করোনায় শিল্পীর পাশে প্রবাসী চিত্রশিল্পী
শিল্পী তৈরি হয় শিল্প থেকে আর শিল্পী বাঁচে তার ছবি আঁকায়। পৃথিবীতে সব কিছুর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে মানবিকতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে এসে দাঁড়াল শিল্পী। আর শিল্পীরা দাঁড়ালেন দেশের অসহায় মানুষের পাশে। করোনাভোইরাস মিলিয়ে দিল বাংলাদেশ ও জার্মানি শিল্পীদের।
শিল্পী অনিল হোসেন প্রায় ৪৫ বছর ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন। বিদেশে থেকেও তিনি তার মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা আর দেশকে নিয়ে ভালো কাজ করার স্বপ্ন দেখেন। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ নিতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। শিল্পী অনিল হোসেনের সঙ্গে তার সহধর্মিণী নেহরিকা হোসেনও কাজ করার সহমত প্রকাশ করেন। এই শিল্পী দম্পতি জার্মানিতে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি আর্ট সেন্টার এবং একটি আন্তর্জাতিক আর্ট গ্যালারি পরিচালানা করছেন।
২০১৯ সালে শিল্পী অনিল হোসেনের সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্পী প্রীতি দেবের যোগাযোগ তৈরি হয়। পরে এবছরের জানুয়ারিতে ঢাকা সফরকালে, এশিয়াটিক সোসাইটির জলের ধারা প্রদর্শনীতে দু'দেশের শিল্পীদের দেখা হয়। এতে তারা ৫ নারী ও ৫ পুরুষসহ ১০ জন শিল্পী বাছাই করেন, যারা ২০২১ সালে জার্মানির ব্রেমেনে শহরে গ্যালারি অনিলে একটি প্রদর্শনী করবেন। যেখানে এই শিল্পীরা উপস্থিত থাকবেন। আর তার জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের যারা স্বনামধন্য উদ্যোক্তা আছেন, তাদের এগিয়ে আসা।
শিল্পী অনিল হোসেনের হাত ধরেই গঠিত হয় "বাঙালি শিল্পী গোষ্ঠী"। আর এই গোষ্ঠীর শিল্পীরা হলেন- প্রীতি দেব, মো. মাহাফুজুর রহমান, সিদরাতুল আফিয়া মোহনা, শাহেদ মোহাম্মদ, তানিয়া পারভেজ, সোহাগ পারভেজ, ফারিসা মাহমুদ, শুভ্রা সরকার, বিলাস দাস প্রেম এবং কিশোর মজুমদার।
কিন্তু চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে গভীর সংকটে পড়েন এ দেশীয় শিল্পীরা। সে মুহুর্তে শিল্পী অনিল হোসেন বাঙালি শিল্পীদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেন। তিনি বাংলাদেশের ১০ শিল্পীর কাছ থেকে ছবি নিয়ে "শিল্প কিনুন এবং শিল্পীদের জীবন বাঁচান " শীর্ষক শিরোনামে বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে তা প্রচার করেন।
শিল্পী অনিল হোসেন জানান, তার প্রিয় জন্মভূমি থেকে সবাইকে সাহায্য করা সম্ভব না, তবে কমপক্ষে দশজনকে তো সম্ভব। যার ফলে বাঙালি শিল্পী গোষ্ঠীর দশজন শিল্পীর ছবি জার্মানিতে বিক্রি করতে সক্ষম হন তিনি। তবে জার্মানিতে করোনার এই সংকটে ছবি বিক্রি করা শিল্পী অনিল হোসেনের পক্ষে ছিল খুবই কঠিন।
অনিল হোসেন বলেন, মানুষ মানুষের জন্য, মানবতার জয় হোক, মানবতা ছড়িয়ে পড়ুক সারাবিশ্বে। মানবতা আছে বলেই এই পৃথিবীটা আজও সুন্দর।
শিল্পী নেহরিকা হোসেন বলেন, জার্মানিতে জলরঙের শিল্প খুব কম দেখা যায়। আমি এই ১০ জন প্রতিভাবান শিল্পীকে আমাদের গ্যালারিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে এবং বর্তমান সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হতে পেরে খুশি।
করোনার এই দুঃসময়ে সময়ে শিল্পী অনিল হোসেন যেভাবে এই শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক তেমনি বাঙালি শিল্পী গোষ্ঠীর ১০ শিল্পী অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেন। জার্মানিতে ছবি বিক্রি করে যে অর্থ তারা পেয়েছিলেন, তার থেকে সবার সাধ্যমত অর্থ দিয়ে গত ৩ জুন রাজধানীতে ২৫টি পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়। এ ত্রাণ দিয়ে পরিবারগুলো কমপক্ষে ৭ দিন চলতে পারবে।
এবিষয়ে শিল্পী প্রীতি দেব বলেন, আমরাও পৃথিবীর এই অসুস্থ সময়ে চুপ করে নেই। জার্মানি থেকে শিল্পী দম্পতি আমাদের বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের পাশে এসে কাঁধে হাত রেখেছেন। এই হাত পরম অভিভাবক সুলভ। আমরা এই প্রবাসী বাঙালি প্রিয় চিত্রশিল্পীর স্নেহের সান্নিধ্যে গড়ে তুলেছি আমাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম - বাঙালি শিল্পী গোষ্ঠী।
তিনি আরও বলেন, জার্মানিতে শিল্পী অনিল হোসেন যদি তার নিজের দেশের শিল্পীদের জন্য এতটা হৃদয় রাখেন এবং এতটা আবেগ প্রবণ হতে পারেন তবে অবশ্যই বাংলাদেশের উদোক্তারাও আমাদের পাশে থাকবেন। তাদের নিজের দেশের শিল্পীদের জন্য হৃদয় দিয়ে সহযোগিতা করবেন।