করোনার আগমনে বিদায় নিয়েছে এতদিনের পরিচিত ফ্লু!
বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বড় আতংকের নাম বর্তমানে করোনাভাইরাস। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে, করোনার ঊর্ধ্বমুখী বিস্তারে হ্রাস পেয়েছে শ্বাসযন্ত্রের আরেকটি ভাইরাসজনিত রোগ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু।
করোনার সংক্রমণ রোধে যেসব স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা হয়, সেগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার রোধেও কার্যকর। মূলত এ জন্যই ফ্লু'র সংক্রমণ হার কমে এসেছে বলে ধারণা রোগতত্ত্ববিদদের। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও সার্স-সিওভি-২ এর মত একইভাবে সংক্রমিত হয়, তবে এটি হোস্ট বা পোষকের মাধ্যমে এত দ্রুত ছড়াতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকার সর্বশেষ প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল, দ্রুততার সাথে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ কমছে এবং পুরো বিশ্বেই এটি দেখা যাচ্ছে।
আমেরিকার মেডিসিন সেন্টার মায়ো ক্লিনিকে কয়েক দশক ধরে এই রোগ নিয়ে অধ্যয়ন করা গ্রেগ পোল্যান্ড বলেন, 'ফ্লু সংক্রমণের যেন কোন রেকর্ডই নেই'।
২০২০-২১ ফ্লু'র মৌসুমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ জন আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অথচ মার্কিন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর তথ্য অনুসারে, তার আগের মৌসুমে এ রোগে নিহতের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার এবং ঠিক তার দুই মৌসুম আগে এ রোগে প্রাণহানি ঘটে ৩৪ হাজার লোকের।
প্রতি বছরের ফ্লু ভ্যাকসিন আগের বছরের ছড়িয়ে পড়া স্ট্রেইন বা ধরনের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়; ফলে আগামী বছরের জন্য রোগটির ভ্যাকসিন নিয়ে কিছুটা দ্বিধা তৈরি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে রোগটির কোন উপসর্গগুলো তীব্র হয়ে উঠবে তা এখনই কেউ আন্দাজ করতে পারছেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এই ভ্যাকসিনের জন্য প্রভাবশালী ফ্লু স্ট্রেইন সুপারিশ করেছিল, তবে সাধারণ সময়ের তুলনায় এবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। ফলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আবার অন্যভাবে বলা যায়, যেহেতু এবার ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সেভাবে ছড়াতে পারে নি, ফলে সামনে এর যে ভ্যাকসিন প্রস্তুত হতে চলেছে তা সাধারণ সময়ের চাইতে কয়েকগুণ বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আপাতত এই পর্যবেক্ষণে খুশি। তবে দীর্ঘদিন ধরে মানবদেহে ভাইরাসটির প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কেউ কেউ চিন্তিত রয়েছেন।
একটু বুঝিয়ে বলি- ধরুন, যদি আসছে দিনগুলোতে পৃথিবী থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমণ কমতে থাকে, তবে আগামীতে শিশুদের দেহে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যেতে থাকবে। জীবদ্দশার বাকি সময়টুকুতে তাদের কোন ধরনের স্ট্রেইনের (দুর্বল বা শক্তিশালী) সংক্রমণের মুখোমুখিই হতে হয় তার উপর ভিত্তি করেই বলা যাবে যে, এতে তাদের উপকার হলো নাকি না!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীব্যাপী ১৮টি অঞ্চলজুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ চিহ্নিত করেছে।
- সূত্র-সায়েন্টিফিক আমেরিকান