মালা, তুমি কে?
ঢাকেশ্বরী শাড়ি আর পিসি চন্দ্রের ঝুমকো কানের দুল। 'ভালোবাসি তোমায়' অ্যালবামে এ দুটো জিনিস দিয়ে মালা'র সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত। ফিতার ক্যাসেট আর সিডির চাকতি পেরিয়ে সে গান আজও আমাদের মুঠোফোনে বাজে। কিন্তু কে এই মালা?
মালা মৌলিক গান নয়- আগেই জানিয়েছেন অঞ্জন। ভিনদেশি গানকে স্বাদু উপমহাদেশীয় মোড়কে গেয়েছিলেন এই শিল্পী। তাই 'মালা' কেবল পিটার সারস্টেড নামক বিদেশি গায়ক থেকে ধার করা অনুপ্রেরণা নয়। এ গানের ভাগীদার অঞ্জন দত্তও।
পিটার সারস্টেডের 'হোয়্যার ডু ইউ গো টু মাই লাভলি' গানটির বাংলা সংস্করণ 'মালা'। পিটার গেয়েছিলেন মেরী নাম্নী এক তরুণীকে নিয়ে, যার বাস ছিল ইতালির কোন এক বস্তিতে। দরিদ্র পরিবার থেকে আসা মেরির একদিন বনেদিপাড়ায় ঠাই হয়েছিল। সমাজের উঁচুতলায় যার গতায়াত। তাকে ঘিরে রকমারি আয়োজন। কিন্তু এত শুভার্থীর ভিড়েও অবচেতনে মেরী ফিরে যায় তার অচ্ছুত অতীতে। কোন এক পুরনো প্রেমিকের স্মৃতি রোমন্থনে।
লোকমুখে শোনা যায়, পিটার অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সোনালি যুগের নায়িকা সোফিয়া লরেনের জীবন থেকে। সেই সোফিয়াই হয়তো মেরী রুপে গানে যায়গা করে নিয়েছে। তবে এসব কোন কিছুরই প্রমাণ নেই।
১২ই মে চলে যাওয়া মালা কি তবে মেরী'র বাঙালি ছায়া সংস্করণ? নাকি অঞ্জনের জীবনে এমন কেউ সত্যিই ছিলেন? গায়ক এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। উৎসাহী পাঠক চাইলে অঞ্জন দত্ত'র আত্নকথন "অঞ্জনযাত্রা" পড়ে দেখতে পারেন। সাজ্জাদ হুসাইন এর লেখা বইটিতে অঞ্জন অকপটে বলেছেন তাঁর অতীতের গলি-ঘুপচি সম্পর্কে। সেখানে মালা কে নিয়ে কোন আভাস পেলেও পেতে পারেন।
প্রায় চব্বিশ বছর বাদে গানে উল্লেখিত চরিত্র আর প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গেছে। ডিজিটাল মিডিয়ার এই যুগে মালা কি আজও সানন্দা ম্যাগাজিনের পাতা ছেঁড়ে? মধুবালার মত কথা বলা মালার বাড়িতে কফি খাবার সময় হবে কি ইমরান খানের? আজ তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। চাইলেই তো দমদমে মালার বাড়িতে গিয়ে কফির খায়েস মেটানো যায়না!
নভেম্বর মাস এলেই যেমন গানস এন্ড রোজেস এর "নভেম্বর রেইন" শোনার হিড়িক পরে, ১২ই মে না হয় অঞ্জনের মালা বাজবে। 'জন্মদিনের' তোড়া তোড়া ফুল পাক আর না পাক, মালা পেয়েছে অসংখ্য কাল্ট ভক্ত!