ডাইনোসরের শরীরে মানুষের রোগ
পৃথিবীতে মানব প্রজাতির আবির্ভাবের বহু বছর আগে রাজত্ব করতো নানা আকৃতির সব ডাইনোসর। বিবর্তনের সূত্র ধরে এরপর পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্যে বহু পরিবর্তন আসে, উল্কাপাতে ডাইনোসর যুগের অবসানের পর দেখা যায় নতুন নতুন সব প্রজাতির আনাগোনা।
কিন্তু সহস্র যুগ পরে এসেও আধুনিক মানব প্রজাতির সঙ্গে ডাইনোসর যুগের কিছু যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এমনই এক ঘটনার খোঁজ দিয়েছে ‘ডাক বিলড’ পরিবারের হ্যাড্রোসর নামক এক প্রাচীন ডাইনোসরের ফসিল। এদের মুখের গঠনে হাঁসের ঠোঁটের মতো আকৃতি থাকার কারণেই পরিবারটির এহেন নামকরণ। প্রায় ছয় কোটি ৬৬ লাখ বছর আগে হ্যাড্রোসররা পৃথিবীর বুকে বিচরণ করতো।
‘ডাইনোসরের প্রাচীন ফসিলটি খোঁজে পাওয়া গেছে কানাডার দক্ষিণ আলবার্টা অঞ্চলে। পাওয়া গেছে প্রস্তরিভূত জীবাশ্ম সন্ধানের জন্য বিখ্যাত আলবার্টার ডাইনোসর প্রভেনশিয়াল পার্কে মাটি খুঁড়ে। হ্যাড্রোসরের লেজের হাড়ে বর্তমানে মানব দেহেও দেখা যায় এমন এক দুর্লভ রোগের চিহ্ন পেয়েছেন তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। বিরল এই রোগে অল্প বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত হয়। খবর সিএনএনের।
মেরুদন্ডের হাড়ের গঠন দেখে সন্দেহ হওয়ায় বিজ্ঞানীরা এর সঙ্গে দুটি নর কঙ্কালকে তুলনা করে দেখেন। নর কঙ্কাল দুটির মেরুদন্ডে ফোঁড়া জাতীয় মৃদু টিউমারের চিহ্ন ছিল।
তুলনা করে দেখার পর তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা হ্যাড্রোসরের মেরুদন্ডের হাড়েও ল্যাংগারহান্স সেল হিস্টোওসাইসিস (এলসিআইচ) নামক টিউমার থাকার প্রমাণ পান।
বালকদের মাঝে এলসিআইচ বেশি হয়। এতে তারা খুবই ব্যথা অনুভব করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা প্রাণঘাতী নয় এবং নিজে থেকেই সেরে যায়।
বিজ্ঞানী ডা. হিলা মে বলেন, প্রস্তরীভূত কোনো প্রাণীর কঙ্কালে রোগের চিহ্ন অনুসন্ধান করা বেশ কঠিন। তবে অনেক সময় কিছু কিছু রোগ হাড়ে তাদের চিহ্ন রেখে যায়। মানবদেহে পাওয়া এলসিএইচের সঙ্গে হ্যাড্রোসরের হাড়ে পাওয়া ক্ষতচিহ্নের দারুণ মিল রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এসব চিহ্ন অনুসন্ধানে উচ্চ সক্ষমতা সম্পন্ন সর্বাধুনিক সিটি স্ক্যান ব্যবহার করেন।
ডা. মে সিএনএনকে বলেন, নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ডাইনোসরটির মেরূদন্ডের পেশির গঠন এবং সেখানে যে টিউমার ছিল এমন প্রমাণ পেয়েছি। এই প্রথমবার কোনো ডাইনোসরের ফসিলে মানুষের সঙ্গে মিল আছে এমন রোগের সন্ধান পাওয়া গেল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এটি এক চমকপ্রদ আবিষ্কার।