ব্যবসা করতে হলে যে ৪ বই পড়তে হবে
দিনের শেষে সন্ধ্যা নেমে আসার চমৎকার মুহূর্তটিতে অ্যাডাম ব্রটম্যানের হাতে প্রায় সবসময়ই বই থাকতে দেখা যায়।
স্টারবাকসের সাবেক চিফ ডিজিটাল অফিসার ও গ্লোবাল রিটেল অপারেশনের ইভিপি ব্রটম্যানের ভাষায়, "আমি পড়তে ভালোবাসি এবং যখন সময় পাই, আমি পড়ার চেষ্টা করি।" মার্কিন ভিত্তিক টেলিভিশন বিজনেস নিউজ চ্যানেল সিএনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
ব্রটম্যান প্রায় এক দশক স্টারবাকসের রিঅ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের মোবাইল পেমেন্ট, অনলাইন ও মোবাইল অর্ডারের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তিনিই দেখতেন। ২০১৮ সালে স্টারবাকস ছেড়ে আসেন ব্রটম্যান। এরপর সিয়াটেল ভিত্তিক স্টার্টআপ ব্রাইটলুমের সিইও হিসেবে যোগদানের আগে তিনি 'জে ডট ক্রুয়ের' প্রেসিডেন্ট ও সহ-সিইও হিসেবেও অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ব্রটম্যান ও তার ছোট্ট দল ব্রাইটলুমে ছোট পরিসরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিজিটাল অর্ডারিং ও ডিজিটাল পেমেন্টসহ পণ্য বিপণনে সহায়ক নানা ধরনের সফটওয়্যার তৈরির কাজ করে চলেছে। তিনি তার এই মিশনকে 'লাইফ'স ওয়ার্ক' অর্থাৎ 'জীবনের কাজ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ব্রটম্যান জানান তার পুরো কর্মজীবনজুড়ে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশনা তিনি পেয়েছেন বই থেকে। ব্রটম্যানের ভাষায়, "আমি প্রায় একচেটিয়াভাবেই নন-ফিকশন বিজনেস বই পড়ি।"
চলুন জেনে নেওয়া যাক তার প্রিয় বইগুলোর একটি তালিকা:
'দ্য অ্যান্টিসোশ্যাল নেটওয়ার্ক'
এই বইটি লিখেছেন মার্কিন লেখক বেন মেজরিচ।
মেজরিচ ব্রটম্যানের প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন। তিনি প্রযুক্তি, অর্থ ও ঝুঁকি গ্রহণের মধ্যে কীভাবে সাফল্য খুঁজে নিতে হয়, সে বিষয়ে লিখছেন অন্তত ২০টি বই।
'দ্য অ্যান্টিসোশ্যাল নেটওয়ার্ক' বইটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ওয়ালস্ট্রিটবিটস-এর সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা এই বইটিতে রেডিটের একদল বেসরকারি বিনিয়োগকারী ও ইন্টারনেট ট্রলারদের গল্প বলা হয়েছে; তারা ওয়ালস্ট্রিটের সবচেয়ে বড় হেজ ফান্ডগুলোর একটি দখল করে নিয়েছিলন।
বই সম্পর্কে ব্রটম্যান বলেন, "মেজরিচের বইগুলোকে মূলত ডেভিড অ্যান্ড গোলিয়াথের বইয়ের আধুনিক সংস্করণ বলা যেতে পারে।
"আমার 'দ্য অ্যান্টিসোশ্যাল নেটওয়ার্ক' পছন্দ করার কারণ হল, এ বই থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি এবং এটি কেবল শিক্ষামূলকই নয় বরং এখানে সিনেমাটিক প্লটও রয়েছে। ফলে বইটি নিয়ে বসলে পৃষ্ঠা উল্টানোর আগ্রহ জাগে," তিনি আরও বলেন।
'দ্য সেভেন হ্যাবিটস অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিপল'
বইটি লিখেছেন মার্কিন শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, বক্তা ও লেখক স্টিফেন কোভি। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত এই ক্লাসিক বইটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে একটি। বইটি দেশের রাষ্ট্রপতি ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সিইওদের বুকশেলফে দেখা যায়।
