বিলগেটস কন্যা জেনিফার: ‘আমি জন্মেছিলাম অপার সুবিধার এক ভুবনে’
পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী পরিবারগুলোর মাঝে একটিতে জন্মগ্রহণ করার মাঝে নিঃসন্দেহে কিছু সুবিধা আছে, আর জেনিফার গেটস- বিল গেটস এর জ্যেষ্ঠ কন্যা তা নির্দ্বিধায় স্বীকার'ও করেন।
"আমি জন্মেছিলাম অপার সুবিধার এক ভুবনে" গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত সাইড লাইনস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান ২৪ বছর বয়সী জেনিফার গেটস, যিনি 'জেন' নামেই সমাধিক পরিচিত।
"আমার মনে হয় প্রাপ্ত সুযোগগুলো ব্যবহার করে সেগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ আমার লক্ষ্যের ব্যাপারে, যেন সেগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের এই পৃথিবীকে আরো কিছুটা ভালো স্থানে পরিণত করতে পারি।"
কৈশোরে হার্ভার্ড থেকে ঝরে যাবার পরেও মাইক্রোসফট এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ১৯৯৫ সালে পরিণত হন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষে, আর সে বছরেই বিল গেটস ও মেলিন্ডার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় জেনিফার গেটস, জন্মের সাথে সাথেই সৌভাগ্যের মালিকানা হিসেবে পায় ১২.৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ। বিল গেটস বর্তমানে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলার। যা ব্যাংলাদেশি টাকায় ৯৫ লক্ষ কোটি টাকার চেয়েও বেশি।
জেন গেটস এর পরিকল্পনা হচ্ছে তার হাতে থাকা সুযোগগুলো জনকল্যাণের কাজে ব্যবহার করার। অন্তত তার একটা অংশ চিকিৎসাবিদ্যায়, পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে। ২০১৮ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর জেনি এখন মেডিকেল ছাত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় বছর অতিক্রম করছে নিউইয়র্কের ইচান স্কুল অব মেডিসিনে। নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী জেনিফারের বাবা-মা তাকে তার ক্যাম্পাসের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটা বাড়ি কিনে দিয়েছে ২০১৭ সালে।
জেন জানান, বাবা-মা নিজেদের দাতব্য কাজ বাড়ি নিয়ে যাওয়াতেই হয়তো আমি পারিবারিক ডাক্তার হওয়ার প্রেরণা পাই।
তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই রাতের খাবারের টেবিলে বাবা মায়ের মুখে শুনেছি শিশুদের পোলিও, এইচআইভি/ এইডস অতিমারির কথা।
বাবা-মা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জেন তাই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে পৃথিবী জুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও জীবনের মান উন্নত করার।
যখন জেন ছোট ছিলো তখন একদিন জেন এর মা মেলিন্ডা গেটস জেন'কে তার খেলার পুতুলকে জানাতে দেখেন যে পুতুলটি এইডস আক্রান্ত। তখন মেলিন্ডার উপলব্ধি হয় যে, তিনি এবং বিল গেটস রাতের খাবার টেবিলে কন্যা জেনের সামনে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়ে ক্রমাগত কথা বলায়, তাদের কথা প্রভাব ফেলছে কন্যা জেন এর কৌতূহলী মস্তিষ্কে।
জেন একজন দক্ষ অশ্বারোহী, সে স্ট্যানফোর্ড থেকে বের হবার পর প্রতিযোগিতামূলক অশ্বারোহণে অংশগ্রহণ করেছিল এবং তাতে বাবা-মায়ের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন পান তিনি।
সাইড লাইনস'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেন বলেন, "বাবা মা সবসময়ই আমাকে সমর্থন দেন। আমি যখন ছোট ছিলাম তারা আমাকে অনুপ্রাণিত করেন যে, যা কিছু করতে আমার ভালো লাগতো তা যেন মনোযোগ দিয়ে করি; সেটা গণিত, বিজ্ঞান, পড়া কিংবা লেখা যা'ই হোক না কেন। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে নিজের ইচ্ছের দিকে ছুটে চলতে তাদের দেওয়া দৃঢ়ভিত্তির বিশ্বাস আমাকে দারুণ সমর্থন জুগিয়েছে।"
জেন বলেন, তার বাবা-মা খুবই পরিশ্রমী ও কর্মঠ মানুষ। তাদের জীবনে অবশ্যই অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে, কিন্তু তবুও তারা ক্রমাগত শিখে যাচ্ছেন এবং দৃঢ়তার সাথে সেই শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীকে আরো সুন্দর একটা স্থানে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
যেমন 'দ্য গেটস' ফাউন্ডেশনের কথাই ধরুন, যা এই পর্যন্ত করোনা মহামারী মোকাবেলা করার জন্য ৩৩৫ মিলিয়ন ডলারসহ এপর্যন্ত মোট ৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাখাতসহ নানান খাতে।
আমার মনে হয় তারা খুবই দুর্দান্ত, এবং তারা আমাকে অনুপ্রাণিত করে আমার ভালোলাগার দিকে ধাবিত হতে।
বাবা দিবসে একটা ইনস্টাগ্রামেপোস্টে জেন লেখে- মানুষের কল্যাণে বাবার দৃঢ়তাই শুধু নয়, কিছু শেখার প্রতি তার আগ্রহ'ও আমার জন্য বড় অনুপ্রেরণা।
এবং আরেকটা বিষয়, জেন এর সাথে টিকটক ভিডিও বানানোর জন্য জেন কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছে বাবা বিল গেটসকে সেই পোস্টে।
নভেম্বরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটা ইভেন্টে বিল জানান, তিনি নিজেকে সব-সময় খোশমেজাজে রাখতে পুরোপুরি নির্ভরশীল তার ৩সন্তানের উপর। বিল গেটসের অন্য দুজন সন্তান হচ্ছে ররি গেটস (২১) এবং ফোইবে গেটস (১৭)।
বিল গেটস জানান, তিনি সন্তানদেরকে স্কুলে এগিয়ে দিয়ে আসা পছন্দ করেন এবং চেষ্টা করেন সন্তানদের প্রস্তাবিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে।
"আমার নিয়মিতই ইন্সট্রাগ্রামে ঢুকতে হয় কারণ আমার ছোট মেয়ে ইন্সট্রাগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পছন্দ করে, আবার আবার হোয়াটসঅ্যাপের ও খোঁজ খবর রাখতে হয় কারণ আমার আরেক সন্তান সেখানেই আমাকে ম্যাসেজ করতে পছন্দ করে," বিল বলছিলেন।
"যদি কখনো তাদের সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক আবদার রক্ষা করতে ব্যর্থ হই, তখন তারা দাবি করে বসে যে তাদের জীবনের কোনো গুরুত্ব আমার কাছে নেই," অকপট স্বীকারোক্তি বিলের।