মহামারিকালে যেখানে ভ্রমণ করছেন চীনের বিত্তশালীরা
করোনাভাইরাস মহামারির মূল ধাক্কা যে চীন থেকেই এসেছে, তা এখন আর কারও জানতে বাকি নেই। মহামারিকালে আরও অনেক দেশের মতো চীনেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ করতে না পারলেও চীনাদের নিজ দেশে ঘুরে বেড়ানোর জায়গার অভাব নেই। বিশেষত, ধনাঢ্য চীনা ভ্রমণকারীরা তাদের অবসর সময় বেশ আকর্ষণীয় সব স্থানেই কাটাচ্ছেন।
সানিয়া সমুদ্র সৈকতের বালুকাময় তীর, ইউনান প্রদেশের পাহাড় কিংবা বিশালাকৃতির পান্ডা অভয়ারণ্য- সবখানেই ছিল তাদের আনাগোনা। ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবরের 'গোল্ডেন উইক' সামনে রেখে আরও একবার দেশীয় পর্যটন শিল্পের অভাবনীয় বিকাশ দেখবে চীন।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে এক মাসের কঠোর লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ দিয়েছিল চীন। এর ফলে গত জুলাইয়ের পর ২৩ আগস্টই প্রথমবারের মতো স্থানীয় পর্যায়ে নতুন কোনো কোভিড রোগী ধরা পড়েনি দেশটিতে।
চীনা পর্যটন একাডেমি আশা করছে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ট্রিপ পাবে তারা। অন্যদিকে, চীনা রিসার্চ ফার্ম হুরুন রিপোর্ট দেশটির ধনী ব্যক্তিদের উপর এক জরিপ পরিচালনা করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরে দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের আগ্রহ আগের বছরের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়াও, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ লোক জানিয়েছেন, তারা ভ্রমণ খাতে আরও বাজেট বাড়াতে ইচ্ছুক।
চীনের মতো একটি বিশাল দেশে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা, খাদ্য ও সংস্কৃতিতে বহু পার্থক্য রয়েছে, যা দেশটিকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। তাই চীনা নাগরিকদের জন্য তাদের ভ্রমণ গন্তব্য বেছে নেওয়া বেশ সহজ।
কোথায় ভ্রমণ করছেন তারা?
চীনের হাইনান দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে জেগে ওঠা এক প্লেগ্রাউন্ড- 'সানিয়া'। এটি 'হাওয়াই অব চীন' নামেও পরিচিত। হুরুন রিপোর্ট বলছে, বিত্তশালী চীনাদের কাছে 'সানিয়া' সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর একটি। বিলাসবহুল রিসোর্ট ও আন্তর্জাতিক নানা ব্র্যান্ডে পরিপূর্ণ এই দ্বীপে আরাম-আয়েশের সব সুবিধাই রয়েছে।
সম্পদশালী চীনাদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ইউনান। প্রাচীন শহর, বন ও গাছপালায় শোভিত এই পাহাড়ি অঞ্চল অনেকেরই খুব পছন্দের।
তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে যথাক্রমে রয়েছে তিব্বত ও জিনজিয়াং। চলতি বছরের শুরুর দিকে জিনজিয়াংয়ে জোরপূর্বক শ্রম ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এইচ অ্যান্ড এম ও নাইকির মতো ব্র্যান্ডগুলো। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি জিনজিয়াংয়ের পর্যটন শিল্পের সামান্য প্রসার ঘটেছে।
অন্যদিকে, হিমালয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, প্রাচীন মঠ ও সুস্বাদু খাবারের জন্য পর্যটকদের কাছে তিব্বত বরাবরই জনপ্রিয়।
বিশাল জায়গাজুড়ে পান্ডা অভয়ারণ্য, ন্যাশনাল পার্ক ও আঞ্চলিক রান্নার খ্যাতির কারণে সিচুয়ান প্রদেশও রয়েছে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায়।
কেন এসব গন্তব্যে যাচ্ছেন পর্যটকরা?
খোলামেলা জায়গায় ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চীনে। তাই বর্তমানে এসব পর্যটন কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।
ট্রিপ ডট কম গ্রুপের মুখপাত্র ওয়েন্ডি মিন জানান, সাংহাই ডিজনি, বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ শহর এবং চীনের মহাপ্রাচীর দেখার জন্যই সবচেয়ে বেশি বুকিং দিয়েছেন গ্রাহকরা।
শুধু তাই নয়, চীনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়। তাই প্রিয়জনকে নিয়ে সময় কাটাতে বা দুর্দান্ত ফটোগ্রাফির জন্য এই স্থানগুলোতে যাওয়াই যায়।
বিত্তশালী চীনা নাগরিকরা শুধু যে তাদের তাদের ভ্রমণ গন্তব্য নির্ধারণেই বৈচিত্র্য এনেছেন, তা নয়; তারা ভ্রমণের উপায়গুলোতে ভিন্নতা এনেছেন। বিভিন্ন ধরনের বাহনে করে তারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছাচ্ছেন।
সাংহাই ও গুয়াংডনের মতো অঞ্চলগুলোতে পর্যটকরা নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে আসেন। আবার তরুণরা প্রায়ই বিলাসবহুল বাহনে চড়ে রোড ট্রিপ দিয়ে থাকেন এবং ব্যয়বহুল সব ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডে ক্যাম্পিং করেন।
অন্যদিকে, হাইনান দ্বীপে অবকাশযাপনের ক্ষেত্রে ইয়টে করে ঘুরে বেড়ানো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ধনী চীনা নাগরিকরা যখন দেশের অভ্যন্তরেই আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত, তখন বিদেশ ভ্রমণের চাহিদাও একইসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বর্তমান বিধিনিষেধের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় চীনের পর্যটন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো।
-
সূত্র: সিএনএন