বস যখন আপনাকে মূল্যহীন প্রমোশন দেয়...
"সে আমাদের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট। পদের জন্য সে কখনো কৃতিত্ব নিতে চায় না।"
মিতা খেয়াল করেন তার বস ইদানীং সব জায়গায় তাকে 'ভাইস প্রেসিডেন্ট' হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। এক অনুষ্ঠানে নিজেকে কোম্পানির একজন পরিচালক হিসেবে (যেটি তার আসল পদ) পরিচয় দেওয়ার পর তাকে থামিয়ে দিয়ে উপরের কথাগুলো বলেন বস।
মিতার ম্যানেজার তাকে অফিসিয়াল ইমেইল, লিংকডইন প্রোফাইল এবং বাইরের কাউকে পরিচয় দেওয়ার বেলায় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদটি ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করেন। খোলা চোখে একে প্রমোশন মনে হলেও ম্যানেজারের মুখের কথা ব্যতীত মিতার প্রমোশন হয়নি আর কোনো জায়গায়।
এই প্রমোশনের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। বেতন-ভাতা ও বোনাস বাড়েনি। অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধাও বাড়েনি। সুতরাং, এক কথায় এটি একটি 'ভুয়া প্রমোশন'।
এরকম 'মুখে মুখে প্রমোশন'-এর দৃষ্টান্ত একেবারে নতুন না। অনেক ম্যানেজারই মনে করেন, ভালো পদ দেওয়ার মাধ্যমে তারা আপনার অবদানকে সম্মান দেখাচ্ছে। আবার তরুণ প্রতিভাদের কোম্পানিতে ধরে রাখার জন্য কেউ কেউ এরকম মৌখিক প্রমোশন দিয়ে থাকেন। আবার কোম্পানির বৈচিত্র্য, লিঙ্গ-সমতা ও অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিতে অগ্রগতি দেখানোর জন্যও অনেকে এ কাজ করে থাকেন।
আপনাকেও যদি অফিসে এরকম ভুয়া প্রমোশন দেওয়া হয়, তাহলে কী করবেন?
যাচাই করুন এটি আসলেই ভুয়া প্রমোশন কি না
প্রথমেই আপনাকে প্রমোশনের ধরণটা যাচাই করতে হবে। বর্তমানে আপনি কোন পদে রয়েছেন এবং আপনাকে কোন পদ অফার করা হয়েছে, তা ভাবুন।
ধরুন ম্যানেজার আপনাকে বললেন এখন থেকে নিজেকে পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতে। এখন যাচাই করুন, নতুন পরিচয় পাওয়ার পর আপনার দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না। আপনার বেতন-ভাতা ও বোনাসে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না।
ভুয়া প্রমোশন শনাক্তে আরও কিছু দিকে খেয়াল করতে পারেন। যেমন, আপনার ম্যানেজার এই প্রমোশনের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন কি না। অথবা আপনাকে ইমেইল, লিংকডইন বা ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের সময় নতুন পদে পরিচয় দিতে বাধ্য করা হচ্ছে কি না।
ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
যদি আপনি নিশ্চিত হয়ে যান এটি একটি ভুয়া প্রমোশন, আপনার পরবর্তী করণীয় হবে ম্যানেজারের সঙ্গে এ ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করা। যদি আপনাকে পুরস্কৃত করার জন্য এই পদ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে ম্যানেজার হয়তো তার ভুল বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারবেন পদাধিকার অনুযায়ী আপনাকে কেমন বেতন দেওয়া উচিত, কীভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।
মিতা যখন নিশ্চিত হন তার এই পদোন্নতি ভুয়া, তখন তিনি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করেন, "যদি কোম্পানি আমাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেই দেখে থাকে, তাহলে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বেলায় ভাইস প্রেসিডেন্টের প্যাকেজ কেন দেওয়া হচ্ছে না আমাকে?"
কিন্তু জবাবে তার ম্যানেজার বলেন, "তোমাকে ভাইস প্রেসিডেন্টের সমান বেতন দেওয়ার মতো বাজেট নেই আমাদের। নামের সঙ্গে এই পদ ব্যবহার করতে পারছ, এতেই তো তোমার খুশি হওয়ার কথা।"
ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা যদি পরিকল্পনামতো না এগোয়, তাহলে আপনার পরবর্তী করণীয় হবে মানবসম্পদ বিভাগের (এইচআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা।
এইচআরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
পেশাজীবীদের ক্ষমতায়নে কাজ করা মানবসম্পদ নেটওয়ার্ক ট্রুপ এইচআর-এর প্রতিষ্ঠাতা ট্র্যাসি এভিন বলেন, "একটি কোম্পানির প্রাথমিক দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এর সিস্টেম, প্রক্রিয়া এবং নীতিমালা ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তৈরি করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা। যখন এইচআরের অগোচরে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয়, তখন কোম্পানির নেতৃত্বের উপর কর্মচারীদের আস্থা হ্রাস পায়।"
মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাকে যা বলা হয়েছে এবং আপনি যে যে তথ্য যোগাড় করেছেন তা জানান। তারা হয়তো জানেই না আপনাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত মানবসম্পদ বিভাগ নিশ্চিত করে দলের সকল সদস্যকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না, এবং সবাইকে ন্যায্য বেতন দেওয়া হচ্ছে কি না। তাই এইচআরের হস্তক্ষেপ আপনার প্রাপ্ত বেতন ও সম্মান নিশ্চিত করতে পারে।
নতুন পদ গ্রহণ করবেন কি না সিদ্ধান্ত নিন
যদি আপনি নিশ্চিত হয়ে যান আপনাকে ভুয়া প্রমোশন দেওয়া হয়েছে, এবং এই মর্মে কোম্পানির ভেতর থেকে কারো সহযোগিতা না পান, তাহলে এখন আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই পদ আপনি গ্রহণ করবেন কি না। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, প্রস্তাবিত নতুন পদের ভালো ও মন্দ দিকগুলো বিবেচনা করুন।
আপনি অভ্যন্তরীণ স্বীকৃতি ও প্রাপ্য বেতন না পেয়ে এই পদ গ্রহণ করছেন, এটি একটি মন্দ দিক হতে পারে। নিজেকে কোম্পানির পুতুল মনে হতে পারে আপনার।
ভালো দিক হচ্ছে, আপনি প্রস্তাবিত পদ গ্রহণ করে চাকরির বাজারে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। বাহ্যিকভাবে এই পদ ব্যবহার করা আপনাকে অন্য চাকরি খোঁজায় সাহায্য করতে পারে।
কর্মচারীদের মধ্যে বৈচিত্র্য দেখাতে, নারীদের অন্তর্ভুক্তি এবং অগ্রগতি দেখাতে অনেক কোম্পানিই এই ধরণের পদোন্নতি দিয়ে থাকে। কিন্তু কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অনুশীলনগুলো ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত হওয়াটা জরুরী। ভুয়া প্রমোশন বৈচিত্র্য প্রদর্শনে সাহায্য করলেও, এই ধরণের অভ্যন্তরীণ অনুশীলন সহজেই কর্মচারীদের মাঝে অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে।
আপনার কোম্পানি যদি আপনাকে নতুন পদ দিতে ইচ্ছুক হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে যথেষ্ট বেতন ও সম্মান দিতেও তাদের দ্বিধা বোধ করা উচিত নয়।
- সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ।