মুখ দিয়ে ছবি এঁকে আফগান কিশোরীর বিশ্বখ্যাতি
হাত-পা থেকেও নেই। নিজ দেশে নারী ও প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিয়ত নিপীড়িত ও অবহেলিত হতে দেখেছেন। তবু হার মানেননি। তুলি কামড়ে ধরে, মুখের সাহায্যেই এঁকে চলেছেন একের পর এক চিত্রকর্ম। সেইসব ছবিতে ফুটে উঠেছে অবরুদ্ধ সময়, বিদেশি সৈনিক, প্রাকৃতিক পরিবেশ- কত না দৃশ্য! বলছি রোবাবা মোহাম্মদীর কথা।
শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে স্কুলে ঠাঁই হয়নি রোবাবার। ছোটবেলা থেকেই ঘরে বসে, নিজে নিজে মুখ দিয়ে ছবি আঁকতে শিখেছেন। এখন তিনি ১৯ বছরের কিশোরী। আন্তর্জাতিক শিল্পবাজারে বিক্রি হয় তার ছবি। বিদেশে হয় প্রদর্শনীও। এরই মধ্যে নিজেই একটি শিল্পকেন্দ্র খুলেছেন। উদ্দেশ্য- সেখানে অন্য প্রতিবন্ধী চিত্রশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। খবর এএফপির।
রোবাবা জানান, তিনি মূলত আফগান নারী, নারীর ক্ষমতা ও সৌন্দর্য, পেইন্টিংয়ের সৌন্দর্য ও ভালোবাসার ছবি আঁকতেই পছন্দ করেন। ছবিতে নারীর চেহারা নিয়ে খেলা করতে ভালো লাগে তার।
রাজধানী কাবুলে গত বছর খোলা রোবাবার শিল্পকেন্দ্রটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করেই এর খরচ যোগান তিনি।
২০১৫ সালের এক জরিপে জানা গেছে, দেশটির সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ লাখই প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে ১০ হাজার জন ভূমি মাইনের শিকার হয়ে ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সদয় নয় আফগান সমাজ।
অন্যদিকে, রোবাবা জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধিকতার কারণে কোনো স্কুলই আমাকে ভর্তি করায়নি। তবে ভাই-বোনেরা যেন পড়াশোনা করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখছি।’
স্কুলে না পড়লেও পরিবারের সহায়তায় লিখতে-পড়তে শিখেছেন তিনি। এখন সময় পেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশও করেন।
তার বড় ভাই আলী মোহাম্মদী বলেন, ‘রোবাবা যেভাবে অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রেরণা হয়ে উঠেছে, তার জন্য আমরা গর্বিত।’
আফগানিস্তানকে অনেকেই নারীদের জন্য সবচেয়ে বাস অনুপযোক্ত দেশ হিসেবে গণ্য করে। রোবাবা বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হতে পারি না বলে এক সময় খুব অসহায় লাগত। আত্মীয়রা বেড়াতে এসে ফিসফিস করে বলতেন, বাবা-মায়ের কোনো পাপের কারণেই নাকি আমার এ অবস্থা!’
আফগান ইনডিপেনডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশনের কমিশনার বেনাফসা ইয়াকুবি স্বীকার করেছেন, কুসংস্কারের কারণেই এমন ধারণা সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
রোবাবা অবশ্য এমন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সামলাতে শিখেছেন। তার কাছে ছবি আঁকাটা মানসিক চাপ থেকে মুক্তির এক দারুণ উপায়। নিজের আঁকা একটি লম্বা গাছের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ছবিটা আঁকতে খুব কষ্ট হয়েছে। আঁকতে আঁকতে কয়েকবার কেঁদেও ফেলেছি। ছবিটাতে আলো-ছায়ার খেলা করাতে গিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে। বাবা সারাক্ষণ আমাকে সাহস জুগিয়েছেন।’
রোবাবার শিল্পকেন্দ্রের ছাত্র, ২২ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী তরুণ নূর আহমাদ আজিজি জানান, ‘আমি পেশাদারিভাবে ছবি আঁকা শিখতে চাই, যেন একদিন রোবাবার মতো বিখ্যাত হতে পারি।’