বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে যা জানা প্রয়োজন
প্রযুক্তি উন্নয়নের এ যুগে গ্যাস বা ডিজেলের পরিবর্তে ব্যাটারিতে চলে এমন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। জিএম থেকে ফোর্ড এবং এর বাইরেও বেশ কয়েকটি বড় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি নতুন নতুন মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে ছাড়ছে। চাহিদাও বেড়ে চলেছে এই উন্নত প্রযুক্তির। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী এক দশকের মধ্যেই হয়তো যুক্তরাজ্যে ডিজেল ও পেট্রলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। পরিবেশ সুরক্ষায় উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয় এমন যানবাহনের সংখ্যা কমানোর চিন্তা শুরু করেছে। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা-অসুবিধা নিয়েও জনমনে উঠেছে নানান প্রশ্ন।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই গাড়ির সুবিধা-অসুবিধাগুলো-
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
বৈদ্যুতিক গাড়ির একটি বড় সুবিধা হল, এটি গ্যাস ও তেলচালিত গাড়ির তুলনায় পরিবেশের অনেক কম ক্ষতি করে। এই গাড়ি থেকে পরিবেশে কার্বন ও ধোঁয়া নির্গমন হয় অনেক কম। এছাড়া পেট্রল নিষ্কাশন ও পরিশোধন করতে যে ব্যাপক পরিবেশ দূষণ হয়, সেটিও এড়িয়ে চলে বৈদ্যুতিক গাড়ি।
দূরযাত্রা
বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এক দশক আগেও যেখানে বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো একবার চার্জে মাত্র ৭০ মাইল দূরত্ব চলতে পারত, এখন বেশিরভাগ গাড়ি ২০০ মাইলেরও বেশি চলতে পারে।
নিত্যনতুন মডেল
আগে হাইব্রিড বা বৈদ্যুতিক গাড়ির কথা ভাবলে শুধু প্রায়াস বা টেসলার ছবিই চোখে ভেসে উঠতো; তবে এখন শেষ হচ্ছে সেই দিন। বড় বড় কোম্পানিগুলো বছর বছর বের করছে নিত্যনতুন মডেল; বৈশিষ্ট্যভেদে দামেও রয়েছে বেশ তারতম্য। ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার বা তার বেশি দামেও পছন্দসই গাড়ি কেনার সুযোগ রয়েছে ভোক্তাদের।
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাসচালিত যানবাহনের তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় অর্ধেক। একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির জীবনদ্দশায় এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ মাত্র ৪ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার, যা গতানুগতিক গাড়ির তুলনায় অনেক কম।
ট্যাক্স বিল কম
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বা ব্যবহৃত যেকোনো বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির ট্যাক্স বিল, গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় কম। ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতা ও সরকারি নীতির উপর নির্ভর করে ট্যাক্সের পরিমাণ সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ হাজার ডলার।
এ হলো বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা। তবে জগতে সবকিছুরই রয়েছে নেতিবাচক দিক। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক বৈদ্যুতিক গাড়ির অসুবিধা বা নেতিবাচক দিকগুলো-
উচ্চমূল্য
কনজিউমার রিপোর্টের বিশ্লেষণ অনুসারে, গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। যদিও গতানুগতিক গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির অন্য সব খরচ সীমিত ও এটি পরিবেশবান্ধব, তবে এর এককালীন ক্রয়মূল্য অনেক বেশি।
বিক্রয়মূল্য কম
গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ি দ্রুত মূল্য হারাতে থাকে। অর্থাৎ, দ্বিতীয়বার বিক্রির সময় প্রচলিত গাড়ির চেয়ে হাইব্রিড বা ব্যাটারিচালিত গাড়ির মূল্য অনেক কমে যায়। তবে এটি গাড়ি বিক্রেতাদের জন্য দুঃসংবাদ হলেও, ক্রেতাদের জন্য সুসংবাদ। ব্যবহৃত গ্যাস-চালিত গাড়ির তুলনায় যৌক্তিক মূল্যে ক্রেতারা বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে পারবে।
চার্জ করার সময় ও খরচ
বৈদ্যুতিক গাড়ির জ্বালানি 'ইগ্যালনের' দাম গ্যাসের দামের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। তবে এখানে রয়েছে কিছু এককালীন খরচ। ব্যাটারি চার্জ হতে সময় লাগবে অন্তত ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টা। বড় গাড়ির ক্ষেত্রে সময় লাগবে ২৪ ঘণ্টার বেশি। তাছাড়া, গাড়ির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চার্জিংয়ের সময়ও বাড়তে থাকবে।
বাসায় গাড়ি চার্জ দেওয়ার জন্য ফাস্ট-চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি বসাতে এককালীন মোট খরচ হবে ১ হাজার পাউন্ডেরও বেশি।
ব্যাটারি চার্জের খরচ ইলেক্ট্রিসিটি বিলের সঙ্গেই যুক্ত হবে। সে হিসেবে বছরে বাড়তি ইলেক্ট্রিসিটি বিল দিতে হবে ৪৫০ পাউন্ড থেকে ৭৫০ পাউন্ড বা তারও বেশি।
কিছুদিন আগেও হাইব্রিড বা সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক যানবাহন চালানো অনেক দূরের ভবিষ্যৎ বলে মনে হতো। কিন্তু এখন এটি বাস্তব। দিন দিন কমে আসছে বৈদ্যুতিক গাড়ির সব ধরনের খরচ। তার ওপর এর সঙ্গে রয়েছে 'পরিবেশবান্ধব' ট্যাগ। তাই আধুনিক বৈশিষ্ট্যের এই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সচেতন নাগরিকদের।
- সূত্র- এ্যালি ডট কম