লিভারের জন্য উপকারী কফি?
গত ২২ জুন বিএমসি পাবলিক হেলথ প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধ অনুযায়ী, যারা নিয়মিত কফি পান করেন, তাদের দুরারোগ্য লিভার ও ফ্যাটি লিভারের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম। ক্যাফেইনযুক্ত ও ক্যাফেইনবিহীন, দু-ধরনের কফিতেই এ উপকার পাওয়া যায়।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাউথহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক অলিভার কেনেডি।
কেনেডি বলেছেন, ইনস্ট্যান্ট কফি, গ্রাউন্ড কফি, ক্যাফেইনবিহীন কফি—নানা ধরনের কফি নিয়ে গবেষণা করেছেন তারা। প্রতি ক্ষেত্রে একই ফল পেয়েছেন। তিনি বলেন, লিভারের রোগের প্রতিরোধমূলক নিদান হতে পারে কফি।
যত বেশি কফি পান (৪ কাপ পর্যন্ত), তত উপকার
ইউকে বায়োব্যাঙ্কের তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা ৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫৮৫ জন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন। কী পরিমাণ কফি পান করেন, তার প্রাথমিক তথ্য দিয়েছিলেন অংশগ্রহণকারীরা। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৫৮ বছর। তাদের মধ্যে ৫৪.৫ শতাংশ ছিলেন নারী এবং ৯৪ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ।
এই মানুষগুলোকে গড়ে ১০.৭ বছর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয় তাদের লিভারের রোগ ও শারীরিক অবস্থার ওপর।
অংশগ্রহণকারীদের ৭৮ শতাংশের (৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮১৮ জন) কফি পানের অভ্যাস ছিল। দিনে তারা গড়ে দুই কাপ কফি পান করতেন। বাকি ২২ শতাংশ (১ লক্ষ ৯ হাজার ৭৬৭ জন) কোনো ধরনের কফি পান করতেন না। কফি পানকারীদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ইনস্ট্যান্ট কফি পান করতেন, ২৩ শতাংশ পান করতেন গ্রাউন্ড কফি (এর মধ্যে এসপ্রেসোও অন্তর্ভুক্ত), আর ক্যাফেইনবিহীন কফি পান করতেন ১৯ শতাংশ।
গবেষণা চলাকালীন, ৩ হাজার ৬০০ জন দুরারোগ্য লিভারের অসুখে আক্রান্ত হন। মারা যান ৩০১ জন। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নামে পরিচিত স্টিয়াটোসিস রোগে আক্রান্ত হন ৫ হাজার ৪০০ ৩৯ জন। যকৃতে চর্বি জমলে এ রোগ হয়। হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা নামে এক ধরনের যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১৮৪ জন।
যকৃতের রোগের ওপর কফির প্রভাব জানার জন্য গবেষকরা কয়েকটি ফ্যাক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করেন। ফ্যাক্টগুলোর মধ্যে আছে অংশগ্রহণকারীদের ধূমপানের অবস্থা, ডায়াবেটিস, বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই), জাতিসত্তা, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং টাউনসএন্ড ডেপ্রিভেশন স্কোর (আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতি)।
দেখা গেছে, যারা কফি পান করেন না, তাদের তুলনায় কফি পানকারীদের দুরারোগ্য যকৃতের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ কম, ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২০ শতাংশ কম, এবং যকৃতের রোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৪৯ শতাংশ কম।
যারা গ্রাউন্ড কফি এবং দিনে তিন থেকে চার কাপ কফি পান করেন, তারা উপকৃত হন সবচেয়ে বেশি।
এর আগে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছিল, যারা কফি পান করেন না, তাদের তুলনায় কফি পানকারীদের লিভার ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৮ শতাংশ এবং দুরারোগ্য লিভারের রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ কম। যারা দিনে চার কাপ বা তার বেশি কফি পান করেন, তাদের এ দুই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি যথাক্রমে ৪১ ও ৭১ শতাংশ কম।
আর্কাইভস অফ ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় বলা হয়েছিল যে সিরোসিস, বিশেষ করে অ্যালকোহলিক সিরোসিসের বিরুদ্ধে কফি ভালো সুরক্ষা দেয়।
কফি পানে লিভার ভালো থাকার সম্ভাব্য কারণ
ড. কেনেডি বলেন, কফিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এগুলোর প্রভাবেই হয়তো কফি পানে লিভার ভালো থাকে।
এমন দুটি উপাদান হলো, ক্যাফেস্টল ও ক্যাহউইয়ল। উপাদান দুটি একত্রে ডিটারপিনস নামে পরিচিত। ফ্রেঞ্চ প্রেস কফি ও এসপ্রেসোতে এ উপাদান তুলনামূলক বেশি থাকে।
ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড (সিজিএ) নামে এক ধরনের পলিফেনল বা উদ্ভিজ্জ যৌগও থাকে কফিতে। ধারণা করা হয়, এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আছে। এই অ্যাসিডগুলো সম্ভবত যকৃত ও ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আরও গবেষণা প্রয়োজন
কেনেডি বলেছেন, তাদের গবেষণায় দাবি করা হয়নি যে কেবল কফিই যকৃতের রোগের ঝুঁকি কমায়। তিনি বলেন, 'কফি পানকারীদের হয়তো আরও কিছু অভ্যাস আছে যে কারণে তাদের লিভারের রোগ কম হয়। শতভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলার জন্য আমাদেরকে দৈব চয়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ট্রায়ালে যেতে হবে।'
লিভার ভালো রাখার জন্য কি কফি পান বাড়িয়ে দেওয়া উচিত?
ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের চিফ হেপাটোলজিস্ট ড. ওমর মাসুদ বলেছেন, যদিও ড. কেনেডির গবেষণাটি শতভাগ নিখুঁত নয়, তবে অন্যান্য গবেষণায়ও কফির উপকারিতা সম্পর্কে কাছাকাছি ফলই পাওয়া গেছে।
যকৃতের রোগের বিরুদ্ধে কফি সম্ভবত ভালো সুরক্ষা দেয়। কফি পানকারীরা যকৃতের রোগে আক্রান্ত হন কম।
ড. মাসুদ বলেছেন, দিনে তিন-চার কাপ কফি পান সম্ভবত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীই হবে। তবে সাবধান থাকতে হবে, কফি পানের পরিমাণ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়।
সূত্র: এভরিডেহেলথ.কম