Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
The Business Standard বাংলা
tbs
THURSDAY, MAY 26, 2022
THURSDAY, MAY 26, 2022
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
দ্বারকানাথ ও তার সহযোগীদের ব্যাপক অনিয়মেই বাংলার প্রথম ব্যাংকের দেউলিয়া ও করুণ সমাপ্তি

ফিচার

নূর মাজিদ
29 November, 2021, 11:30 pm
Last modified: 30 November, 2021, 10:05 am

Related News

  • ঋণ জালিয়াতিতে ছয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাদের কিনারে 
  • বাংলার প্রথম বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্স দ্বারকানাথ, তার হাত ধরেই খেলাপি ঋণের শুরু!
  • ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি
  • অর্থঋণ আদালতে আটকে আছে ১০,৬৩২ কোটি টাকা
  • চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৫টি শাখাতেই সিংহভাগ ‘ফোর্সড লোন’

দ্বারকানাথ ও তার সহযোগীদের ব্যাপক অনিয়মেই বাংলার প্রথম ব্যাংকের দেউলিয়া ও করুণ সমাপ্তি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা দ্বারকানাথ ইউনিয়ন ব্যাংকের পতন আসন্ন বুঝে ১৮৪৫ সাল নাগাদ নিজের হাতে থাকা ব্যাংকের সব শেয়ার বিক্রি করে দেন।
নূর মাজিদ
29 November, 2021, 11:30 pm
Last modified: 30 November, 2021, 10:05 am
দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪ - ১৮৪৬)। সংগৃহীত ছবি

খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতে সাধারণ জনতার আমানত লুঠেরই বন্দোবস্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, মহামারির মধ্যেও দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির অভাব এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হওয়ার পরোয়াই করেন না।

আমানত লুঠের লুঠের এই প্রচলন কিন্তু কোম্পানি রাজের আমলে বাংলার প্রথম বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। ইউনিয়ন ব্যাংক নামক এ আর্থিক সংস্থার প্রধান উদ্যোক্তা ও অংশীদার ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আস্থাভাজন এবং ইংরেজ বেনিয়াদের পুঁজি যোগান দেওয়ার মতো সম্পদশালী ছিলেন তিনি। ইংরেজরা তাকে 'প্রিন্স' উপাধি দেয়।

পরবর্তীতে ইউনিয়ন ব্যাংকের ইতিহাস নিয়ে তথ্যবহুল গবেষণা হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে কীভাবে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ব্যাংকটির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখেছিলেন দ্বারকানাথ ও তার সহযোগীরা। ইউনিয়ন ব্যাংকের অনিয়ম ও জালিয়াতি নিয়ে প্রথম পর্বের আলোচনায় আমরা তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। 

বাংলার প্রথম বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্স দ্বারকানাথ, তার হাত ধরেই খেলাপি ঋণের শুরু!

এই নিয়ন্ত্রণের কারণেই ব্যাংকের অন্যান্য শেয়ারহোল্ডার খেলাপি ঋণ বন্ধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হুন্ডি বিল ব্যবসায়ে নামার বিরোধিতা করেও বোর্ড সভায় ভোটে হেরেছেন বার বার। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদেও পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেন দ্বারকানাথ। তাদের মধ্যে হিসাবরক্ষক এ. এইচ. সিম এবং ১৮৪০ সালে নিয়োগকৃত ব্যাংক সচিব জর্জ জেমস গর্ডনের ঘটনা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমজন হিসাবে জালিয়াতি করেন। আর দ্বিতীয়জন নিজ পদমর্যাদা কাজে লাগিয়ে এমন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেন যারা খেলাপি করে। কিন্তু, গর্ডন জামানতের কাগজ ওই প্রতিষ্ঠানের কাছেই গোপনে হস্তান্তর করলে ইউনিয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রি করে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগও হারায়। উভয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকেই রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন দ্বারকানাথ।

ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট আড়াই হাজার শেয়ার ছিল। যার মধ্যে ৭০০ শেয়ার কিনেছিলেন দ্বারকানাথ। বন্ধু ও স্বজনদের অংশীদার করেও তিনি তাদের শেয়ারের ভোটাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই ক্ষমতা তিনি বার বার যেকোনো প্রকার সংস্কার ঠেকাতে প্রয়োগ করেছেন। গর্ডন ও সিমের কারণে ব্যাংকের মোট ৫ লাখ ৯৯ হাজার রুপি লোকসান হলেও, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেননি দ্বারকানাথ।

