কেন বেসবল কিংবদন্তির ছবি সাড়ে ১২ কোটি টাকায় বিক্রি হলো?
'শুলেস জো' নামে পরিচিত কিংবদন্তি বেসবল খেলোয়াড় জো জ্যাকসনের একটি স্বাক্ষর করা ছবি গত বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ১.৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ১২ কোটি টাকারও বেশি।
এখন পর্যন্ত এটিই সর্বকালের সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া ক্রীড়াবিষয়ক স্বাক্ষরকৃত ছবির রেকর্ড।
কিন্তু ঠিক কী কারণে এমন বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হলো ছবিটি?
প্রথমত, 'শুলেস জো'-র যেকোনো ছবি খুঁজে পাওয়াই অত্যন্ত দুষ্কর বিষয়। তিনি মেজর লিগ বেসবলে খেলেছেন ১৯০৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত, যে যুগে ফটোগ্রাফ ছিল অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য বস্তু। প্রযুক্তি তখনো এখনকার মতো এত বেশি সার্বজনীন হয়ে ওঠেনি যে কেউ চাইলেই নিজের ছবি তুলে রাখতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, জ্যাকসনের সত্যিকারের স্বাক্ষরকৃত ছবি পাওয়া আরো বেশি অসম্ভব ব্যাপার, কেননা দক্ষিণ ক্যারোলাইনার এক খামারে বেড়ে ওঠা এই কিংবদন্তি খেলোয়াড় ছিলেন অশিক্ষিত। স্বভাবতই তিনি খুব বেশি অটোগ্রাফে স্বাক্ষর করেননি। জ্যাকসনের পরিবারের কাছে এমন খুব কম সংখ্যক নথি বা দলিলই অবশিষ্ট রয়েছে, যেগুলোতে জ্যাকসনের নিজের করা স্বাক্ষর ছিল। এছাড়া জ্যাকসনের স্বাক্ষর করা গুটিকয়েক বেসবলও রয়েছে তাদের কাছে।
ফলে জ্যাকসনের ছবি, তা-ও আবার তাঁর স্বাক্ষরকৃত, এমন কম্বিনেশনের সন্ধান পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। আর যদি সেরকম কিছু কারো হাতে এসেই যায়, সেটির আকাশচুম্বী দাম হওয়াই স্বাভাবিক।
জ্যাকসনের স্বাক্ষরকৃত ছবিটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা হান্ট অকশনসের সভাপতি ডেভ হান্ট এক সাক্ষাৎকারে জানান, 'আমরা ভেবেছিলাম এটির দাম যদি ৫ লাখ থেকে এক মিলিয়নের মধ্যে ওঠে, তাহলেই সেটি হবে একটি দারুণ সাফল্য। এই পরিমাণ অর্থেও ছবিটি রেকর্ড গড়তে পারত। কিন্তু যখন ছবিটির দাম এত উপরে উঠে গেল, আমি বলব না আমি বিস্মিত হয়েছি। সেটি সঠিক শব্দ হবে না। আসলে, এটি ছিল একটি হতবুদ্ধিকর ঘটনা।'
তিনি আরো বলেন, 'এটি খুবই, খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি রেকর্ড, যা পুনরায় ভাঙাটা নিশ্চিতভাবেই হতে চলেছে অসাধারণ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।'
উল্লেখ্য, জ্যাকসন ছিলেন ১৯১৯ সালের কুখ্যাত শিকাগো হোয়াইট সক্স দলের সদস্য। সিনসিনাটি রেডসের বিপক্ষে ওয়ার্ড সিরিজের ম্যাচগুলো পাতিয়েছিল তারা। ওয়ার্ল্ড সিরিজে ১২টি হিট থাকার পরও, জ্যাকসন হলেন সেই আটজন খেলোয়াড়ের একজন, যাদেরকে ১৯২০ মৌসুমের পর মেজর লিগ বেসবল থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।
রেকর্ড সৃষ্টিকারী ছবিটি তুলেছিলেন ক্লিভল্যান্ড প্লেইন-ডিলারের ফটোগ্রাফার ফ্র্যাঙ্ক স্মিথ। স্মিথ গোটা দলেরই ছবি তুলছিলেন, এবং প্রতিটি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছিলেন ভবিষ্যতে ছবিগুলো প্রকাশের সময় কাজে লাগানোর জন্য। হান্টের মতে, যেহেতু স্মিথের ছিল খেলার মাঠ থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের মাঝে অবাধ বিচরণ, এজন্যই তিনি পেরেছিলেন জ্যাকসনের কাছ থেকে স্বাক্ষরটি আদায় করতে।
- (সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট)