করোনার প্রভাব: চেনা রেওয়াজের অচেনা রূপ
রেওয়াজ বা আচার-অনুষ্ঠান মানবজীবনেরই অংশ। জন্ম থেকে শুরু করে, বিয়ে হয়ে, মৃত্যু পর্যন্ত এগুলো মানুষের জীবনচক্রে জড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে কোনো-কোনোটা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ; যেমন, নিয়মিত চুল কাটা কিংবা রাতের বেলা সিনেমা দেখতে যাওয়া।
তবে যে সমস্ত রেওয়াজে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম, কোভিড-১৯ তা নাটকীয়ভাবে এলোমেলো করে দিয়েছে।
বৈশ্বিক এই মহামারিতে প্রভাবিত হওয়া সেইসব রেওয়াজ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বিভিন্ন আলোকচিত্রী। সেগুলো থেকে নির্বাচিত কয়েকটি ছবি নিয়ে এ আয়োজন:
ভ্রাম্যমাণ সিনেমা-হল
'পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার মতো' যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অধিবাসীদের প্রাত্যহিক জীবনও 'বদলে গেছে, জানালেন আলোকচিত্রী সল মার্টিনেজ। তিনি বলেন, 'স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন লোকগুলো।' সিনেমা-হলগুলো বন্ধ বলে সেখানে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই রাতের বেলা ওয়াল্টার ও ইয়ং পরিবার খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প উপায়। একটা 'চলমান সিনেমা-হল' বানিয়ে চলচ্চিত্র উপভোগ করছেন তারা। ওপরের ছবিটি তেমনই এক মুহূর্তের।
জন্মদিন উৎসবের ভিন্ন মাত্রা
নিজের ৪০তম জন্মদিনের স্মৃতি ধরে রাখতে আত্মপ্রতিকৃতি তুলছেন পেরুর রাজধানী লিমার বাসিন্দা মাকারেনা তাবিয়া দেল সোলার। কোভিড-১৯-এর কারণে জীবনের এই বিশেষ দিনটি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে উদযাপন করা অসম্ভব। তাছাড়া ওই শহরে রাত ১০টার পর থেকে কারফিউ হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। 'এ কারণে জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেনা হ্যাট ও নতুন পোশাক পরে, ক্যামেরা আর ওয়াইন নিয়ে আমি চলে এসেছি ছাদে,' বলেন সোলার।
'কতদিন দেখা হয়নি!'
প্রাক-স্নাতক পোর্ট্রেট সেশনের আগে ১৭ বছর বয়সী লিসবেথ রিয়েরা (বাঁয়ে) ও ১৮ বছর বয়সী লেসলি ভিলাসিসের এই আলিঙ্গনের নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ চার মাস পর দুই বান্ধবীর দেখা হওয়ার আবেগ। কোয়ারেন্টিন চলার কারণে তাদের দুজনের এত দিন দেখা হয়নি। তাই সুযোগ পেয়েই লেসলির বাড়িতে ছুটে আসেন লিসবেথ। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান হবে না। 'আনমনেই গুনগুন করছি আমি, মনে হচ্ছে যাকে পাব তাকেই জড়িয়ে ধরব,' বলেন লেসলি।
ঘরোয়া খেলায় দুই প্রজন্ম
বৈশ্বিক মহামারির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পাজ অলিভারেস দ্রোগেতের মা ও বড় মেয়ে ঘরোয়া খেলাতেই সান্ত্বনা খুঁজছেন। 'দীর্ঘ এই বন্দিদশার কালে ঘরোয়া খেলাই হয়ে উঠেছে আমাদের পরিবারের নতুন রেওয়াজের একটা বড় অংশ,' বলেন দ্রোগেত।
'তবু জীবন বয়ে চলে...'
কোভিড-১৯-এর চোখ রাঙানি স্বত্ত্বেও আয়োজিত ছোট বিয়ের অনুষ্ঠানে মাস্ক পরে হাজির কিছু অতিথি। 'মানুষের সহনশীলতা সৌন্দর্য দারুণ,' বলেন আলোকচিত্রী নিকোলাস সুন আদাতসি। 'পথ সোজা হোক কিংবা বাঁকা, বহমান নদী যেমন ঠিকই বয়ে চলে, আমরাও সব সময় তেমনিভাবে চলমান থাকতে খুঁজে ফিরি পথ।'
প্রার্থনায় একা
মসজিদে একা জোহরের নামাজ পড়ছেন মোহাম্মদ সোহেল সবহেব। এর আগে, এক দুর্ঘটনায় একজন লোক মারা গেছেন বলে আলোকচিত্রীকে জানিয়েছিলেন তিনি। 'রোজার মাসে কাজ করা সব সময়ই কঠিন। রোজা রেখে কর্মশক্তি ফুরিয়ে আসে। তার সঙ্গে এখন বাড়তি যোগ হয়েছে ভাইরাসটির যন্ত্রণা,' বলেছিলেন তিনি। 'তবু এটাই আমার দায়িত্ব। আমরা যদি অন্যদের সাহায্যে এগিয়ে না আসি, তাহলে কে আসবে?'
- সূত্র: এনপিআর