যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে যে ক্রিকেটারদের নামে
ক্রিকেটারদের যৌন কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গটা আজ হঠাৎ করেই পরিণত হয়েছে 'টক অব দ্য টাউন'-এ। কারণ : অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক টিম পেইনের পদত্যাগ।
অ্যাশেজ শুরু হওয়ার তিন সপ্তাহেরও কম সময় আগে পেইন দলনেতার দায়িত্ব ছেড়েছেন যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এক নারী সহকর্মীকে অশ্লীল বার্তা ও ছবি পাঠিয়েছিলেন পেইন।
প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের কোনো আইন ভঙ্গ করেননি বলে অভিযোগ থেকে নিস্তার পেলেও, সম্প্রতি সেই ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তার এই 'সেক্সটিং স্ক্যান্ডাল' ক্রিকেট দুনিয়ায় তুমুল আলোড়ন ফেলে দিলে, নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩৫ টেস্ট, ৩৫ ওয়ানডে ও ১২টি টি-টোয়েন্টি খেলা পেইন।
তবে পেইনই কিন্তু প্রথম ক্রিকেটার নন, যার নাম যুক্ত হয়েছে বিতর্কিত যৌন কেলেঙ্কারিতে। এমন অভিযোগে অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের তালিকাটা বেশ লম্বা। এই লেখায় তুলে ধরছি সেরকমই পাঁচ বিখ্যাত ক্রিকেটারের যৌন কেলেঙ্কারির আখ্যান, যা কলঙ্কের কালিমা লেপে দিয়েছে ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটের গায়ে।
শেন ওয়ার্ন
যৌন কেলেঙ্কারির জেরে অস্ট্রেলিয়া দলের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়া পেইন সান্ত্বনা খুঁজতে পারেন কিংবদন্তি অফ-স্পিনার শেন ওয়ার্নের থেকে। কেননা তার মতো প্রায় একই ধরনের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েই অস্ট্রেলিয়া দলের সহ-অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন ওয়ার্ন।
সেটি ২০০০ সালের কথা। বিবাহিত ব্রিটিশ নার্স ডোনা রাইটকে ফোন কলের মাধ্যমে এবং মেসেজ করে নানা ধরনের অশ্লীল ও কামুক কথা বলছিলেন ওয়ার্ন। কিন্তু তার এই অনিয়ন্ত্রিত যৌনাবেগের শেষ রক্ষা হয়নি।
এখানেই শেষ নয়। ২০০৩ সালে আবারও যৌন কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যান ওয়ার্ন। এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন মেলবোর্নের এক স্ট্রিপার, নাম অ্যাঞ্জেলা গালাগার। তিনি দাবি করেন, ওয়ার্নের সঙ্গে মাস তিনেকের 'অস্বস্তিকর সম্পর্ক' ছিল তার।
তবে এখন পর্যন্ত ওয়ার্নের জীবনের সবচেয়ে বড় যৌন কেলেঙ্কারিটি চাউর হয় ২০০৬ সালে। হ্যাম্পশায়ারের অধিনায়ক থাকাকালীন ২৫ বছর বয়সি দুজন ব্রিটিশ মডেলের সঙ্গে তার যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার ভিডিও ফাঁস হয়।
ক্রিস গেইল
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ক্রিস গেইল। অন্য দুই ফরম্যাটেও তার রেকর্ড চোখ ধাঁধানো। সব মিলিয়ে 'মডার্ন ডে ক্রিকেট'-এর শ্রেষ্ঠতমদের একজন তিনি। তবে এই গেইলই আবার মাঠের বাইরের নানা বিতর্কিত ঘটনার মাধ্যমে কলুষিত করেছেন ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটকে।
শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় হোটেল রুমে তিনজন ব্রিটিশ নারীর সঙ্গে 'সামাজিকতা' রক্ষা করতে দেখা যায় তাকে। ওই তিন নারী নাকি গেইলসহ কয়েকজন ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়ের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন।
আরেকবার গেইলের ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব তাকে বিপদে ফেলে দেয়। সেবার লাইভ ইন্টারভিউতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান টিভি উপস্থাপিকা মেল ম্যাকলাফলিনকে তার সঙ্গে পান করতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন।
অন্য এক ইন্টারভিউতে সাংবাদিক শার্লট এডওয়ার্ডসের কাছে নিজের 'খুব, খুব বড় ব্যাট' নিয়ে বাগাড়ম্বর করতে দেখা যায়। এছাড়া একবার এক নারী ইন্টারভিউয়ারকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, কখনো একসঙ্গে একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতায় জড়িয়েছেন কি না!
