কোর্তোয়ার মুঠোয় রিয়ালের ১৪তম শিরোপা

প্রথমার্ধে দাপুটে ফুটবল খেললো লিভারপুল। রিয়াল মাদ্রিদ পাত্তাই পেল না, ইংলিশ ক্লাবটির আক্রমণ ফেরাতে ফেরাতেই ক্লান্ত স্প্যানিশ জায়ান্টরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ থেকে অন্য চিত্র। লিভারপুল আক্রমণ সাজালেও তা সামলে হানা দিল লাস ব্লাঙ্কোসরা। ভিনিসিউস জুনিয়র খুঁজে পেলেন ঠিকানা। এরপর চীনের প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। মোহামেদ সালাহ, সাদিও মানেদের কোনো চেষ্টাই কাজে এলো না। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলো রিয়াল মাদ্রিদ।
শনিবার রাতে প্যারিসের জাতীয় স্টেডিয়ামে উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের সেরা দল রিয়াল নিজেদের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করে নিলো। রেকর্ড ১৪তমবারের মতো ইউরোপ সেরা আসরে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তুললো রিয়াল। ইতিহাসের প্রথম কোচ হিসেবে চারটি ইউরোপিয়ান কাপ জিতলেন রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
অথচ পরিসংখ্যানের তাকালে ম্যাচের ফল অবিশ্বাস্য মনে হবে। বল দখলের লড়াই থেকে থেকে শুরু করে গোল মুখে শট নেওয়া, কর্নার আদায় করায় অনেক এগিয়ে ছিল লিভারপুল। ম্যাচে ৫৪ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে তারা।
মুহুর্মুহু আক্রমণ সাজানো লিভারপুলের নেওয়া ২৪ শটের ৯টি শট লক্ষ্যে ছিল। রিয়াল শটই নেয় ৪টি, এর মধ্যে ২টি শট লক্ষ্যে ছিল। লিভারপুলের অবিরত আক্রমণ থেকে রিয়াল রক্ষা পায় কোর্তোয়ার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে ফাইনালে ৯টি গোল বাঁচানোর দৃষ্টান্ত গড়েছেন তিনি।
সর্বোচ্চ ১৭তম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলতে নেমেছিল রিয়াল। এবারও উড়লো তাদের বিজয় কেতন। ফাইনালে উঠলেই শিরোপা জেতার অভ্যাসটা আরও পোক্ত করে নিল তারা। এ নিয়ে টানা আটবার ফাইনালে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখলো রিয়াল। লিভারপুলের প্রতিশোধ নেওয়া হলো না, ২০১৮ সালে পর আবারও তাদের কাঁদিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতলো রিয়াল।
বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ১টায় ফাইনাল শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই দলের সমর্থকদের মাঠে ঢুকতে দেরি হওয়ায় ম্যাচ পিছিয়ে যায় ৩৬ মিনিট। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই আক্রমণ সাজাতে শুরু করে লিভারপুল। ম্যাচের ১৬তম মিনিটে প্রথম নিশ্চিত সুযোগ পান প্রতিশোধের অপেক্ষায় মরিয়া থাকা মোহামেদ সালাহ। ছয় গজ বক্সে ঠিকমতো তিনি শট নিতে না পারলেও বল লক্ষ্যেই ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে রিয়ালকে বাঁচান কোর্তোয়া।
একটু পরই আরেকটি সুযোগ পায় লিভারপুল; কিন্তু থিয়াগো আলকান্তারার শট ছিল কোর্তোয়া বরাবর, সহজেই গ্লাভসবন্দি করেন তিনি। মিনিট খানেক পর সালাহর নেওয়া শরীর বরাবর শট সহজেই ধরে ফেলেন কোর্তোয়া। একচেটিয়া আক্রমণে প্রথম ২৮ মিনিটে মোট ছয়টি শট নেয় লিভারপুল, যার মধ্যে চারটি ছিল লক্ষ্যে। এই সময়ে রিয়াল কোনো শটই নিতে পারেনি।
বিরতির পরও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে লিভারপুল। তবে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে ৫৯তম মিনিটে তাদের হতাশার সাগরে ডোবায় রিয়াল। ডি-বক্সের ডান দিক থেকে ভালভেরদে অসাধারণ এক কোনাকুনি পাস বাড়ান। ডান পায়ের প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান ভিনিসিউস। গোল হজম করে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে লিভারপুল, যা চলে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত। কিন্তু কোর্তোয়ার বাধা পেরিয়ে জালের ঠিকানা করে নিতে পারেনি ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা।