অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন? জেনে নিন আপনার সম্ভাব্য সমস্যা
বুক ধড়ফড় করলে সাধারণত চিন্তার কিছু নেই। তবে, অনিয়ত হৃৎস্পন্দন প্রায়ই অ্যাট্রিয়াল ফিবরিলেশনের সংকেত হতে পারে। তাই এরকম অবস্থায় অপেক্ষা না করে আপনার উচিত হবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
বুক খুব দ্রুত ধড়ফড় করতে থাকলে তা অ্যাটরিয়াল ফিবরিলেশন বা এফিবের লক্ষণ হতে পারে। এ অবস্থায় দুর্বল হৃদপিণ্ড যখন শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালনে ব্যর্থ হয়, তখন স্ট্রোক কিংবা হার্ট ফেইলরের মতো মারাত্মক কিছুও ঘটতে পারে।
হৃদপিণ্ড সংকোচন প্রসারণের সময় সাধারণত তা নির্দিষ্ট গতি অনুসরণ করে থাকে। যখন আপনার এফিব থাকে, তখন হ্রদপিণ্ডের ওপরের প্রকোষ্ঠ অ্যাট্রিয়া খুব দ্রুত ও অনিয়মিত স্পন্দিত হতে থাকে। নিম্ন প্রকোষ্ঠে তা যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না বলেও জানান শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফিনবার্ফ স্কুল অব মেডিসিনের কার্ডিওলজির অধ্যাপক রবার্ট বোনো।
এই অবস্থা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে। বুক ধড়ফড় করার পাশাপাশি ক্লান্তিবোধ, মাথা হালকা লাগা, নিঃশ্বাস সংক্ষিপ্ত হয়ে আসা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে তা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পরিণত হয়।
এফিবের ঝুঁকির অন্যতম একটি কারণ হলো বয়স। ৭৫ বছর বয়সীদের ১০ শতাংশের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা যায়। অন্যান্য ফ্যাক্টরের মধ্যে জেনেটিক্স, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যালকোহল এবং তামাক সেবন ইত্যাদি বিষয় প্রভাব রাখতে পারে।
শনাক্তকরণত
এফিবের লক্ষণ দেখা গেলে ডাক্তার আপনার কথা শুনে প্রথমেই সম্ভবত ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইকেজি) করার পরামর্শ দিবেন। হোল্টার মনিটরের সাহায্যে ভ্রাম্যমাণ ইকেজি ডিভাইস ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে পরে থাকতে হবে। এর মধ্য দিয়ে এফিব কতবার কতক্ষণ ধরে চলে, তা সামনে আসে।
তবে, এফিবে ভোগা সত্ত্বেও ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ কোনো উপসর্গ বোধ করেন না বলে জানান লস অ্যাঞ্জেলসের সিডার সাইনাই স্মিদ হারট ইন্সটিটিউটের সেন্টার ফর কারডিয়াক অ্যারেস্ট প্রিভেনশনের পরিচালক সুমিত চাগ।
আর তাই প্রায়ই কেবল তা বার্ষিক বা রুটিন কোনো শারীরিক পরীক্ষা যেমন কোলোনোস্কোপির সময় মনিটর করলে ধরা পড়ে।
সমাধান কী?
গবেষণায় দেখা গেছে এফিবের ট্রিটমেন্ট এবং প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত এক্সারসাইজ, ডায়েট মেনে চলা, অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণে আনা ইত্যাদির মাধ্যমে এফিব প্রতিরোধ ও তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে জানান ডা. চাগ।
বয়স ও লক্ষণের ওপর নির্ভর করে ডাক্তার বিটা ব্লকার বা অ্যান্টিঅ্যারিদমিক জাতীয় কিছু দিতে পারেন। এমনকি স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ফিরে পেতে আপনার ইলেকট্রিকাল কার্ডিওভার্সনের মতো বৈদ্যুতিক শকেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকলে ডাক্তার রক্ত পাতলা করার পরামর্শ দিবেন। "আমরা মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে হৃদপিণ্ডের চিকিৎসা করি," বলেন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের কার্ডিওলজিস্ট ড্যানিয়েল ক্যানটিলন।
আগে ওয়ারফারিন ছিল বহুল ব্যবহৃত একমাত্র ওষুধ, তবে তার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
পরিশেষে, এটাই মাথায় রাখুন যে, "নিয়ন্ত্রিত জীবন ও মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে এফিবে ভোগা অধিকাংশ মানুষই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন," বলেন ডা. চাগ।
- সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট