মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা শেষ করে জিয়া দেশে ফিরে হলেন উদ্যোক্তা
মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান মালয়েশিয়ার (ইউসিএসআই) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে দেশে চলে আসেন। দেশে ফিরে এসে শুরু করেন 'এস্ক্রো স্টাইল' (Escrow Style) নামে এক ই-কমার্স প্লাটফর্ম। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেন তার এই ই-কমার্স ব্যবসা।
শুরুতে মালয়েশিয়া থেকে নারী ও শিশুদের পোশাক আমদানি করে বাংলাদেশের ক্রেতাদের কাছে অনলাইনে বিক্রি করতেন। তবে মালয়েশিয়া থেকে শিপিং খরচ বেশি এবং পণ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় অন্য উপায়ও খুঁজতে থাকেন।
পরবর্তীকালে চীনের দুই বন্ধুর পরামর্শে ও তাদের সহযোগিতায় সেদেশ থেকে পণ্য আমদানি শুরু করেন জিয়া। সেই থেকে চীন হতে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে এবং দেশে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছে তা ডেলিভারি করে আসছে তার প্রতিষ্ঠান।
শুরুতে একটু জটিলতা থাকলেও পরে ব্যবসাটির প্রসার বাড়তে থাকে। কারণ হিসেবে জিয়াউর রহমান জানান, ভালো মানের পণ্য বিক্রি এবং গ্রাহকদের ভালো সেবা প্রদান করাই তার উদ্দেশ্য। 'একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজের জন্য কাজ করেন না; বরং কাজ করেন সমাজ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য,' মন্তব্য করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
ইতোমধ্যেই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সদস্যপদ লাভ করেছে 'এস্ক্রো স্টাইল'। ২০২০ সাল থেকে মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ই-ক্যাবের এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ এবং স্টার্টআপ স্ট্যান্ডিং কমিটির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০২০ সালে ই-ক্যাব এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ এবং স্টার্টআপ স্ট্যান্ডিং কমিটির আয়োজনে দীর্ঘ ৯০ দিনের ট্রেনিংয়ের মডারেটর হিসাবে কাজ করেন মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।
এছাড়াও তিনি অ্যাগ্রো বেসড কোম্পানি 'ই-ফার্মার বিডি'র সঙ্গেও যুক্ত। ই-ফার্মার বাংলাদেশ লিমিটেড প্রান্তিক কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, সাপ্লাই চেইন ও ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে কাজ করছে।
বলে রাখা ভালো, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছিলেন জিয়া। সেখানে পড়াশোনা করা অবস্থায় ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা করেন বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএসএ)। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
এই সংগঠন প্রতিষ্ঠাতা করার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের খেয়াল রাখা। তারা যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন, সবাই মিলে একটা পরিবারের মতো থাকেন এবং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন- সেই মূলনীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া গাইডলাইন মেনে সংগঠনটি সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।
এছাড়া জিয়াউর রহমান প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে 'স্টুডেন্ট কাউন্সিল অব ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
এরপর পুরো মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা করেন "'বাংলাদেশি স্টুডেন্টস' অর্গানাইজেশান মালয়েশিয়া- বিএসওএম''। তিনি এই সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসেও যেন জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, সেজন্য সংগঠনটি বিভিন্ন সেমিনার, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ক্যারিয়ার বিষয়ক লাইভ প্রোগ্রাম, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের অবদান ওই দেশে তুলে ধরতেও বিএসওএম কাজ করছে।
-
প্রবাস থেকে বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল: [email protected]