কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে হবে পরিবেশবান্ধব জৈব যৌগ
কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক দল গবেষক একটি অনুঘটক তৈরি করেছে যা দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইডকে সাধারণ রাসায়নিক উপকরণ জৈব যৌগে রূপান্তর করে। আর এভাবেই, তারা গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রিনহাউস গ্যাসকে শিল্পের জন্য দরকারি উপাদানে রূপান্তরিত করেন।
বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘সায়েন্স’ এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
এক্ষেত্রে জল ইলেক্ট্রোলাইজার প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এই ইলেক্ট্রোলাইজারে পানি আর বিদ্যুতকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে রূপান্তরিত করা হয়। তবে এক্ষেত্রে পানি আর বিদ্যুতের ককটেলে কার্বনডাই অক্সাইড মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে হাইড্রোজেনের সঙ্গে এখানে উৎপন্ন হচ্ছে হাইড্রোকার্বন বা জৈব যৌগ, যেমন- ইথিলিন।
কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এফ. পেলেও গার্সিয়া ডি আর্কার জানান, “বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত জৈব যৌগ হলো হাইড্রোকার্বন। নির্মাণ সামগ্রী, টেক্সটাইলস, পেইন্টস, ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপাদান থেকে শুরু করে বাচ্চাদের ডায়াপার বানানোর কাঁচামাল পেতে পারি আমরা।”
কার্বন ডাই অক্সাইড সাধারণত জলীয় দ্রবণের ভেতর দিয়ে সহজে যেতে পারে না। ফলে দ্রবণে যখন ইলেক্ট্রন চালানো হয়, মানে বিদ্যুৎ চালনা করা হয় তখন বিক্রিয়া হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড পাওয়া যায় না। এই সমস্যা দূর করার জন্য ইলেক্ট্রোলাইটের ভেতরে পলিমারের একটি প্রলেপ দেওয়ার কথা বলছেন এই বিজ্ঞানীরা, যাতে করে কার্বন ডাই অক্সাইডকে পানির মধ্যে সহজে প্রবাহিত করা যায়।
পলিমার ব্যবহার করে এই সীমাবদ্ধতা কাটানোর ব্যাপারে গবেষকরা ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমরা আবিষ্কার করেছি যে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর আয়নোমার (আয়ন ও পানির সঙ্গে অনুঘটককে সঞ্চালনকারী পলিমার) কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রবাহকে সহজতর করে। এতে করে হাইড্রোকার্বনের উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
এই আয়োনোমারের প্রলেপটিতে আছে হাইড্রোফোবিক (জল-প্রতিরোধক) এবং হাইড্রোফিলিক (জল আকর্ষণকারী) উপকরণে তৈরি ১০ ন্যানোমিটারের একটা পাতলা স্তর। এর মধ্য দিয়ে পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবাহিত হয় আর এর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ চালনা করলেই উৎপন্ন হয় প্রোটন আয়ন আর হাইড্রোকার্বন।
আর এক্ষেত্রে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে মাত্র ২ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে আগের চাইতেও কয়েক হাজার গুণ বেশি কার্বন ডাই অক্সাইডের অণুকে রূপান্তরিত করা যাবে।
বিদ্যুতের উৎস সম্পর্কে গার্সিয়া ডি আর্কার বলেন, পুরোপুরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস যেমন সৌর, বায়ু বা জলবাহী শক্তি থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। সুতরাং পরিবেশ বান্ধব উপায়ে হাইড্রোকার্বন তৈরির একটি পদ্ধতি পারে এই প্রযুক্তি।”