এমনকি ১৮৩৪ সালের পর থেকে পরিচালক বোর্ডে  ছয়টি এজেন্সি হাউজ; কার, টেগোর অ্যান্ড কোম্পানি, ককরেল অ্যান্ড কোম্পানি, গিলমোর অ্যান্ড কোম্পানি, হ্যামিলটন অ্যান্ড কোম্পানি, ফার্গুসন ব্রাদার্স এবং উইলিয়াম স্ট্রম থেকে ইচ্ছেমতো প্রতিনিধিদের পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল। টেগোর ছিল দ্বারকানাথের নিজ এজেন্সি, আর বাকিগুলো তার ব্যবসায়ী বন্ধুদের।

কলকাতার অনাবাসী শেয়ারহোল্ডারদের একটি বড় অংশ এসব অনিয়ম নিয়ে ক্ষুদ্ধ ছিলেন। তারা এক বিশেষ বোর্ড সভা ডেকে দ্বারকানাথের ক্ষমতা সীমিত করার উদ্যোগ নেন। দ্বারকানাথের সুচতুর কৌশলে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

এ অবস্থায় ১৮৪২ সালে এক বিশেষ সভায় ক্ষুদ্ধ অংশীদাররা পরিচালনা পর্ষদে নতুন নেতৃত্ব আনার প্রতি জোর দেন। আর. জে. ল্যাটি নামক এক অংশীদার উল্লেখ করেন যে, ব্যাংকের কাছে বিপুল খেলাপি করা প্রতিষ্ঠান গিলমোর অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনাররা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালক বোর্ডে আছেন। বোর্ডের অন্য সদস্যরাও তাদের নিয়োগের কোনোদিন বিরোধিতা করেননি। এমনকি খেলাপি ঘোষণার যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ঋণ নবায়নের মতো সুযোগও দেন তারা।

পি.ও. হ্যানলুন এবং টি.সি. মর্টন নামের দুই অংশীদার প্রস্তাব দেন, ব্যাংকের অবসরগামী পরিচালকদের ব্যবসায়ীক অংশীদারকে পরিচালক হিসাবে নির্বাচনের প্রথা অন্তত এক বছরের জন্য বাতিল করা হোক।

এসময় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দ্বারকানাথের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল ডি.এম. গর্ডন অব কার, টেগোর অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তারা এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেন। তবে আগে এসব বড় যৌথ মূলধনী হাউজের পক্ষে থাকা টি.ই.এম. টার্টন এবার বিদ্রোহী অংশীদারদের প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়ে স্বজনপ্রীতির অবসান দাবি করেন।  

দ্বারকানাথ এসময় ইউরোপ সফর করছিলেন। তিনি ফেরার পর তার ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেন ও'হ্যানলুন। তার অভিযোগ, ৭০০ শেয়ার মালিকানা নিয়ে দ্বারকানাথ দুর্নীতিপরায়ণ বন্ধু গর্ডনকে রক্ষা করেছেন।

দ্বারকানাথ তখন পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, নিজের ও বন্ধু-স্বজনদের সবচেয়ে বেশি শেয়ার থাকায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি তার নিজেরই। অন্য অংশীদারদের স্বার্থ উপেক্ষা করার উদ্দেশ্য তার কষ্মিনকালেও ছিল না। তাছাড়া, ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে খেলাপি ইউরোপীয় বণিকেরা। তারা মালভর্তি গুদামের পাহারায় থাকা ব্যাংকের ভারতীয় কর্মীকে তাড়িয়ে দিয়ে গুদামের পণ্য সরিয়ে নেয়। এজন্য গর্ডন ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ব্যাপারে বোর্ড সদস্যদের জানিয়েছিলেন বলেও সাফাই দেন দ্বারকানাথ।  

কিন্তু, এই যুক্তি গ্রহণ করেননি ও'হ্যানলুন। কয়েক মাস পর তিনি আবারও বললেন, 'এখনও কোনো রকম সংস্কার ছাড়াই পরিচালকরা ব্যাংক চালাচ্ছেন। তারা আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগ নেননি। এই অচলাবস্থা দ্বারকানাথেরই দোষ।'

