ভ্রমণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ৯ শহর

বিশ্বভ্রমণ অনেক ক্ষেত্রে সুটকেস গুছিয়ে বিমানে চড়ে বসার মতোই সহজ ব্যাপার। তবু বিশ্বভ্রমণে কিছু ঝুঁকি তো থাকেই!
আপনার নিজের শহরে যেমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলো আপনি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন, এই পৃথিবীতে তেমন বহু জায়গা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অপরাধের কারণে সাধারণত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন পর্যটকেরা।
তবু বিশ্বে এমন বেশ কিছু শহরও আছে, যেগুলো ভয়ানক বিপজ্জনক হলেও পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত ছুটির গন্তব্য।
চলুন, জানা যাক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক ৯টি শহরের কথা। যেন আপনি সেই শহরগুলোর কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করে যদি থাকেন, সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই সতর্ক হতে পারেন:

সিউদাদ জুয়ারেজ, মেক্সিকো
প্রতি বছর মেক্সিকো ভ্রমণ করেন লাখ লাখ পর্যটক। তবে সহিংসতা ও সংগঠিত অপরাধ জায়গাটাকে পর্যটকদের জন্য পরিণত করেছে ঝুঁকিপূর্ণ এক গন্তব্যে। মাদক পাচার নিয়ে মেক্সিকোর নাম সবার কাছেই সুপরিচিত এবং সিউদাদ জুয়ারেজ মেক্সিকোর সবচেয়ে সহিংস শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নেন। এ কারণে অনেক অপরাধেরই কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না সেখানে।

রিও ডি জেনেইরো, ব্রাজিল
ব্রাজিলের অনেক শহরেই অপরাধের হার খুব বেশি; তবে সেগুলোর কোনোটিই রিও ডি জেনেইরোর চেয়ে বিপজ্জনক নয়। তবু রিও ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। প্রতি বছর ১২ লাখ পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এ শহর।
রিও আসলে এক দশক আগের তুলনায় এখন বেশ নিরাপদ, তবে পথে-ঘাটে হওয়া অপরাধ এখনো শহরটির অনেক এলাকায় দেখা যায়, বিশেষ করে রাতে। সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এর সাথে যুক্ত বিক্ষোভ একটি উদ্বেগের বিষয়। তাই সেখানে ভ্রমণ করার আগে ভ্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা যাচাই করে নেবেন।
রেইনফরেস্ট ও সাদা বালুর সৈকত উপভোগ করা দারুণ ব্যাপার বলে রিও ডি জেনেইরোতে গেলে সাধারণ বিচার-বুদ্ধির ব্যবহার এবং যুক্তিসঙ্গত সতর্কতা অবলম্বন করতে যেন ভুলবেন না।

কারাকাস, ভেনেজুয়েলা
কারাকাস বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর। বাসিন্দাদের জন্য ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে প্রতিনিয়ত সহিংসতা আর হানাহানির সম্মুখীন হচ্ছে ভেনেজুয়েলার রাজধানী।
পথে-ঘাটে হওয়া অপরাধ, যেমন চোরাচালান, চুরি ইত্যাদি সেখানে সাধারণ বিষয়; তবে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যা ও অপহরণ শহরটাকে বেশিরভাগ পর্যটকের জন্য একটি অবাঞ্ছিত গন্তব্য করে তোলে।
তবু ব্যাকপ্যাকাররা কম খরচে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের নেশায় ক্রমাগত সেখানে ভ্রমণ করেন। ভেনেজুয়েলার অন্যান্য অনেক শহরেও অবিশ্বাস্যভাবে উচ্চ অপরাধের হার রয়েছে, আর রাজধানীতে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খুনের হার। এ কারণে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানের তালিকায় শীর্ষস্থান এ শহরের।

গুয়াতেমালা সিটি, গুয়াতেমালা
যদিও গুয়াতেমালা ক্যারেবীয় অঞ্চলে একটি মধ্য-আমেরিকান রাষ্ট্র, যা অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করে; তবু এই রাষ্ট্র মাদককেন্দ্রিক সহিংসতায় ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। সেইসঙ্গে মানব ও অস্ত্রপাচার তো রয়েছেই! সেখানে হত্যার হার ব্যাপক এবং সমাধানের হার কম।
অন্যান্য সাধারণ অপরাধ, যেমন রাস্তায় ডাকাতি, বাস লুট আর গাড়ি ছিনতাই তো নিয়মিত দৃশ্য! তাই আপনি যদি গুয়াতেমালা ভ্রমণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে নিরাপদে থাকতে গুয়াতেমালা সিটি এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।

বাগদাদ, ইরাক
বোমা হামলা, গুলিবর্ষণ এবং অন্যান্য সহিংসতা ইরাকে যেন খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে গত কয়েক দশকে। এই দেশটি অনেক বছর ধরে আমেরিকানদের জন্য 'ভ্রমণ নিষেধ' তালিকায় রয়েছে এবং বাগদাদ ইরাকের বিপজ্জনক জায়গাগুলোর অন্যতম। এটি আরেকটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যা বিদ্রোহী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সহসাই দেশটির নিরাপদ হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।
যেহেতু বাগদাদে সহিংসতা ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসবাদের প্রাদুর্ভাবের ফলাফল, তাই এটা এমন কোনো জায়গা নয়, যেখানে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া কারও ভ্রমণ করা উচিত।

সান পেদ্রো সুলা, হন্ডুরাস
বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস স্থানের স্বীকৃতি ধরে রেখেছে এই শহর। অনেক সূত্রমতে, বিশ্বে সর্বোচ্চ খুনের হার এই শহরে। প্রতি ১ লক্ষ মানুষের ভেতর ১৬৯ জন হত্যার শিকার হয় এখানে।
অস্ত্রপাচার এই শহরের আরেকটি বড় সমস্যা এবং শহরজুড়েই প্রচলন রয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের। বেশিরভাগ পর্যটকই শহরটিতে শুধু ছিনতাই ও চুরি মতো সুযোগসন্ধানী অপরাধের সম্মুখীন হয়। মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এবং সোনালী সৈকত এখানে উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে; তবে এই শহরে গুরুতর সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে পর্যটকদের।

কাবুল, আফগানিস্তান
কাবুল অনেক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর। এটি এখনো একটি যুদ্ধক্ষেত্র, যদিও মার্কিন সৈন্যরা সেখান থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবু বোমা হামলাসহ সন্ত্রাসী হামলা এখনো সাধারণ বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে সেখানে।
বাগদাদের মতো কাবুলও এমন একটি শহর, যেখানে যে কোনো সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুসারে ২০১৯ সালে আফগানিস্তান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ।

কেপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা
দারিদ্র্য এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণে কেপ টাউন অত্যন্ত উচ্চ সহিংস অপরাধের হারে ভুগছে। এর বেশিরভাগই মাদক এবং সংগঠিত সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
২০১৮ সালে ১৩০টি ভিন্ন ভিন্ন গ্যাংয়ের আনুমানিক ১ লক্ষ লোক ছিল শহরটিতে। যদিও কেপ টাউনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিকভাবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সুনাম থাকার কারণে অনেক পর্যটক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি আকৃষ্ট হযন; তবু এটি বিপজ্জনক জায়গা।
এই শহরে ভ্রমণ উপভোগ করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হচ্ছে বিপজ্জনক এলাকাগুলো এড়িয়ে চলা এবং রাতে একা ভ্রমণ না করা, বিশেষ করে যদি আপনি নারী হয়ে থাকেন।

আকাপুলকো, মেক্সিকো
বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন এই শহরকে একটি নিরাপদ ও বিলাসবহুল রিসোর্ট এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। যদিও আকাপুলকোতে পর্যটন এখনো অনুমোদিত; তবে সংগঠিত সহিংসতা ও মাদকসংক্রান্ত হত্যাকাণ্ডের কারণে পর্যটক ও স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য এটি একটি বিপজ্জনক এলাকায় পরিণত হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে আকাপুলকোতে পর্যটন ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, এই শহর মেক্সিকোর 'খুনের রাজধানী' নামে পরিচিত- বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ খুনের হার (প্রতি ১ লক্ষ জনের মধ্যে ১৪২ জন) শহরটিকে ভ্রমণের জন্য অন্যতম বিপজ্জনক স্থানে পরিণত করেছে।
আকাপুলকোতে আসা ব্যক্তিদের পরামর্শ দেওয়া হয়, তারা যেন রিসোর্টের নিরাপত্তা ছেড়ে না বের হন; কেননা, বেশিরভাগ অপরাধই রিসোর্টের আশেপাশের এলাকাতেই ঘটে।
- সূত্র: ম্যাপ কোয়েস্ট ট্রাভেল