টি-টোয়েন্টি থেকে সাকিবের অবসর নাকি বিরতি?
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২৭ সেপ্টেম্বর, আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন দুই দলের প্রতিনিধি। বাংলাদেশের পক্ষে এলেন সাকিব আল হাসান। সাংবাদিকদের আগ্রহে কেবলই দ্বিতীয় টেস্ট ও তার বর্তমান ফর্ম। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের আবহ ও প্রশ্নের ধরন পাল্টে যেতে সময় লাগলো না। সাকিব যে এদিন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন!
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি, বিশ্ব ক্রিকেটেও তার শক্ত অবস্থান। এমন কারও বিদায়ের ক্ষণে ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন করার আগ্রহ যেকোনো সংবাদকর্মীই হারিয়ে ফেলতে পারেন। সাকিবের সংবাদ সম্মেলনে হলো-ও তাই। সব প্রশ্ন সাকিবকে ঘিরে; অবসরের কারণ, ক্যারিয়ারের মূল্যায়ন নিয়েই বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে।
ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেলেন সাকিব, কিন্তু এর মাঝে জন্মালো ধোঁয়াশাও। সাকিব কি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন, নাকি বিরতি নিলেন? এমন প্রশ্নের জন্ম জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের বক্তব্যের কারণেই। টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার বিষয়ে যেমন তিনি বলেছেন, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি শেষ টেস্ট খেলবেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিচ্ছেন, পরিষ্কার করে এমন কিছু বলেননি সাকিব।
সাকিবের বক্তব্য দেখে নেওয়া যাক। তিনি বলেছেন, 'আমার তো মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি বিশ্বকাপে।' তার এই কথায় যে কেউ বলবেন, এটা তো অবসরের ঘোষণাই! কিন্তু সাকিব আরও বলেছেন, 'আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না।'
টি-টোয়েন্টিতে শেষ ম্যাচ খেলার ঘোষণায় সাকিব বলেছেন, 'মনে হয়', পরিষ্কার বার্তা দেননি। টেস্টের মতো করে টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেওয়ার সময়সীমার কথাও জানাননি। সঙ্গে উল্লেখ করেছেন নির্দিষ্ট সময়ের কথা, 'এই মুহূর্তে।' আপাতত টি-টোয়েন্টি খেলতে না চাইলেও এই ফরম্যাটে খেলার আগ্রহ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেননি তিনি। সাকিবের বক্তব্যে মনে হয়েছে, তিনি মূলত সময় নিচ্ছেন নিজেকে নতুন করে প্রমাণের। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে খেলে জাতীয় দলে ফেরার পথ তৈরির ইচ্ছা আছে তার। এ কারণেই হয়তো তিনি ভবিষ্যতে ফিরে আসার পথটি উন্মুক্ত রেখেছেন।
নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়েও 'আপাতত' শব্দটি উল্লেখ করেছেন সাকিব, 'এই সিরিজগুলো আমার খেলার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। আমার মনে হয় নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত। তাদের দেখার এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ। ২০২৬ সালের দিকে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট তাকায়, তাহলে এটাই বাংলাদেশের জন্য ভালো। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবাই একমত। টি-টোয়েন্টি নিয়েও আমার কথা হয়েছে। বোর্ডের সবার সঙ্গে, নির্বাচকদের সঙ্গে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি মুভ অন করি। আপাতত পরবর্তী যে সিরিজগুলো আছে, নতুন খেলোয়াড় আসুক, সুযোগ দেওয়া হোক।'
সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক সমালোচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সাকিব। হত্যা মামলায় এসেছে নাম, তাকে দল থেকে বাদ দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে উকিল নোটিশ গেছে বিসিবিতে। গত জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরে দুই দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে যান সাকিব। এরপর বাইরে থেকেই দেশের হয়ে খেলছেন তিনি, মাঝে খেলেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও। জুনের পর আর দেশে ফেরেননি বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। দেশে ফিরে খেলার আলোচনায় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।
মাঠের বাইরের অবস্থার কারণে অস্বস্তি আছে সাকিবের। তবে তার মূল অস্বস্তি মাঠেই। অনেকদিন ধরেই চেনা সাকিবের দেখা নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ইনিংসে ৩৮ রান করা এই অলরাউন্ডার উইকেট নেন ৫। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৫৭ রান করার পাশাপাশি ২১ ওভার বোলিং করে থেকে যান উইকেটশূন্য। এমন পারফরম্যান্সের পর দ্বিতীয় টেস্টের একাদশে তার জায়গা পাওয়া নিয়েছে উঠেছে প্রশ্ন।
টেস্টে সাকিব সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন গত বছরের এপ্রিলে। সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছেন সাত বছর আগে, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। শেষ ১০ ইনিংসে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৯.১১ গড়ে তার রান ২৬২, সর্বোচ্চ ইনিংস ৮৭ রানের। বল হাতেও আগের সেই দুর্বার সাকিবকে দেখা যায়নি, ১০ ইনিংসে তার শিকার ১১ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ ২০ ইনিংসে তার হাফ সেঞ্চুরি একটি, বল হাতে নিয়েছেন ২০টি। গত বছরের ৬ নভেম্বর শেষ ওয়ানডে খেলা সাকিব এই ফরম্যাটে তুলনামূলক সফল। শেষ ১০ ইনিংসে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন, উইকেট নিয়েছেন ১০টি।