প্রথম সংস্কার:

শেয়ারহোল্ডারদের অসন্তোষ ক্রমে বাড়তে থাকায় বোর্ড এক পর্যায়ে কিছু ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু, দাবি অনুসারে নিরপেক্ষ অডিটর নিযুক্ত করার পরিবর্তে দ্বারকানাথ ঠাকুর, ককরেল অ্যান্ড কোম্পানির এ জে ডি এইচ লারপেন্ট, কোলভিল কোম্পানির জেমস পি ম্যাককিলিগান এবং গিলমোর অ্যান্ড কোম্পানির ডব্লিউ পি গ্রান্টের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস কমিটি গঠন করা হয়। যদিও কমিটির সদস্য ব্যবসায়ী ও তাদের প্রতিষ্ঠানের কাছে তখন ব্যাংকের দেনা পাহাড়সম।

তবে অন্যান্য কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার কার্যকর হয়। যেমন নীল চাষাবাদের জন্য প্রতি মৌসুমে দেওয়া ঋণের সীমা ২৫ লাখ রুপি নির্ধারণ করা হয়। বাতিল করা হয় স্বল্পমেয়াদি ঋণ নবায়নের সুযোগ। নীল ও চিনি কারখানাগুলো থেকে অনাদায়ী মোট ৬২ লাখ ৪০ হাজার ২৬০ রুপি আদায়ে খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে দেওলিয়া ঘোষণা করে জামানতের সম্পদ নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে, সংস্কার পক্ষের ডব্লিউ মর্টনকে করা হয় বোর্ড সদস্য। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার ছিল সচিব পদ থেকে জি. এইচ. গর্ডনের বহিষ্কার।

১৮৪৩ সালে বিদায়ী গর্ডন তার শেষ প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে দেখা যায়, খেলাপি এজেন্সিগুলোর কাছে ইউনিয়ন ব্যাংকের ঋণ সকলের ধারণার চেয়েও অনেকগুণ বেশি। এর প্রধান কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নীল ফসল নাহয় কারখানা জামানত নিয়ে আগের ঋণগুলো দেওয়া হয়। কিন্তু, ততোদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে নীলের দাম পড়ে যাওয়ায় এসব সম্পদের মূল্য মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
 
পরবর্তীকালে জানা যায়, নীল এবং চিনি কারখানা জামানত নিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংক মোট ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ২৩১ রুপি ঋণ দিয়েছে। এরমধ্যে ২০ লাখ রুপি পুরোনো অগ্রিম হিসেবে পাওনা ছিল গিলমোর অ্যান্ড কোম্পানি এবং ফার্গুসন ব্রাদার্সের কাছে। এমন বড় হাউজগুলোর নেওয়া চলতি অগ্রিমের পরিমাণ ৩৬ লাখ রুপি। আর খেলাপি কারখানা অধিগ্রহণে ব্যাংকের ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ রুপি।
 
ব্যাংকের মালিকানাধীন কৃষিজ পণ্যে লোকসান হয়েছে আরও ১৪ লাখ ১৮ হাজার রুপি। হুন্ডি বিলে দেওয়া ডিসকাউন্টে লোকসান ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫৮২ রুপি।

অর্থাৎ, ব্যাংকের মোট এক কোটি রুপি পুঁজির মধ্যে ৯৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৯ রুপি তখন লোকসানে। নিয়ম অনুসারে, পুরোনো ঋণ লোকসান হিসাবে অবলোপনের নিয়ম থাকেলও, বহু পুরোনো খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বরং সেগুলো চলতি থাকার সুযোগ দেওয়া হয়।

গবেষক মাইকেল কিডরন উল্লেখ করেছেন যে, 'সে সময়ে কোলকাতার এজেন্সি হাউজগুলো এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মিলেমিশে হুন্ডি বিল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতো। দ্বারকানাথ ছিলেন নীলকুঠি মালিকদেরই প্রতিনিধি। বিল কেনাবেচায় নতুন প্রতিযোগী আসলে তাতে নীলকুঠিগুলোই লাভবান হবে, আর দ্বারকানাথ সেজন্যই এ সিদ্ধান্ত নেন। আসলে বিল কেনাবেচার চেয়ে এই সুবিধা তৈরিই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য।'

আবার ইউনিয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে নীল ফসল চাষ, ক্রয় ও রপ্তানিতে জড়িত সংস্থাগুলো বিপুল ঋণ নেওয়ার সুযোগ পায়। দ্বারকানাথ ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা এখান থেকে সরাসরি লাভবান হয়েছিলেন।

এত লোকসানের পরও তাই নীল খাতে ঋণ অব্যাহত থাকে। ১৮৪৩-৪৪ মেয়াদে নীল রপ্তানিকারক সাতটি বড় এজেন্সিকে আরও ২১ লাখ রুপি ঋণ দেওয়া হয়। এই সময়ে ব্যাংকের একমাত্র লাভজনক বিনিয়োগ ছিল বেঙ্গল কোল কোম্পানিকে দেওয়া ঋণ।

গর্ডনের পর ব্যাংক সচিব হন জেমস ক্যালডার স্টিওয়ার্ট। গর্ডনের মতো তিনিও একসময় ছিলেন ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন এজেন্সি ম্যাকিনটোশ অ্যান্ড কোম্পানির একজন পার্টনার । তবে স্টিওয়ার্ট ছিলেন অনেক বেশি হিসেবী। ফলে তার মেয়াদে ইউনিয়ন ব্যাংকের ওপর সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা কিছুটা হলেও বাড়ে। এসময় শেয়ারমূল্য বেড়ে ২৮০ রুপিতে উন্নীত হয়।

১৮৪৪ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া রিপোর্টে স্টিওয়ার্ট জানান, ঋণ পরিশোধে অক্ষম প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের মোট লোকসান এখন ১০ লাখ রুপি। এরমধ্যে রিজার্ভ ফান্ডে রয়েছে ২ লাখ রুপি। অর্থাৎ মোট ঘাটতি ৮ লাখ রুপি। এছাড়া, ব্যাংকের বর্তমান সম্পদ পরিচালনা ছাড়া চলতি নীল চাষের মৌসুমে কোনো লোকসান হয়নি। ওই বছর নীল চাষের জন্য দেওয়া আগাম ঋণ ৬২ লাখ থেকে কমে ২৭ লাখে নেমে আসে। তবে ওই সময়ে কলকাতায় অতিরিক্ত পুঁজি আসার কারণে ব্যাংকের সুদহার ও হুন্ডি বিল বিনিময় প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে। ফলে বিল এক্সচেঞ্জ ব্যবসার থেকে আয় আরও কমে যায়।

স্টিওয়ার্টের দেওয়া প্রতিবেদনের প্রশংসা করে 'ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া' পত্রিকা। তবে কিছু সন্দেহজনক হিসাবের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে। যেমন ফার্গুসন অ্যান্ড কোম্পানির পুরোনো দেনার ৯ লাখ রুপি ব্যাংকের চলতি ঋণের খাতায় দেখানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় ছিল, ব্যক্তিগত গ্যারান্টির ভিত্তিতে ঋণ অনুমোদন বৃদ্ধি। যা এক বছরেই ১৯ লাখ থেকে বেড়ে ৬৫ লাখে পৌঁছে যায়।

আরেকটি বড় ঘটনা ছিল, ব্যাংক সম্পূর্ণ লাভে না থাকলেও, লভ্যাংশে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন পরিচালকরা। ১৮৪২ সনের বিপুল লোকসানের পর যেখানে লভ্যাংশ কমিয়ে তাদের মূলধন বৃদ্ধির চেষ্টা করা উচিৎ ছিল, সেটি তারা সম্পূর্ণ অবহেলা করে ১৮৪৪ ও ১৮৪৫ সালে ৭ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তাদের যুক্তি ছিল, লভ্যাংশ কমালে শেয়ার বিক্রি করে দেবেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। এসময় হল্লুধর মল্লিক নামের একজন প্রভাবশালী বাঙালি বিনিয়োগকারী প্রায় হুমকি দিয়ে বলেন, লভ্যাংশ কমালে তার মতো বাঙালি অংশীদাররা শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।

ব্যাংকে দ্বারকানাথ যুগের অবসান:

তবে ১৮৪৫ সাল নাগাদ নিজের আওতায় থাকা ইউনিয়ন ব্যাংকের সকল শেয়ার বিক্রি করে দেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। তিনি তখন দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড যাবার জন্যও যথেষ্ট অর্থ সংগ্রহ করছিলেন।

