টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ পথচলায় এবার বিদায়ের ডাক শুনতে পাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। তাই দুটি ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার জন্য মন স্থির করেছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব।
তবে ভারতেই সাদা পোশাকের পথচলা শেষ করছেন না দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই তারকা। ঘরের মাঠে ম্যাচ খেলে টেস্ট থেকে অসবরে যাবেন সাকিব। অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন তিনি। এ ছাড়া সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি খেলে ফেলেছেন এই ফরম্যাটের শেষ ম্যাচ।
সাকিবের বয়স চলে ৩৭, পারফরম্যান্সেও আগের মতো ধারালো নন। অলরাউন্ডার হলেও মূল শক্তির জায়গা বোলিংয়ে আলো কাড়তে পারছেন না সাকিব। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বিবর্ণ থাকায় পরের ম্যাচের একাদশে তার জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। নিজের পারফরম্যান্স, দলের অবস্থান; সবকিছু বিবেচনা করে তাই শেষের ঘোষণা দিয়ে দিলেন তিনি।
ওয়ানডে ফরম্যাটেও আর খুব বেশি দিন খেলার পরিকল্পনা নেই সাকিবের। দুই ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর ওয়ানডের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে। বাংলাদেশ অলরাউন্ডার জানান, আগামী বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পর্যন্ত খেলার ইচ্ছা তার।
ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সাকিবকে। এর উত্তরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কথা জানান তিনি। সাকিব বলেন, 'দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো অ্যাভেইলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। আমি অনুভব করেছি, এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।'
অবসর নেওয়ার বিষয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সাকিব। তাদেরকে অবসর পরিকল্পনা জানিয়েছেন তিনি। তার ভাষ্য, 'এভাবেই ফারুক ভাইর সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ (ম্যাচ)। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন কীভাবে সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়।'
দেশে ফিরে খেলতে চান সাকিব। তবে নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টিও ভাবছেন তিনি। তার ভাষায়, 'আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।'
টি-টোয়েন্টি অধ্যায় ইতি টানার বিষয়ে সাকিব বলেন, 'আমার তো মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি বিশ্বকাপে।' আপাতত টি-টোয়েন্টি খেলতে না চাইলেও দলের দরকারে এই ফরম্যাটে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি। সাকিব বলেন, 'আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, তাহলে আমরা ডিসাইড করতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ টেস্টে আমার শেষ সিরিজ, এমন ইচ্ছা আছে। মোটামুটি বলতে পারেন, অন্তুত দুটি ফরম্যাটে আমি আমার শেষটা দেখছি।'
নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সাকিব বলেন, 'এই সিরিজগুলো আমার খেলার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। আমার মনে হয় নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত। তাদের দেখার এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ। ২০২৬ সালের দিকে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট তাকায়, তাহলে এটাই বাংলাদেশের জন্য ভালো। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবাই একমত।'
কষ্ট বা অভিমান থেকে নয়, এখনই বিদায় বলার সেরা সময় বলে মনে করেন সাকিব, 'কষ্ট কিংবা অভিমান থেকে নেওয়া নয়। আমার মনে হয় সামনে তাকানোর জন্য এবং নতুনদের আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য এটাই সেরা সময়।' এই প্রশ্নের উত্তরেই টি-টোয়েন্টি ছড়ার ঘোষণা দেন তিনি, 'অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে ফেলতে চাই, টি-টোয়েন্টি নিয়েও আমার কথা হয়েছে। বোর্ডের সবার সঙ্গে, নির্বাচকদের সঙ্গে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি মুভ অন করি। আপাতত পরবর্তী যে সিরিজগুলো আছে, নতুন খেলোয়াড় আসুক, সুযোগ দেওয়া হোক।'
নিজের ক্যারিয়ার মূল্যায়ন করতে বলা হলে সাকিব বলেন, 'আমি মনে করি, আমি রিজনেবলি ওকে করেছি, আমি খুশি। কোনো আক্ষেপ নেই। জীবনে কখনও আক্ষেপ ছিল না। এখনও নেই। যতোদিন উপভোগ করেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমার জন্য সঠিক সময়। যে কারণে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া। কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক, বোর্ড- সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।'