করোনা গেলেও রয়ে যাবে মাস্কের নিয়মিত ব্যবহার?

মাস্ক এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। প্রথমদিকে মাস্ক ব্যবহারে জনমনে অস্বস্তি কাজ করলেও এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মহামারি কেটে গেলে কি কাটানো যাবে এ অভ্যাস?
অনেক দেশ অবশ্য এরইমধ্যে মহামারির পরও মাস্ক পরা বজায় রাখার কথা ভাবছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে, 'সায়েন্স ফ্রাইডে' নামে একটি ওয়েবসাইটে এ নিয়ে একটি পর্যালোচনা চালানো হয়। সেখানে ওয়েবসাইটটি শ্রোতাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল, 'তাদের স্বপ্নগুলোতে কোভিড-১৯ মহামারি কোনো পরিবর্তন এনেছে কি না?'
অনেক শ্রোতারই উত্তর ছিল, 'হ্যাঁ।' তাদের স্বপ্নগুলোতে মহামারির প্রভাব প্রগাঢ় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির মহামারিবিদ আইজাক ফুং জানান, এর আগেও আমেরিকানরা প্রায় এক শতাব্দী রেশ টেনেছে মহামারির। খুব ভয়ংকর ব্যাপার ছিল সেটি। কিন্তু সাম্প্রতিক মাস্ক ব্যবহার তাদের আগের মনোভাবও বদলে দিতে পারে।
তিনি বলেন, 'এই করোনা মহামারির সম্মুখীন আমাদের হয়তো একবারই হতে হয়েছে; কিন্তু এটি বদলে দিতে পারে আমাদের জীবন-ভাবনা, জীবনযাত্রা।'
মানসিক আঘাতের স্থায়িত্ব
মাস্ক আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে রয়ে যাবে, এমন ধারণা করার কারণ, করোনাভাইরাসের আগের মহামারিগুলোও এভাবেই প্রভাব ফেলে গেছে। ২০০৩ সালে সার্স নামে এক ভাইরাসের কথা কি মনে আছে? চীন, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল ভাইরাসটি। সেই সময়েও মাস্ক পরতে হতো।
ফুং বলেন, ২০০৩ সালের সেই সার্স ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই ধরনের প্রভাবই রেখে গেছে। তাছাড়া কোভিড-১৯ আমাদের মাস্ক পরার পাশাপাশি হাত ধোয়ার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে নতুন অভ্যাস শিখিয়েছে, মহামারির পরের সময়কালেও সেগুলো বেশ কার্যকরী হবে। নিয়মিত হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং মাস্ক ব্যবহার আমাদের ছোটখাট অনেক ফ্লু ও সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা যেমন করবে, তেমনি আমাদের কাছ থেকে অন্যদের মাঝে রোগ ছড়ানো রোধ করবে।
স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ ইউনিভার্সিটির সামাজিক নৃতাত্ত্বিক ক্রিস্টোস লিন্টেরিস মনে করেন, এই মহামারি হুট করেই চলে যাবে না। এমনকি ভ্যাকসিন আসার পরও এই ভাইরাস পুরোপুরি নিঃশেষ হবে না। বিভিন্ন মৌসুমি জ্বর, ফ্লুর মধ্য দিয়ে ভাইরাসগুলোর পুনরুত্থান ঘটবে। আর সে কারণেই সার্স ও কোভিড-১৯ মাস্ক ব্যবহারের যে অভ্যাস তৈরি করে দিয়ে গেছে, তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই সুফল দেবে।
স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য
ফুং বলেন, শহরের বেশিরভাগ মানুষ তাদের যাতায়াতের জন্য বাস, ট্রেন ও ট্রাম বেছে নেয়। গণপরিবহন ব্যবহার এবং অন্যান্য লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে অনেক বেশি সময় কাটে নাগরিকদের। তাই শহরে মাস্ক ব্যবহারের উপযোগিতা দেখা যাবে বেশি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের যে অংশ নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করে এবং তুলনামূলকভাবে ফাঁকা পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য মাস্ক পড়ার উপকারিতা এতটা জোরাল না-ও হতে পারে বলে ধারণা ফুংয়ের।
তিনি অবশ্য মনে করেন, আগামী দিনগুলোতে মাস্কের ব্যবহার বদলে যাবে। অর্থাৎ, মাস্ক এখন বাধ্যতামূলকভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এটি শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতার অপরিহার্য অংশই নয়, বরং ফ্যাশনের অনুষঙ্গও হয়ে ওঠবে।
মাস্কের ব্যবহার মহামারির পরেও চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যেহেতু আলোচনা চলছে , তাই স্বাস্থ্যবিধির বাইরে গিয়েও হালফ্যাশনের দিকে নজর দিতে হবে এখন। লিন্তেরিস বলেন, মানুষের কাছে মাস্ককে পোশাকের মতোই তুলে ধরতে হবে। যেন তারা এটিকে চাপিয়ে দেওয়া কোনো বিধি মনে না করে,বরং ফ্যাশনের অংশ ভাবে।
ফুং বলেন, লোকজন নিজেদের পোশাক-পরিচ্ছদের সঙ্গে মিল রেখে মাস্ক পরবে। মাস্ক যখন আমাদের পোশাক বা সাজগোজেরই অংশ হয়ে উঠবে, তখন এটি ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে মানুষের।
- সূত্র: ডিসকভার ম্যাগাজিন