তিনি ও তার সহযোগীদের বাড়াবাড়ির ফলে ব্যাংকটি যে ডুবতে বসেছে, হয়তো তা অনুধাবন করেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। ততোদিনে তার স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়েছিল। ধীরে ধীরে তিনি নিজের বাণিজ্যিক সম্পদ বেচে জমিদারি কেনা শুরু করেন। এসব জমিদারির বিলি-বন্দোবস্ত করে ধীরে ধীরে তার পুত্রদের দিয়ে দেন।

বিলেতে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে যান ছোট ছেলে নগেন্দ্রনাথ, ভাগ্নে নবীনচন্দ্র, ব্যক্তিগত চিকিৎসক, সেক্রেটারি, শেফ ও তিনজন সেবক। ব্যবসা পতনের মানসিক ধাক্কায় ক্রমেই অসুস্থ থাকেন তিনি। ১৮৪৬ সালের ১ আগস্ট মাত্র ৫১ বছর বয়সে লন্ডনে মারা যান ভারতবর্ষের এককালের সফল এই শিল্পপতি। লন্ডনের কেনসল গ্রিন সামাধিক্ষেত্রে রাজকীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয় তাকে। তার নীতির ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন ব্যাংক যেভাবে বিলীন হয়েছিল, সেটি আর তিনি দেখে যেতে পারেননি। 

ইউনিয়ন ব্যাংকের শেষ সময়:

ব্যাংকের পরবর্তী প্রভাবশালী পরিচালক হন উইলিয়াম প্যাট্রিক গ্রান্ট। তিনি ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। গ্রান্ট ব্যাংকের কাছে বিপুল ঋণী ককরেল অ্যান্ড কোম্পানির সাথে জড়িত ছিলেন। কমিটির দ্বিতীয় সদস্য জন ব্যাকউইথও ছিলেন এই কোম্পানির একজন অংশীদার। আর তৃতীয় সদস্য ডব্লিউ এফ গিলমোর ছিলেন কলভিল এবং গিলমোর উভয় প্রতিষ্ঠানের অংশীদার।

এভাবে বড় খেলাপি হাউজগুলো গ্রান্ট যুগে বোর্ডে প্রাধান্য বিস্তার করে। পরিচালকরা এসময় বেশ আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু, তাদের নিবৃত্ত করেন স্টিওয়ার্ট। তিনি গ্রান্টের কাছে অভিযোগ করেন, চারটি বড় এজেন্সি হাউজের কাছে ব্যাংকের এক-তৃতীয়াংশ মূলধন হারিয়েছে। তিনি ফিন্যান্স কমিটির সামনে কিছু সংস্কারের তালিকাও দেন।

কিন্তু, তার জবাবে স্টিওয়ার্টকে এক চিঠিতে গ্রান্ট লেখেন, 'এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করার আগে আপনার সতর্ক হওয়া উচিৎ। কারণ ভেবেচিন্তে কাজ না করলে, পরিস্থিতি বিস্ফোরক আকার ধারণ করবে।' স্পষ্টতই ব্যাংক সচিবকে এভাবে এক প্রকার হুমকিই দেন গ্রান্ট।

স্টিওয়ার্ট তখন গোপনে প্রভাবশালী ভারতীয় এবং ইংল্যান্ডে থাকা অনাবাসী শেয়ারহোল্ডারদের সচেতন করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু তিনি সফল হননি।

আনুষ্ঠানিকভাবে এসময় ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালকরা জামানত হিসাবে অধিগ্রহণ করা নীল কারখানার সংখ্যা কমানো এবং এজেন্সিগুলোকে নীল চাষের জন্য দেওয়া ঋণ কমিয়ে আনা হচ্ছে এমন রিপোর্ট দিচ্ছিলেন। ১৮৪৪ থেকে ১৮৪৬ সাল নাগাদ আলোচিত চার বড় এজেন্সিকে দেওয়া ঋণের অংক ৮ লাখ থেকে কমে ৪ লাখে নামিয়ে আনার কথাও জানান তারা। আবার ১৮৪৪-৪৫ মেয়াদে নীল চাষে ২৬ লাখ রুপি ঋণ দেওয়া হলেও, তা ১৮৪৫-৪৬ মেয়াদে ১৪ লাখ রুপি দেওয়ার দাবি করা হয়।

