মিল নেই সুজন-পাপনের সুরে
দুজনই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়িত্বশীল ও উচ্চপদস্থ কর্তা। একজন পরিচালকের দায়িত্ব সামলে জাতীয় দলের সবকিছু দেখভাল করেন, পদের নাম টিম ডিরেক্টর। আরেকজনের হাতে জাতীয় দলসহ পুরো দেশের ক্রিকেটের ভার, পদের নাম বিসিবি সভাপতি।
ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখেন, এমন সবাই এতোক্ষণে নিশ্চয়ই দুজনকে চিনে ফেলেছেন। হ্যাঁ, খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাজমুল হাসান পাপন। অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই দুজনের কথাতেই মিল নেই। ২৪ ঘণ্টারও কম ব্যবধানে একই বিষয়ে দুজন দুই রকম বক্তব্য দিলেন।
মুস্তাফিজুর রহমানের টেস্টের প্রতি অনাগ্রহ, এটা পুরনো খবর। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি এই পেসার। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে দলকে বেশিদিন সার্ভিস দিতে টেস্ট থেকে দূরে থাকার কথা কিছুদিন আগেও জানিয়েছেন মুস্তাফিজ। তার মতে, ক্যারিয়ার বড় করতে বেছে খেলা জরুরী। কিন্তু এতে আপত্তি খালেদ মাহমুদের। মুস্তাফিজের টেস্টের প্রতি অনাগ্রহের ব্যাপারটি নিয়ে বিসিবির এই পরিচালক রীতিমতো বিরক্ত।
দেশের হয়ে টেস্ট না খেলে মুস্তাফিজ আইপিএল বেছে নেওয়ায় উদাহরণ হিসেবে টাকা, দেশপ্রেম টেনে এনেছেন খালেদ মাহমুদ। টেস্ট থেকে বিরতি নেওয়ার ব্যাপারে বিসিবি সভাপতির বলা কথার সঠিক ব্যাখ্যাও তিনি দিতে পারেননি। যা বোঝা গেল নাজমুল হাসানের কথায়।
শনিবার খালেদ মাহমুদ জানান, ক্রিকেটারদের ফরম্যাট বাছাই করে খেলার যে সুযোগটা রাখা হয়েছে; সেটা কেবল সিনিয়র ক্রিকেটারদের জন্য। অর্থাৎ, কে কোন ফরম্যাটে খেলবেন; এটা বাছাই করে খেলার সুযোগ সবার জন্য নয়। বিসিবি সভাপতি নাকি এমনই জানিয়েছেন আগে। কিন্তু পরদিনই হোটেল সোনাওগাঁওয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে নাজমুল হাসান জানালেন ভিন্ন কথা। এ ছাড়া মুস্তাফিজের আইপিল খেলা, টেস্ট না খেলা নিয়ে কেন আলোচনা হচ্ছে, সেটাও বুঝতে পারছেন না বিসিবি সভাপতি।
চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে ক্রিকেটারদের কাছে পছন্দের ফরম্যাটের কথা জানতে চেয়েছিল বিসিবি। সুযোগ ছিল বলেই টেস্টের চুক্তিতে নাম দেননি মুস্তাফিজ। এ নিয়ে আপত্তি তোলেনি বিসিবি। নাজমুল হাসান বলেন, 'যখন একটা অপশন দেওয়া হলো যে, কে কোন ফরম্যাট খেলতে চায়, এটা জানার জন্য। তখন মুস্তাফিজ টেস্টে নাম দেয়নি, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টিতে দিয়েছে। কারণ, ওকে তো এমনিতেও টেস্টে খেলানো হয় না। তাতে করে বোঝা যাচ্ছে যে, টেস্টে ওর আসলে আগ্রহ কম আছে। এটাই বাস্তবতা, এটা আমরা জানি, ঠিক আছে।'
কিন্তু মুস্তাফিজকে দিয়ে টেস্ট খেলানোর ইচ্ছার কথা জানিয়ে আগেরদিন খালেদ মাহমুদ বলেন, 'পাপন ভাই বলেছিলেন খেলোয়াড়রা যে ফরম্যাটে খেলতে চায়, এ নিয়ে আলাপ করতে পারে। সেটা সিনিয়র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কথাটা বলেছেন, সবার ক্ষেত্রে না। এখন যদি জয় বলে আমি ওয়ানডে খেলব আর টেস্ট খেলব না, এটা কি ঠিক হল নাকি? মুস্তাফিজের আসলে বয়স কত? কয়দিন ধরে খেলে? ও তো সাকিব না, তামিম না, মাশরাফি বা মুশফিক না, যারা এত বছর ধরে বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে সার্ভিস দিয়েছে। দেশের জন্য খেলা জরুরী।'
যদিও মুস্তাফিজের অনিয়মিতভাবে টেস্ট খেলার ব্যাপারটি বেশ পুরনো। ২০১৫ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকে জাতীয় দলের হয়ে মাত্র ১৪টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। সর্বশেষ চার বছরে তার টেস্ট খেলার সংখ্যা চারটি। সাধারণত বাঁহাতি এই পেসারকে ছাড়াই দল গঠন করে থাকে বিসিবি। কিন্তু ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগে কয়েকজন পেসার চোটে থাকায় মুস্তাফিজের টেস্ট খেলা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, যা এখনও চলমান।