জাতীয় স্কুল ক্রিকেটে দেশসেরা রংপুরের শিশু নিকেতন

নারায়ণগঞ্জের শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠের বাউন্ডারি রোপের বাইরে দাঁড়ানো আলোকচিত্রীরা ক্যামেরা তাক করেই রেখেছিলেন। মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শেষ উইকেটটি পড়তেই স্টাম্প তুলে ভোঁ দৌড় রংপুরের শিশু নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রিকেটারদের। বুনো উল্লাসে তাদের এগিয়ে আসতে দেখে আলোকচিত্রীরা বাধ্য হয়েই জায়গা ছেড়ে দিলেন। এরপর চলতো থাকলো শিশু নিকেতনের শিরোপা উদযাপন।
দেশের খুদে ক্রিকেটারদের এমন বাধভাঙা উল্লাস স্বাভাবিকই। ৬৪ জেলার ৩৫০টি স্কুলের মধ্যে লড়াই করে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতা তো মুখের কথা নয়। চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতে তাই আনন্দপুরীতে হারিয়ে যেত চাইলো তারা। সোমবার শিরোপার লড়াইয়ে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে ৫৯ রানে হারিয়ে বিজয়ের হাসি হাসে শিশু নিকেতন।
শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেটের ফাইনালে ব্যাটে-বলে দাপট দেখায় শিশু নিকেতন। তাদের সামনে সামান্যতম লড়াইও কতে পারেনি মেহেরপুরের বিদ্যালয়টি। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে শিশু নিকেতন। ৩৭.১ ওভারে ১০২ রানে গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। আহেমদ তেজান সর্বোচ্চ ২৮ ও সাদ ২৪ রান করে।
জবাবে শিশু নিকেতনের অধিনায়ক শেখ ইমতিয়াজ শিহানের স্পিন ঘূর্ণিতে ৫০ রানও পেরোতে পারেনি মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ২০.২ ওভারে ৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সর্বোচ্চ ১২ রান করে সিয়াম আহমেদ হিমেল। বাকিদের কেউই ২ অঙ্কে যেতে পারেনি।
শিশু নিকেতনের লেগ স্পিনার শিহাব ৫ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়। ৩৩ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছে সে। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও বোগলদাবা করে খুদে এই ক্রিকেটার। ৩৮৩ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছে বাড্ডা আলতাফুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাশকাত মাহিন রুদ্র।
শিরোপার সঙ্গে ব্যক্তিগত পুরস্কারের ছড়াছড়ি, সতীর্থদের নিয়ে শিরোপা উদযাপনে ব্যস্ত শিহাব ফাঁকে ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলছিল। অন্যদিকে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শিবিরে তখন কান্নার রোল। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল দলটির ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক ইশতিয়াক আহমেদ জিয়ানের কান্না তো থামছিলই না। প্রতিপক্ষের শিরোপা উদযাপন দেখছিল আর রুমাল দিয়ে চোখ মুছে যাচ্ছিল সে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত দুই বছর স্কুল ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়নি। নতুন মোড়কে ৩৫০ স্কুল নিয়ে এবারের আসর মাঠে গড়ায়। জেলা পর্যায়ে ম্যাচ হয় ৫৮১ টি। এরপর জেলা চ্যাম্পিয়নদের অংশগ্রহণে বিভাগীয় রাউন্ডে হয় ৫৭টি ম্যাচ। ৭ বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো চাম্পিয়নদের নিয়ে মাঠে গড়ায় ন্যাশনাল রাউন্ড। সব মিলিয়ে ৬৪ জেলায় মোট ৬৫৩ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।