ইউএস ওপেন: নাদালের সামনে রেকর্ডের হাতছানি
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ভেজা আর ঝড়ো হাওয়ার মধ্যেই চলছে ইউএস ওপেন, টেনিসের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর। বছরের প্রধান চারটি গ্র্যান্ড স্লামের শেষেরটির আয়োজন হয় এই সেপ্টেম্বরে। বাকি তিনটি হল, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, উইম্বলডন ও ফরাসী ওপেন।
এবারের ইউএস ওপেন পুরোটা গড়িয়ে এখন ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে। শুক্রবারে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে স্পেনিশ তারকা রাফায়েল নাদাল জিতেছেন। তরুণ ইতালিয়ান খেলোয়াড় মেট্টিও বেরেট্টিনিকে সরাসরি সেটে হারিয়ে রোববারের ফাইনালের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী এখন তিনি।
সেটা ৩৩ বছর বয়সী এই কিংবদন্তীর জন্য খুব বড় খবরও নয়। ফ্লাশিং মিডোতে (ইউএস ওপেন) তিন বার শিরোপা জিতেছেন তিনি। বড় খবর হচ্ছে, এবারের ফাইনালে জিতলে তিনি ক্যারিয়ারের ১৯তম শিরোপাটি পাবেন। আর সেটি হবে আরেক টেনিস কিংবদন্তী রজার ফেদেরারের ২০তম শিরোপা জেতার রেকর্ডের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া।
এবারের ইউএস ওপেনে নাদাল ছিলেন দ্বিতীয় বাছাই। সে তুলনায় ইতালিয়ান তরুণ বেরেট্টিনি আন্ডারডগ। তিনি ছিলেন ২৪তম বাছাই। কোনো গ্র্যান্ড স্লাম জেতা তো দূরের কথা, বড় কোনো আসরের সেমিফাইনালেই খেলেননি এর আগে।
তবু নাদালের সঙ্গে তার দু’ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের লড়াইটা ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। ৭-৬(৬). ৬(৪), ৬-১ এ নাদালের এই জয়ের পর ফাইনালে নাদালকে লড়তে হবে উদীয়মান রুশী তারকা দানিল মেদভেদেভের বিরুদ্ধে।
ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী দানিলকে এই ট্যুরের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন মনে করছেন নাদাল। তাই তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের সেরাটা দিতে চান স্পেনিশ তারকা।
তেইশ বছর বয়সী মেদভেদেভ কেবল প্রতিভাবান নন, মেজাজীও বটে। জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল খেলতে আসার আগের রাউন্ডগুলোতে অনেক কাণ্ডই ঘটিয়েছেন। তৃতীয় রাউন্ডের এক খেলার পর রীতিমতো ভিলেনে পরিণত হন তিনি। একজন বলবয়ের কাছ থেকে তোয়ালে নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশে মধ্যমা প্রদর্শন করেন।
তবে পুরুষ এককের প্রথম সেমিফাইনালে বুলগেরিয়ান তরুণ গ্রিগর দিমিত্রভকে হারিয়ে ফাইনালে পৌছে আবার খুশি হয়ে জানালেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ভালোবাসেন। কারণ এখানে আসার আগে তো কখনও ভাবেননি যে, তিনি ফাইনালে পৌছুবেন। আর সেটিতে খেলবেন রাফার (নাদাল) বিরুদ্ধে।
তরুণদের হাতে টেনিসে তাদের প্রজন্মের একচেটিয়া আধিপত্য খুইয়ে ফেলা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন নাদাল। তিনি মনে করেন, যথেষ্ট হয়েছে। ১৫ বছর ধরে খেলছেন। তার নিজের বয়স তেত্রিশ, নোভাক জোকোভিচের ৩২, রজার ফেদেরারের ৩৮। আর কত? তাদের প্রজন্মের হাত থেকে ব্যাটনটা এখন তুলে দিতেই হবে নতুনদের হাতে।
“এখন খেলছি কেবল নিজের জন্য,” বললেন নাদাল। তার মানে, আরও দু’চারটে গ্র্যান্ড স্লাম জিতে কেবল রেকর্ড বাগানো। তবে সেজন্য চাপ নিচ্ছেন না তিনি।
সুইস কিংবদন্তী রজার ফেদেরার আটত্রিশ বছর বয়সেও দারুণ খেলছেন। রেকর্ড বিশটি গ্র্যান্ড স্লাম জেতা ফেদেরারের আরও গ্র্যান্ড স্লাম বাগানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন গ্রিগর দিমিত্রভ। তার কাছে ফেদেরার হেরেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। ফলে দিমিত্রভ আর মেদভেদেভ, দুই তরুণ খেলেছেন প্রথম সেমিফাইনালে। যেটিতে জিতে এসেছেন মেদভেদেভ।
ফেদেরারের বন্ধু ও টেনিসের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাদাল যদি তরুণ তুর্কি মেদভেদেভেকে হারিয়ে দিতে পারেন ফাইনালে, তবে উনিশটি গ্র্যান্ড স্লাম ঝুলিতে পোরার পর আরেকটির জন্য আবার তাকে খেলতে হবে। সেটি হলেই বন্ধুকে ছুঁয়ে দেবেন তিনি।
তবে এখানেই শেষ নয়। নাদালদের প্রজন্মের টেনিস তারকারা এতই প্রতিভাবান যে, তাদের মধ্যে গ্র্যান্ড স্লাম জেতা নিয়ে বিশাল লড়াই। টেনিসের র্যাংকিংয়ে এখনও শীর্ষস্থান দখলে রেখেছেন সার্বিয়ান তারকা নোভাক জোকোভিচ। তিনি ১৬টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতে রেখেছেন। ফেদেরারের রেকর্ডের দিকে এক-পা করে তিনিও এগুবেন, এটাই স্বাভাবিক। যদিও কাঁধের আঘাতের জন্য এবার খেলার মাঝপথে সরে পড়তে হয়েছিল তাকে।
পুরুষদের টেনিসের বিগ থ্রিএর (ফেদেরার-নাদাল-জোকোভিচ) মধ্যে একমাত্র স্পেনিশ তারকাই ফাইনালে টিকে রয়েছেন। জানালেন, ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি সুখী। যা অর্জন করেছেন তা নিয়েও সন্তুষ্টি রয়েছে তার।
“রোববারে যদি জিতে যাই তবে তো সেটা দারুণ রোমাঞ্চকরই হবে। না জিতলেও সমস্যা নেই। ভবিষ্যতে আরও জেতার সুযোগ তোলা রইল।”
নাদাল চোট সেরে উঠেছেন সদ্যই। ক্যারিয়ারজুড়ে এরকম নানা সমস্যায় ছিলেন তিনি। কেবল আঘাত আর আঘাত। এতসব সয়েও একগাদা শিরোপা দখল করে রাখা স্পেনিশ এই তারকা তাই চিরকালই ‘যোদ্ধা নাদাল’।
মেদভেদেভ পঞ্চম বাছাই। তার ওপর তিনি এখন আছেন ক্যারিয়ার আর উদ্যমের তুঙ্গে। আন্দ্রে আগাসি ও ইভান লেন্ডল তাদের সোনালী সময়ে যেভাবে খেলেছেন সেভাবে খেলে যাচ্ছেন রুশী তরুণটি। তাকে হারানো তাই কঠিনই বটে।
কিন্তু মেদভেদেভও জানেন, রাফা হলেন টেনিসের ইতিহাসের অন্যতম সেরা চ্যাম্পিয়ন। জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে তার মুখোমুখি হওয়া?
বিষয়টাকে উপভোগ্যই মনে করছেন তরুণ মেদভেদেভ।
দেখা যাক কে জেতেন এবার। তরুণের হাতে পতাকা নাকি যোদ্ধা নাদালের আরেকটি বিজয়।