সাকিবের দেশে না ফেরার ব্যাপারে বোর্ড জড়িত নয়: বিসিবি সভাপতি
ভারত সফর থেকে টেস্ট অবসরের ঘোষণা দেওয়া সাকিব আল হাসান ঘরের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের মুখে তার দেশে ফেরা হয়নি। দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দুবাই আসার পর নিজের নিরপত্তার স্বার্থে সাকিবকে না আসার পরামর্শ দেয় সরকার। ব্যাপারটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়ও দেখেন অনেকে। তবে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, সাকিবের দেশে ফিরতে না পারার ব্যাপারটির সঙ্গে বোর্ড জড়িত নয়।
অনিশ্চয়তা পেরিয়ে সাকিবকে নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করে বিসিবি। এরপর বাড়ে উত্তেজনা, তার দেশে ফেরার খবরে যা বিক্ষোভে রূপ নেয়। সাকিবকে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে হয় বিক্ষোভ। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে খেলানোর পক্ষেও হয় আন্দোলন। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে লাঠিচার্জ পর্যন্ত করতে হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত আসা হয়নি সাকিবের, খেলতে পারেননি বিদায়ী টেস্ট।
এরপর বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও সাকিবের দেশে না ফেরা বা শেষ টেস্ট খেলতে না পারা নিয়ে বিসিবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবেও দায়িত্বশীল কেউ কথা বলেননি। আজ বোর্ড মিটিংয়ের আগে বিষয়টি নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক। তিনি জানান, সরকার, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও সাকিবের ব্যাপার এটা। এখানে বিসিবির দায় নেই।
বুধবার মিরপুরে বিসিবি প্রধান বলেন, 'আপনি যেটা বললেন যে শেষ টেস্ট খেলতে ফিরতে পারেনি… একেবারেই আমরা কোনোভাবে জড়িত নই এই ব্যাপারটায়। এটা হলো আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, সরকার ও সাকিব আল হাসান (তাদের ব্যাপার)..। এখানে আমাদের পুরোপুরি সহযোগী একটা অংশ নেওয়ার কথা ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সামনে যতো কথাই বলি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি যেন সাকিব আল হাসান দেশ থেকে অবসরে যেতে পারে। আমার চেষ্টা আমি করেছি।'
ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি সাকিব একজন সংসদ সদস্যও ছিলেন। গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের পরিচয় যে কেবল ক্রিকেটারই নয়, সেটাও মনে করালেন ফারুক, 'সাকিব এখন শুধু একজন খেলোয়াড় নয়। তার একটা পরিচয় আছে যে, গত সরকারের একজন এমপি ছিল এবং কিছু সেন্টিমেন্ট আছে (তাকে নিয়ে)। সব মিলিয়ে সরকালের দৃষ্টিকোণ ও ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টিকোণ তো এক নয়।'
সাকিবের রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় আরও অনেক বিষয় বিবেচনা করার আছে জানিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'আমি সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে মনে করেছি যে, একটা ছেলে ১৭ বছর ক্রিকেট খেলেছে, সে একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বাংলাদেশের জন্য অনেক করেছে, এ জন্য আম মনে করেছি, এটা (দেশ থেকে অবসর) হলে ভালো হতো। কিন্তু সঙ্গে অন্য জিনিসগুলোও তো দেখতে হবে আপনার।'
'ওই জিনিসগুলো মিলিয়ে শেষ মুহূর্তে সে আসতে পারেনি, এটার ব্যাপারে বোর্ডের কিছু করার ছিল না। এটা পুরোপুরি আইনগত ব্যাপার এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এতে জড়িত আছে। সুতরাং, এটা সাকিব ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপার ছিল। বোর্ড এটার অংশ ছিল না। সে এলে বোর্ডের যতোটুকু ক্ষমতা আমরা তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। যেহেতু সে আসেনি, এটা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।'
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলে দুবাই যাবে বাংলাদেশ দল। সেখানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে তারা। এই সিরিজে সাকিবের খেলার আলোচনা আছে। যেহেতু দল দেওয়া হয়নি, সাকিব স্কোয়াডের জন্য বিবেচনায় আছেন জানিয়ে ফারুক বলেন, 'সাকিব আল হাসানের ব্যাপারটা… এখনও যেহেতু দল দেয়নি (ঘোষণা হয়নি), আমার মনে হয় অ্যাভেইলঅ্যাবল আছে সে।'