তবে বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে ইউনিয়ন ব্যাংক তখন নীল চাষে আরও বেশি ঋণ দিচ্ছিল।

দেওয়া হচ্ছিল হুন্ডি বিলে বিপুল ডিসকাউন্ট, বেড়েই চলছিল ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে ঋণ ছাড়করণ। দ্বারকজানাথের আমলের মতোই এসব ঋণ আবার সামান্য কিস্তি দিয়ে অনির্দিষ্টকাল নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়।

সরকারি বন্ড ও যৌথ মূলধনী অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ছিল ইউনিয়ন ব্যাংকের সম্পদ। এরমধ্যে আবার অধিকাংশ শেয়ারই ছিল ইউনিয়ন ব্যাংকের নিজস্ব। দ্বিতীয়ত, জামানত ছাড়াই স্বল্পমেয়াদে ঋণ দেওয়ার নতুন জোয়ার শুরু হয়। এসময় ইউনিয়ন ব্যাংকের দেওয়া ঋণের প্রতিটি রুপিই নীল চাষে দেওয়া হচ্ছিল।
 
অথচ ১৮৪০ সাল থেকেই নীল ব্যবসায় নামছিল ধস। নীল এজেন্সিগুলোর তখন মূলধন চাহিদা আকাশচুম্বী। একমাত্র ঋণ করা ছাড়া তাদের ব্যবসায় টিকে থাকার কোনো উপায়ই ছিল না। ব্যাংকের পরিচালকরা নিজস্ব ব্যবসায়ীক স্বার্থে এখাতেই ঋণ দিতে থাকেন।  

কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। ক্রমে অলাভজনক ব্যবসায় ঋণ দিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংক ১৮৪৭ সাল নাগাদ দেউলিয়া হয়ে পড়ে। আর এভাবেই শোষণ নির্ভর বেনিয়া গোষ্ঠীর হাতে গড়ে ওঠা বাংলার প্রথম বেসরকারি ব্যাংকের করুণ অবসান ঘটেছিল।

ইউনিয়ন ব্যাংকের পর যেসব নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে ব্রিটিশদের ঋণ দিতেই বেশি উৎসাহী ছিল। সেদিক থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক ছিল উভয় জাতিবর্ণের মানুষকে সমান সুবিধা দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু, ইংরেজ ও ভারতীয় দুই শ্রেণির পরিচালক ও কর্মকর্তাই এর বিনাশের কারণ হন।
 

Related Topics

টপ নিউজ

প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর / ইউনিয়ন ব্যাংক / বাংলার প্রথম বেসরকারি ব্যাংক / খেলাপি ঋণ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন
  • ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম
  • দেশবন্ধু সুইটমিট: ৬৪ বছর ধরে ঢাকাবাসীর সকাল-বিকালের নাস্তার প্রিয় জায়গা
  • মেঘনা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে 
  • রাশিয়ার হাতে ১১৩টি বিমান হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান 
  • পোশাক শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করবে মডার্ন সিনটেক্স, কমবে আমদানি নির্ভরতা

Related News

  • ঋণ জালিয়াতিতে ছয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাদের কিনারে 
  • বাংলার প্রথম বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্স দ্বারকানাথ, তার হাত ধরেই খেলাপি ঋণের শুরু!
  • ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি
  • অর্থঋণ আদালতে আটকে আছে ১০,৬৩২ কোটি টাকা
  • চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৫টি শাখাতেই সিংহভাগ ‘ফোর্সড লোন’

Most Read

1
অর্থনীতি

আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন

2
ইজেল

ঢাকার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান: সেইসব আধা সাদা সাহেব-মেম

3
ফিচার

দেশবন্ধু সুইটমিট: ৬৪ বছর ধরে ঢাকাবাসীর সকাল-বিকালের নাস্তার প্রিয় জায়গা

4
বাংলাদেশ

মেঘনা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে 

5
আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার হাতে ১১৩টি বিমান হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান 

6
অর্থনীতি

পোশাক শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করবে মডার্ন সিনটেক্স, কমবে আমদানি নির্ভরতা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab