একশো’র বেশি বিজ্ঞান-জার্নাল ইন্টারনেট থেকে উধাও
গবেষণা জার্নালের মাধ্যমে বিজ্ঞানের বিভিন্ন সময়ের অগ্রগতি, আবিষ্কার লিপিবদ্ধ করা হয়। গত ২৭ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুক্ত প্রবেশাধিকারের ১৭৬ টি জার্নাল ও জার্নাল গুলোতে প্রকাশিত গবেষণা পত্র ইন্টারনেট থেকে উধাও হয়ে গেছে।
হেলসিংকির হানকেন স্কুল অব ইকোনমিকসের তথ্য বিজ্ঞানী ও প্রতিবেদনটির সহ লেখক মাইকেল লাকসো বলেন, "বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার, বিশেষত ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়েছে এমন বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার ক্ষয়ক্ষতি কাম্য নয়।"
২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইন্টারনেট থেকে উধাও হয়ে যাওয়া ১৭৬টি গবেষণাপত্রের নাম নাম উল্লেখ করেছেন মাইকেল ও তার সহকর্মীরা। এই জার্নালগুলোর অর্ধেকের বেশি ছিল সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিষয় সংক্রান্ত, বাকিগুলো জীবতত্ত্ব, ভৌতবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও গণিত সংক্রান্ত। এরমধ্যে ৮৮টি জার্নাল কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্লেষণী প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, অন্য আরও ৯০০ টি জার্নাল এখনো অনলাইনে পাওয়া গেলেও, গবেষণাপত্র প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
লাকসো জানান, ইন্টারনেট থেকে জার্নালগুলোর উধাও হয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করতে পারে। প্রকাশনার ওয়েবপেইজ চালু রাখার জন্য অর্থ পরিশোধ বন্ধ করে দিতে পারেন প্রকাশক। যেই প্রতিষ্ঠানের অনলাইন প্লাটফর্মে জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে, সেই সাইট বা সার্ভারের আপডেট করার সময়ও মুছে যেতে পারে।
এধরণের ঘটনায় ডিজিটাল আর্কাইভে জার্নাল সংরক্ষণ করতে হয়। ১৯৯৯ সালে স্ট্যানফোর্ড লাইব্রেরির চালু করা 'লটস অফ কপিস কিপ স্টাফস সেফ' (এলওসিকেএসএস) প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ কাজ করা হয়। কোনো গবেষণাপত্র বা জার্নালের বেশ কয়েকটি অনুলিপি বানিয়ে সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রোগ্রামের আওতাধীন গ্রন্থাগারগুলো বছরপ্রতি অর্থ পরিশোধ করে তাদের সংগ্রহ সংরক্ষণের জন্য। গত দুই যুগে পোর্টিকো, পাব্লিক নলেজ প্রোজেক্টস প্রিজারভেশন নেটওয়ার্ক সহ এরকম আরও কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্তমানে দশ হাজারের বেশি গবেষণাপত্র সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে লাকসো জানান, অনেক জার্নালই এ পদ্ধতিতে নজর এড়িয়ে যাচ্ছে।
এই প্রতিবেদনটির সাথে যুক্ত ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনের পিএইচডি শিক্ষার্থী লিসা ম্যাথিয়াস জানান, কোনো জার্নাল প্রকৃতপক্ষেই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না, এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া কঠিন কাজ। কারণ মুক্ত প্রবেশাধিকারের জার্নালের তথ্য সংরক্ষণের জন্য আলাদা কোনো একক ডাটাবেইজ নেই। ডিরেক্টরি অব ওপেন অ্যাক্সেস জার্নালস (ডিওএজে) এর মতো ডাটাবেইজে কোনো জার্নালের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য রাখা হয়না। ঠিক কতোটি জার্নাল উধাও হয়ে গেছে তা বের করতে দলটি ডিওএজে, আলরিচসওয়েব ও স্কোপাস থেকে আলাদাভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তারপর তারা তাদের চিহ্নিত নামগুলো কিপারস রেজিস্ট্রিতে আছে কিনা তা খুঁজে বের করেন, কিপারস রেজিস্ট্রিতে অনলাইনে সংরক্ষিত জার্নালের তথ্য রাখা হয়। পরিশেষে তারা ইন্টারনেট আর্কাইভস ওয়েব্যাক মেশিনে খুঁজে দেখেন, জার্নালগুলো কবে প্রকাশিত হয়েছিল এবং শেষ কবে ইন্টারনেটে পাওয়া যেতো। কোনো জার্নালের ৫০ শতাংশেরও কম অনলাইনে সহজলভ্য থাকলে সেগুলোকে এই তালিকায় ফেলা হয়েছে।
১৭৬টি জার্নালের বেশিরভাগই প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার ৫ বছরের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। জার্নালগুলোর এক তৃতীয়াংশ শেষ প্রকাশনার এক বছরের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। এই হিসাব থেকেই গবেষকরা আরও ৯০০টি জার্নালের উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা করেন।
লাকসো জানান, কিনে পড়তে হয় এমন জার্নালগুলো এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ তাতে তথ্য সংগ্রহের জন্য ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হতো। এটি সহ অন্য আরও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে গবেষণাটিতে সংখ্যা কম আসতে পারে। "কোনো জিনিসের অস্তিত্ব-ই না থাকলে তা খুঁজে বের করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য কাজ, তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আশা করছি ভবিষ্যতে পরিমার্জিত ও স্বয়ংক্রিয় উপায়ে এটি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।"
'লটস অফ কপিস কিপ স্টাফস সেফ' প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক থিব গুচার্ড কালিন বলেন, অনেক জার্নাল বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থার সুবিধা পাচ্ছেনা এটি আশ্চর্যজনক নয়। অনেকেই ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করলেও, ডিজিটাল সংরক্ষণের উদ্যোগে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কম বিনিয়োগ হয়। তবে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান এই প্রকাশনাগুলো খুঁজে বের করে অনলাইনে সংরক্ষণের কাজ করছে।
লিসা ম্যাথিয়াস জানান, নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া জার্নালগুলোর সংরক্ষণে প্রকাশক, গবেষক, গ্রন্থাগারিক ও সংরক্ষণ পরিসেবা প্রতিষ্ঠান সকলেরই দায়িত্ব আছে।