সময় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ইতিবাচক চিন্তাভাবনাসহ আরও অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কীভাবে আপনি ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে পারেন, ধাপে ধাপে সেই পদ্ধতির আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।
ব্রটম্যান বলেন, "কোভির বই থেকে পাওয়া জীবনদর্শন ও নীতি আমি অনুসরণ করে চলি; জীবনের সবস্তরেই আমি সেগুলো ব্যবহার করেছি।"
কোভির বই থেকে পাওয়া ব্রটম্যানের সবচেয়ে প্রিয় দর্শনটি হল, 'প্রথমে বুঝতে চেষ্টা করুন, তারপর নিজেকে বোঝাতে।"
'সু ডগ'
এই বইটি লিখেছেন ৮৩ বছর বয়সী আমেরিকান বিলিয়নিয়ার ফিলিপ হ্যাম্পসন নাইট। তিনি বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকির সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
কীভাবে তিনি নাইকিকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়ে পরিণত করেছিলেন, মূলত সেই স্মৃতিকথাই বর্ণনা করেছেন তিনি বইটিতে।
বইটি সম্পর্কে ব্রটম্যান বলেন, "আপনি যদি অনুপ্রাণিত হতে চান, তবে এই বইটি পড়তে পারেন। এখানে সত্যিই উদ্যোক্তাদের সংকল্প ও দৃষ্টিভঙ্গির এক অবিশ্বাস্য গল্পের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।"
১৯৬৩ সালে নাইট তার সাবেক ইউনিভার্সিটি অফ ওরেগনের ট্র্যাক কোচ বিল বোওয়ারম্যান সহযোগে প্রতিষ্ঠা করেন 'ব্লু রিবন স্পোর্টস' (নাইকির পূর্বসূরি) নামে একটি কোম্পানি। ব্যবসায় শুরুর প্রথম দিনগুলোতে তিনি শহরে ঘুরে ঘুরে গাড়ির ট্রাঙ্কে করে জুতা বিক্রি করতেন।
২০১৬ সালের এক সাক্ষাৎকারে সিএনবিসি-কে নাইকির এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, তার জীবনের সবচেয়ে মজার ঘটনা হল নাইকি প্রতিষ্ঠা করা। অনেকেই তার কোম্পানি পরিচালনার দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল; আবার অনেকেই তার স্বপ্নকে ছোট করে হাসাহাসি করতো।
নাইট বলেন, "আমরা জানতাম যে আমরা ব্যর্থ হতে পারি, আমরা ভাবতে পারিনি যে আমরা সত্যিই এটি করতে পারবো।"
দুই প্রতিষ্ঠাতার মাঝে সম্পর্কের ব্যাপারে নাইট বলেন, "আমরা যা করছিলাম তা করতে আমরা পছন্দ করতাম এবং আমরা একে অপরকে ভালবাসতাম।"
'পুট ইউর হার্ট ইনটু ইট: হাউ স্টারবাকস বিউল্ট আ কোম্পানি ওয়ান কাপ অ্যাট আ টাইম'
বইটি লিখেছেন মার্কিন ব্যাবসায়ী ও লেখক হাওয়ার্ড শোল্টজ।
স্টারবাকসে চাকরি পাওয়ার আগেই শোল্টেজের স্মৃতিকথা পড়েছিলেন ব্রটম্যান।
সিয়াটেলের একটি সাধারণ কফির দোকান থেকে স্টারবাকসকে কীভাবে শোল্টজ বিশ্বের বৃহত্তম কফিহাউস চেইনশপে পরিণত করলেন, মূলত সেই স্মৃতিকথারই বর্ণনা দিয়েছেন তিনি বইটিতে। এখানে একটি মজার ঘটনার উল্লেখও করেছেন শোল্টজ। কেনো তিনি বিল গেটসের বাবাকে কোম্পানির ফ্রাঞ্চাইজিতে বিনিয়োগের জন্য রাজি করেছিলেন সেই গল্পেরও উল্লেখ রয়েছে বইটিতে।
ব্রটম্যান বলেন, "কীভাবে তিনি এই কাজ করেছিলেন সেই ব্যাখ্যায় যাননি হাওয়ার্ড; তবে কেন তিনি এটি করেছিলেন শুধু এতটুকুই বলেছেন এবং এই 'কেনো'র ব্যাখ্যা সত্যিই অমূল্য।"
শোল্টজ তার ব্যবসায়িক দক্ষতা ও কাজের নীতির জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। তবে, ব্রটম্যানের দৃষ্টিতে শোল্টজ একজন মহৎ হৃদয়ের মানুষ।
"প্রতিটি কথোপকথন ও সিদ্ধান্তে মানবিকতার ছোঁয়া দেওয়ার এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতা রয়েছে তার (শোল্টজ)," ব্রটম্যান আরও যোগ করেন।
সূত্র: সিএনবিসি