এবারও কি সাকিবের কাঁধে অধিনায়কত্ব চাপিয়ে দেওয়া হলো?

৩৫ ছাড়িয়ে যাওয়া কোনো ক্রিকেটারের কাছে তিন ফরম্যাটে টানা খেলে যাওয়াটা কঠিন মনে হতেই পারে। ফরম্যাট বেছে খেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি। সাকিব আল হাসান সেই পথেই হেঁটেছেন। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেললেও বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার গত কয়েক বছর ধরে টেস্টে অনিয়মিত। তার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর ২০২০ সালের শেষ ভাগ থেকে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১৩টি, সাকিব খেলেছেন কেবল ৫টি।
চোট, আইপিএলের জন্য বিরতি, পারিবারিক কারণে ছুটি নেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে টেস্টে নিয়মিতভাবে সাকিবকে দলে পায়নি বাংলাদেশ। টেস্ট খেলার প্রতি অনিহার কথা মুখ ফুটে না বললেও ক্রিকেটের অভিজাত এই ফরম্যাট থেকে তার দূরে থাকার ব্যাপারটি 'অনিহা' হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে থেকেই সাকিব যে টেস্ট খেলতে চান না, তা জানিয়েছিলেন খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
২০১৭ সালে সাকিব যখন দলের কাছে টেস্টের প্রতি অনিহার কথা জানান, ঠিক তখনই 'জোর করে' তার কাঁধে তুলে দেওয়া হয় নেতৃত্ব। এবারও যেন সেটারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো। টেস্টে যাকে নিয়মিতভাবে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় থাকে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট, সেই সাকিবকেই ঘোষণা করা হলো টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে। এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, মুমিনুল হককে সারিয়ে জোর করেই কি সাকিবের কাঁধে অধিনায়কত্ব তুলে দেওয়া হলো?
২০২১ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে ছুটি নেন সাকিব। দলের দুঃসময়ে তার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছুটি নেওয়ায় রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান বিসিবি সভাপতি। সে সময় নাজমুল হাসান পাপন দাবি করেন, টেস্টের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই সাকিবের।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাকিবের টেস্ট খেলার ব্যাপারে নাজমুল হাসান বলেছিলেন, 'সাকিব তো আরও তিন বছর আগেই খেলতে চায়নি টেস্ট। ও তো এমনিতেই টেস্টের প্রতি অতো আগ্রহ দেখায়নি, চাচ্ছিল না খেলতে। তখন ওকে টেস্ট অধিনায়ক করে দেওয়া হলো। জোর করে তো চেষ্টা করলাম। কিন্তু জোর করে খেলানোর মানে হয় না। তাতে করে আমরা ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারছি না, পেছনের দিকে যাচ্ছি। এখন কাউকে জোর করব না। আমরা যখন জানব, এই কজন খেলোয়াড় টেস্ট খেলতে চায় না, তখন তাদের বিকল্প নিয়ে চিন্তা করতে হবে আমাদের।'
চলতি বছর বাংলাদেশ টেস্ট খেলে ফেলেছে ৬টি, সাকিব খেলেছেন মাত্র ২টি। অন্যান্য ফরম্যাটেও তাকে পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশায় থাকে দল। গত ৮ মে নাজমুল হাসান বলেন, 'সব সংস্করণে সবাই ওকে (সাকিব) চায়, কিন্তু ওকে পাওয়াটা কঠিন। আমরা আসলে নিজেরাই জানি না, ও কোনটা খেলবে কোনটা খেলবে না। ওর সাথে আমি যখন কথা বলি, তখন মনে হয় ও সবগুলোই খেলতে চায়। কিন্তু আবার যখন খেলা আসে, তখন দেখা যায় ওর সমস্যা। কিছু না কিছু সমস্যা থাকে, এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।'
বৃহস্পতিবার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সাকিবকে নাম ঘোষণা করা হলো। অধিনায়ক করেও সাকিবকে সব সিরিজ ও টেস্টে নিয়মিতভাবে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় দল। বিসিবি সভাপতি জানালেন, তিনি জানতে পেরেছেন সাকিব নিয়মিত খেলবেন। এ নিয়ে নাজমুল হাসানও নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না, 'আমার সাথে যা কথা হয়েছে। আমার সাথে না শুধু, অনেকের সাথে কথা হয়েছে। আমি যতটুক জানতে পেরেছি, সে খেলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সিরিজের পর জিম্বাবুয়ের সাথে খেলা আছে। সেখানে সাকিব অনিশ্চিত।'
'অপশন' না থাকায় বিপাকে পড়েই সাকিবকে অধিনায়কত্ব দিতে হয়েছে বিসিবিকে। না হলে যে ক্রিকেটার টেস্টে সবচেয়ে কম মনোযোগী, তাকেই টেস্ট অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই নিতো না দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। টেস্টে নেতৃত্বের জন্য তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমকেও বিবেচনা করা হয়, কিন্তু সিনিয়র এই দুই ক্রিকেটারের কেউই রাজি হননি।
আবার লিটন দাস বা মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে এখনই দল ছাড়তে চায় না বিসিবি। সব মিলিয়ে তাই সাকিবের বাইরে গিয়ে ভাবার উপায় ছিল না বিসিবির। দলের অবস্থা বিবেচনায় 'না' করার উপায় ছিল না সাকিবেরও। তাই মনের বিরুদ্ধেই তৃতীয় দফায় অধিনায়কত্ব নিতে হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারকে।