এলার্জি, ফ্লু ও করোনা হলে যেভাবে বুঝবেন

করোনা ভাইরাসে দুনিয়াজুড়ে ১ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ঘটেছে ব্যাপক প্রাণহানিও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসকে 'বৈশ্বিক মহামারী' হিসেবে ঘোষণা করেছে।
করোনা নিয়ে জনমনে উদ্বেগের শেষ নেই। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী? ভাইরাসটির টেস্টের রেজাল্ট পাওয়া সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া অন্যান্য সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই প্রাথমিক উপসর্গগুলোর দিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বর ও সর্দি কাশিতে ভুগলেই করোনা আক্রান্ত ধরে নিতে হবে? এলার্জি, ফ্লু ও করোনার উপসর্গে পার্থক্য কী? এসবের উত্তর জানতে সিএনএন কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজের অধ্যাপক এবং ভ্যাকসিন রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক ডা. গ্রেগ পোল্যান্ডের সঙ্গে।
চোখ চুলকায়? নাকে সর্দি? এলার্জির লক্ষণ!
পোল্যান্ড বলেন, ঋতু বদলের সময় অনেকেই সিজনাল এলার্জির শিকার হয়। চোখ চুলকানো, নাকে সর্দি- এগুলো এ ধরনের এলার্জির সাধারণ উপসর্গ। এ ধরনের এলার্জির প্রভাব সাধারণত নাক ও মাথার আশেপাশেই পড়ে। তবে যদি ফুসকুড়ি ওঠে, তাহলে ভিন্ন কথা!
করোনা ভাইরাস ও ফ্লুর প্রভাব
ফ্লু আর করোনা ভাইরাসের প্রভাব সারা শরীরের পড়ে। পোল্যান্ড জানান, এ দুটি রোগ শ্বাসযন্ত্রের গভীরে বিস্তার ছড়ায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও প্রভাব ফেলে। এ সময় হয়তো আক্রান্তের সর্দি না-ও হতে পারে, তবে দেখা দিতে পারে গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর কিংবা শ্বাসকষ্ট।
ডা. গ্রেগ পোল্যান্ড বলেন, শরীরের তাপমাত্রা খেয়াল রাখতে হবে। এলার্জির কারণে সাধারণত জ্বর হয় না। এমনকি শ্বাসকষ্টের জন্যও এলার্জি দায়ী নয়, যদি না আপনার অ্যাজমা বা এ রকম কোনো রোগ থাকে।
এলার্জির নিয়মিতই হাজিরা
পোল্যান্ড বলেন, যদি এই উপসর্গগুলো বছরের পর বছর ধরে, বারবার আপনার মধ্যে দেখা দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে এগুলো সম্ভবত সিজনাল এলার্জি। সেক্ষেত্রে যথাযোগ্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া ভালো।
করোনা ও ফ্লুর উপসর্গে ছাড় নয়
যদি করোনা ভাইরাস কিংবা ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তাহলে আপনি এতটাই ক্লান্তি, এতটাই চুলকানি অনুভব করবেন, আপনাকে বিছানায় পড়ে যেতে হবে। এভাবে খালি চোখেই করোনা ও ফ্লু এবং এলার্জির পার্থক্য টের পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন পোল্যান্ড। তিনি বলেন, এলার্জির কারণেও আপনি ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন, তবে এ কারণে আপনার মাংসপেশি কিংবা অস্থিসন্ধীতে ব্যথা করবে না।
সর্দিজ্বর ও হালকা ফ্লু আপনা-আপনি সারে
সর্দিজ্বর ও মাঝারিমানের ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তি অল্প কয়েকদিন বিশ্রাম ও পরিচর্যা নিলে এমনিতেই সেরে ওঠে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি বয়স্ক হলে কিংবা তার অন্যকোনো অসুস্থতা থাকলে হয়তো তাকে কিছুদিন বেশি ভুগতে হয়।
দিন যত যাবে, করোনা ও ফ্লু আক্রান্তের অবস্থা হবে তত খারাপ
আপনি যদি করোনা ভাইরাস কিংবা ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তাহলে সেটি কিছুদিন পর আপনা-আপনি সেরে যাবে- এমন আশা করবেন না। বরং দিনে দিনে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হবে। পোল্যান্ড বলেন, করোনা আক্রান্তের শ্বাসকষ্ট দিন দিন বাড়বে; অন্যদিকে, ফ্লু ডেকে আনতে পারে নিউমোনিয়ার মতো প্রাণঘাতী অসুখ। তাই দুয়েকদিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হয়ে বরং অবনতি হলে চিকিৎসকের কাছে হাজির হওয়া জরুরি।

এলার্জি, সর্দিজ্বর, ফ্লু ও করোনার প্রাথমিক উপসর্গে মিল
ডা. পোল্যান্ড বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এলার্জি, সর্দিজ্বর, ফ্লু ও করোনার প্রাথমিক উপসর্গ একই রকম হতে পারে। কিছু কিছু আক্রান্তের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস ও ফ্লুর প্রভাব এতই হালকা থাকে, তাদের পক্ষে পার্থক্য টের পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। উপসর্গগুলো হয়তো ঠিকমতো খেয়াল করেন না তারা।
পোল্যান্ড বলেন, 'যারা প্রবীণ ব্যক্তি, যাদের অ্যাজমা বা ফুসফুসের কোনো রোগ আছে, যারা হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিস আক্রান্ত এবং গর্ভবতী নারী- এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে।'
করোনা রোগীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা
যদি মনে করেন আপনি করোনায় আক্রান্ত, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে কিছু সাধারণ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে। কিছু নমুনা প্রশ্ন হাজির করেছেন পোল্যান্ড-
- সম্প্রতি কোনো ভ্রমণ করেছেন? করে থাকলে, কোথায় গিয়েছিলেন?
- আপনার পরিবার বা কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ কি সম্প্রতি কোনো ভ্রমণ থেকে ফিরেছেন? কোথায় গিয়েছিলেন তারা?
- করোনা উপদ্রুত এলাকা থেকে কেউ কি আপনার বাসায় এসেছে?
- আপনি কি কোনো প্রমোদতরীতে উঠেছিলেন?
- আপনার আবাস কি করোনা উপদ্রুত এলাকার কাছাকাছি?
এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন পোল্যান্ড।
করোনা হয়নি বলে বেঁচে গেছেন, তা নয়
পোল্যান্ড বলেছেন, উপসর্গ দেখা দিলেও আপনি করোনায় আক্রান্ত নন- এটা নিশ্চিত হওয়ার পর চুপচাপ বসে থাকবেন না। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক মাসে ৩ কোটি লোক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ৩ থেকে ৫ লাখ লোকের অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার রোগী।