মঙ্গল থেকে জীবিত নাও ফিরতে পারেন: ইলন মাস্ক
মানবজাতির মঙ্গলে গিয়ে বাস করা উচিত- এই ধারণার প্রচারক হিসেবে ইলন মাস্কের চাইতে বড় আর কেউ নেই। তবুও মাস্ক আরো একবার নিজের স্বপ্নের সাথে সাথে সেটির সম্ভাব্য বিপজ্জনক সত্যের কথাও আবার জানিয়ে দিলেন বিশ্ববাসীকে যে, মঙ্গলে থাকতে গেলে কিছু মানুষ হয়তো মারাই যাবে।
গত সপ্তাহে এক্সপ্রাইজ-এর প্রতিষ্ঠাতা পিটার ডায়মন্ডের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারের সময় মাস্ক বলেন, 'এই যাত্রাটা আরাম আয়েশের নয়। এটা একটা দীর্ঘ যাত্রা এবং আপনি হয়তো আর জীবিত ফিরে আসবেন না।'
তবে তিনি এও জানালেন যে তারা জোর করে কাউকে যেতে বাধ্য করবেন না, শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবীরাই যেতে পারবেন।
বিগত দুই দশক ধরেই মাস্ক তার আন্তঃগ্রহ সম্পর্কিত উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনাগুলোর কথা জানিয়ে আসছেন। তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত এবং আপাতত সফল রকেট কোম্পানি 'স্পেসএক্স' এরই মঙ্গলে মানুষ নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরির কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন বারবার 'স্টারশিপ' নামক যাত্রীবিহীন একটি যান দিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। যদিও প্রতিবারই এটি বিস্ফোরিত হয়েছে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে মাস্ক প্রত্যাশা করছেন যে এই স্টারশিপই একসময় দুঃসাধ্য সেই অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
গেল বছরের আগস্টেই এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে মাস্ক তার এই মঙ্গলগ্রহে যাত্রার সম্ভাব্য বিপদসমূহ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। স্পেসএক্সের একেবারে প্রাথমিক মিশনগুলোতে মঙ্গলে যাওয়ার সময় প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আগে-পরে মানুষের মহাকাশযাত্রার নানা দুর্ঘটনার উদাহরণ টেনেই এই আশঙ্কা করা হয়। যেমন- বিগত শতকে নাসার অ্যাপলো প্রোগ্রামের গ্রাউন্ড টেস্ট করতে গিয়ে আগুন লেগে তিন নভোচারীর মৃত্যু হয়। কলাম্বিয়ার স্পেস শাটল যুগে এবং চ্যালেঞ্জার বিপর্যয়ের সময়ে আরো ১৪ জন নভোচারীর মৃত্যু হয়।
এর আগে মাস্ক নিজে এক দিন মঙ্গলগ্রহে থাকার ইচ্ছার কথা জানালেও তিনি নিজে সেখানে বসতি গড়বেন কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
তবে প্রথম মঙ্গল অভিযান সম্পর্কে ব্রিটিশ অনুসন্ধানকারী আর্নেস্ট শ্যাকলটনের কথা উল্লেখ করে মাস্ক জানান, 'এটি হবে শ্যাকলটনের অ্যান্টার্কটিকা যাওয়ার মিশনের সময় দেয়া সেই পত্রিকার বিজ্ঞাপনের মত।' শ্যাকলটন ১৯ শতকে প্রথম অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে যাওয়ার ক্রু জড়ো করতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপনে লিখা ছিল, 'তীব্র ঠান্ডা ও অন্ধকার-বিপদের মধ্যে দীর্ঘ, শঙ্কাযুক্ত, কিন্তু কম মজুরির এক যাত্রার সঙ্গী হওয়ার জন্যে লোক চাই। ফিরে আসা থাকবে অনিশ্চিত আর সফল হলে সম্মান ও খ্যাতি থাকবে ভাগ্যে।' শ্যাকলটনের দেয়া সেই বিজ্ঞাপনে ৫০০০ মানুষ উত্তর দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিকেরা এই বিজ্ঞাপনের বৈধতা ও জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপনের জন্য স্পেসএক্সের এই পরিকল্পনা অসংখ্য প্রযুক্তিগত, রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। এদের মধ্য থেকে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়টি হতে পারে- অর্থায়ন। কারণ মঙ্গলে থাকার মত সবকিছুর ব্যবস্থা করতে, উদ্ভাবন করতে স্পেসএক্স এর আরো বহু বছর লেগে যাবে।
তাছাড়া মানুষের থাকার পক্ষে মঙ্গলগ্রহ অত্যন্ত প্রাণঘাতী একটি স্থান। সেখানে রেডিয়েশন এক্সপোজার দ্বারা মানুষ মারা যেতে পারে। বায়ুমন্ডলীয় চাপের দিক থেকে গ্রহটির ভূপৃষ্ঠ এত বেশি নিচু যে একজন মানুষের রক্ত ফুটতে শুরু করবে যদি সেসব উপাদানের সংস্পর্শে আসে। তার মানে দাঁড়ায় এই যে, যারা মঙ্গলে থাকতে যাবেন তাদের এয়ার টাইট কোনো ঘরের ভেতরে থাকতে হবে অথবা সারাক্ষণ ভারি, বেঢপ একটা স্পেসস্যুট পরে থাকতে হবে। নাসা ও অন্যান্যরা এখনো মঙ্গলে টিকে থাকার ও বাস করার সম্ভাব্য উপায় খুঁজতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো কোনো সঠিক পথের হদিস মেলেনি।
তবুও মাস্ক এবং তার স্পেসএক্স এই অভিযানের পথে আগ্রাসীভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় রকেট প্রযুক্তি বানানো শুরু করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন যে মঙ্গলে বসতি স্থাপন আমাদের মানবজাতির দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার জন্য সংকটময় হবে। গেল বছর মাস্ক ২০২৬ এর মধ্যেই মঙ্গলে নেওয়ার প্রথম দল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য এই পৃথিবী একসময় বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতেও পারে। তাই বিকল্প একটি ব্যবস্থা তৈরি করে রাখাই হবে মানবসভ্যতার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়।
- সূত্র-সিএনএন