!
- সূত্র- এনপিআর