জুলিয়েট-পিলপিলের সংসার বাড়ছে
আগস্টের শেষ সপ্তাহে জুলিয়েটের ডিম থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে বেশ কয়েকটি কুমির ছানা। আর পিলপিল আগামী সপ্তাহে যে ডিম দেবে তা থেকে কুমির ছানা পাওয়া যাবে সেপ্টেম্বরে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা এ সব তথ্য দিয়ে জানান, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের করমজলে দেশের একমাত্র সরকারি বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে এর আগে কুমির ছানার জন্ম হয়েছে ১৯৫টি। এ ছাড়া কচ্ছপের জন্ম হয়েছে ৩০২টি আর হরিণ ৩৭টি।
তারা জানান, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে গত মাসের শেষ দিকে ৫২টি ডিম দেয় রোমিওর সঙ্গী জুলিয়েট। কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটাতে ইউকিউবেটরে রাখা হয়েছে ৩৮টি ডিম। আর প্রাকৃতিক পরিবেশে মাউন্ট নেস্টে আছে ১৪টি ডিম। বনবিভাগ আশা করছে, ২৫ বা ২৬ আগস্ট পাওয়া যাবে বেশ কয়েকটি কুমির ছানা।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা পেতে সাধারণত সময় লাগে ৮৫ থেকে ৯০ দিন। আর সবসময় চেষ্টা করা হয় যাতে ডিম থেকে বাচ্চা পাওয়া যায় বেশি।
"করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে আগে যেসব বাচ্চা জন্ম নিয়েছে তারমধ্যে ৯৭টি বাচ্চা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে" যোগ করেন হাওলাদার আজাদ কবির।
তিনি জানান, পৃথিবীতে যে ২৬ প্রজাতির কুমির রয়েছে তারা ডিম দেয় হোল নেস্ট বা গর্তে তৈরি বাসায় আর মাউন্ট নেস্ট বা জঙ্গল দিয়ে তৈরি বাসায়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাউন্ট নেস্টে ডিম দেবে পিলপিল। ইতোমধ্যেই পুকুরপাড়ে জঙ্গল দিয়ে বাসাও বানিয়েছে সে। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রজনন কেন্দ্রটিতে জুলিয়েট ডিম দিয়েছে ১৫ বার আর পিলপিল ১০ বার।
সুন্দরবনের অপার সব সৌন্দয্য দেখতে আসাদের মধ্যে করমজলে প্রতিবেদকের কথা হয় মজিরা খাতুন নামে এক পর্যটকের সঙ্গে। মঙ্গলা (মোংলা) থেকে তিনি করমজলের টুরিস্ট পয়েন্টে গেছেন কুমির, হরিণ আর কাকড়া সম্পর্কে জানতে। নির্ভয়ে মানুষের পাশদিয়ে চলা-ফেরা করা হরিণ মুগ্ধ করেছে তাকে।
"পরিবেশ পেলে যে বনের প্রাণী বনেও মানুষের মতো আচরণ করে তা এখানে না এলে জানতে পারতাম না" বললেন মজিরা খাতুন।
অবাক করা বিষয় বনবিভাগের কর্মকর্তার আকার ইঙ্গিত আর শব্দ বুঝতে পারে হিংস্র প্রাণী কুমিরও।
"হাওলাদার আজাদ কবিরের ডাক আর শব্দে পুকুরের পানি থেকে জুলিয়েট আর পিলপিলের পাড়ে উঠে আসা আমাকে অবাক করেছে" বললেন মজিরা খাতুন।
বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মিশে গেছে করমজলের অনেকেই। তাদের অনেকেই নিজের সন্তানের মতো করে বড় করেছেন কুমির ছানা আর হরিনের মতো অনেক বন্যপ্রাণীকে।
করমজল এলাকার বাসিন্দা নিমাই চন্দ্র রপ্তা অনেক বছর ধরে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী লালন-পালন করছেন। কোলে পিঠে করে বড় করা বন্যপ্রাণীকে বনে ছেড়ে দিতে তার ভালো লাগে।
''আমি গত ১৫ বছরে অনেক ধরনের বন্যপ্রাণী আর পাখি বড় করে বনে ছেড়ে দিয়েছি, বড় করার পর ছেড়ে দিতে কষ্ট লাগে- কিন্তু তারপরেও ছেড়ে দেই এই ভেবে যে তাদের জায়গা আসলে বনেই" বলেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী নূর আলম শেখ সুন্দরবনে পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এখানে পর্যটকদের থাকার ভালো জায়গা নেই, খাবারের ব্যবস্থাও তেমন উন্নত নয়। এ সব সমস্যার পাশাপাশি যাওয়া-আসার ভালো ব্যবস্থা থাকলে সুন্দরবনে আরও পর্যটক আসবে আর সেই সঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণও।