মগের মুলুক - মানে কি?

এই প্রবচনের মানে বিশৃঙ্খল অবস্থা,অরাজক দেশ, তাই তো? এতে আবার নতুন করে কি বলার আছে?
কিন্তু বলুন তো এই ‘মগ’ কি জিনিস? এতে করে পানি খায় না মাথায় পানি ঢালে? আর মুলুকটা মগেদেরই বা কেন হলো?
ভৌগোলিকভাবে আরাকান বা বর্তমানের মায়ানমার রাজ্যটি হলো মগেদের দেশ,মানে আক্ষরিক অর্থে মায়ানমার হলো মগের মুলুক। তবে মগদের সঙ্গে যুক্ত এই কথাটি ব্যবহার করা হয় যথেচ্ছাচার আর অরাজকতার বিষয়টি বোঝাতে।
১৬২৫ সালের দিকে আমাদের বঙ্গভূমি ছিল খুব সমৃদ্ধশালী। তখন পর্তুগিজ আর মগ জলদস্যুরা পূর্ব ও নিম্ন বঙ্গের অনেক স্থানে খুব লুটপাট চালায়। এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে তাদের ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
তখন এ ভূখণ্ড শাসন করত মুঘল সুবেদাররা। তারা এসেছিল সেই আফগান ভূমি থেকে আর তাদের শাসনের কেন্দ্র ছিল দিল্লি। ফলে জলস্থান মানে সমুদ্র বা নৌপথে যুদ্ধ করতে পারতো না।
এদিকে মগেরা ছিল ভয়ঙ্কর জলদস্যু,নৌপথে যুদ্ধ করে খুব পটু। তাই মুঘল সুবেদাররা কখনওই মগেদের সঙ্গে পেরে উঠেনি।
তখন খান-ই-দুরান ছিলেন ঢাকার সুবেদার। কথিত আছে মানুষ হিসেবে তিনি একটু দুর্বল চিত্তের অধিকারী ছিলেন।মগ জলদস্যুদের ভয়ে তিনি রাজমহলে পালিয়ে যান।
এই সুযোগে মগরা এই অঞ্চলে ইচ্ছেমতো লুটপাট, অত্যাচার নির্যাতন করে।
মুঘল আমলের শেষেও মগেদের এই অত্যাচার অব্যাহত ছিল। পুরো বাংলা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, তারা আসামেও অনেক অত্যাচার করে। ১৮২৪ সালের দিকে এই অত্যাচার চরম আকার ধারণ করে। তারপর তাদের সঙ্গে শাসক এবং সাধারণ মানুষের অনেকগুলো যুদ্ধ হয়। ১৮২৪, ১৮৫২ এবং ১৮৮৫ সালের যুদ্ধের পরে মগেদের শক্তি বেশ কমে আসে। এভাবে আস্তে আস্তে তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পায় এই ভূখণ্ডের মানুষ।
যদিও এক সময় ঠিকই মগদের অত্যাচার কমেছে, তবু প্রায় দু’শ বছর সহ্য করতে হয়েছিল এই অত্যাচার।
আর সেই তখন থেকেই যথেচ্ছাচার আর অরাজকতার অবস্থাকে বোঝাতে এই প্রবাদ ব্যবহার করা হয়।আজও যখন আমাদের সমাজে কেউ যেমন-তেমনভাবে অন্যের উপর প্রভাব খাটায়, অত্যাচার করে, দুর্বল মানুষকে কষ্ট দেয় তখন মগেদের সময়ের কথার সঙ্গে সেটা তুলনা করা হয় আর বলা হয়, মগের মুল্লুক।