উপরের এতগুলো অভিযোগও যদি আপনার কাছে যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে জেনে রাখুন, ২০১৫ বিশ্বকাপ চলাকালীন এক নারী স্টাফের সামনে নিজের যৌনাঙ্গ উন্মুক্ত করার অভিযোগও উঠেছিল গেইলের বিরুদ্ধে।
কেভিন পিটারসেন
ক্রিকেটে রেকর্ডের পাশাপাশি বিতর্কের আরেক বরপুত্র কেভিন পিটারসেন। বাইশ গজে যেমন ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন, তেমনই মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও তুমুল সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তিনি।
যৌন কেলেঙ্কারি থেকেও নিস্তার পাননি দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই ইংলিশ ক্রিকেটার। বিগ ব্রাদার খ্যাত সুন্দরী ভ্যানেসা নিম্মোর সঙ্গে তার এক-মাসের রোমান্টিক সম্পর্কের আকস্মিক ইতি ঘটে। এরপর থেকেই ব্রিটিশ গণমাধ্যমের সামনে সেই সম্পর্কের বিভিন্ন অন্তরঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে থাকেন ভ্যানেসা।
সেই সূত্র ধরে পিটারসেন যৌনতার ব্যাপারে কতটা মরিয়া, সে কথাও কোনো রাখঢাক না করেই বলে দেন তিনি। জানান, "সেক্সের জন্য মরিয়া ছিল কেভিন। সারাদিনই আমাকে বিরক্ত করত ও। নিশ্চিতভাবেই, ওর এমন আচরণে খুশি ছিলাম না আমি।"
শহীদ আফ্রিদি
আধুনিক ইতিহাসের বিতর্কিত চরিত্রদের তালিকা করতে গেলে ওয়ার্ন, গেইল বা পিটারসেনদের মতো শহীদ আফ্রিদির নামটাও চলে আসবে অনুমিতভাবেই। নানা ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে গণমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন 'লেডি কিলার' খ্যাত এই ক্রিকেটার।
ক্রিকেটীয় জীবনে একবার এক যৌন কেলেঙ্কারিতেও ফেঁসে যান তিনি, যেখানে তার সঙ্গে জড়িত ছিল আরও দুই সতীর্থ খেলোয়াড় – হাসান রাজা ও আতিক-উজ-জামান।
ঘটনাটি ২০০০ সালের। সিঙ্গাপুর সফরের জন্য পাকিস্তান ছাড়ার ঠিক আগে, আফ্রিদি-রাজা-জামান ত্রয়ী ধরা পড়েন এক দল তরুণীর সঙ্গে 'মজা' করতে গিয়ে। যদিও শুরুতে তিন ক্রিকেটার দাবি করেন যে ওই তরুণীরা নিছকই তাদের ভক্ত, তারপরও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয় কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে তাদের বাদ দিতে।
আফ্রিদি তখন এক বিবৃতিতে বলেন, "আমি সন্তুষ্ট যে আমি কোনো ভুল করিনি। তারপরও আমি এই সাজা মেনে নিচ্ছি। আমার ক্যারিয়ারে এটি একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।" পাশাপাশি এই অলরাউন্ডার দাবি করেন, ভবিষ্যতে যেন তারা আরও সচেতন হন তা নিশ্চিত করতেই বোর্ড এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হার্শেল গিবস
হার্শেল গিবসকে ছাড়া এই তালিকা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। মজার ব্যাপার হলো, আগের চার ক্রিকেটার মতো 'অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে' যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়াননি তিনি। বরং নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিতর্ককে। 'টু দ্য পয়েন্ট' নামক আত্মজীবনীতে অকপটে মেলে ধরেছেন নিজের যৌন জীবনের বৃত্তান্ত।
ক্রিকেট দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে তার যে ঘটনাটি, সেটির পটভূমি ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। গিবস লিখেছেন,
"আমি স্রেফ নিশ্চিত ছিলাম যে আমি সেঞ্চুরি পেতে চলেছি। সম্ভবত বিছানায় আমার পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সে কাজ করত হোটেলে। সেখানেই তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। আমার ধারণা, সে ছিল আমার লাকি চার্ম।"
এছাড়া আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লেখেন, "দুটি বিছানা, দুজন ক্রিকেটার, এবং তিনজন নারী। তাদের মধ্যে একজন অবশ্য খুব একটা আগ্রহী ছিল না। সে কেবলই বিছানায় শুয়ে ছিল। এতে অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি, কারণ সবার জন্যই যথেষ্ট সুযোগ ছিল। অন্য দুজন মেয়ে অবশ্য পুষিয়ে দিয়েছিল।"
জানিয়ে রাখা ভালো, ক্রিকেট দুনিয়ার যৌন কেলেঙ্কারি কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এই লেখায় আলোচিত তুমুল জনপ্রিয় পাঁচ ক্রিকেটার ছাড়াও, যৌন কেলেঙ্কারিতে জের হয়েছেন আরও অনেকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাকিস্তানের মোহাম্মদ আকরাম ও সাকলাইন মুশতাক, নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল টাফি, ইংল্যান্ডের মাইক গ্যাটিং, অস্ট্রেলিয়ার নাথান লায়ন ও ভারতের মোহাম্মদ শামি।