ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমপর্ণে বাংলাদেশের বড় হার
পাকিস্তানে স্বপ্নের সিরিজ পার করা বাংলাদেশ যেন ভারত সফরে কঠিন বাস্তবতায় ফিরলো। দারুণ কিছু করার আশায় ভারতে গেলেও প্রথম টেস্টে সামান্যতম লড়াইও করতে পারলো না নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বোলাররা নিজেদের কাজ করলেও ব্যাটসম্যানরা হাঁটলেন উল্টো পথে, তাতে দুই ইনিংসেই বড় ব্যবধান থেকে গেল। ফল হিসেবে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হারলো বড় ব্যবধানে।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। সফরকারীদের সামনে ছিল ৫১৫ রানের বিশাল লক্ষ্য, যা পাড়ি দেওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াই করাই হয়তো একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে সেই লড়াই করা হলো না বাংলাদেশের।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারত ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারালেও অশ্বিন ও জাদেজার ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রথম ইনিংসে ৩৭৬ রান তোলে। জবাবে হতাশার ব্যাটিংয়ে ১৪৯ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই ২২৭ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা। শুভমান গিল ও ঋষভ পন্তের সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ২৮৭ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত, বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৫।
ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাটে ভারতের বিপক্ষে ১৪ টেস্টের ১২টিতেই হারলো বাংলাদেশ, দুটি ম্যাচ ড্র হয়। ১২ হারের মধ্যে ৫টিতে ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে মিরপুরে ৩ উইকেটের জয়টি বাদে বাকি ম্যাচগুলোতেও বড় ব্যবধানে জেতে ভারত। ঘরের মাঠে চার ম্যাচের দুটিতে ইনিংস ব্যবধানে এবং বাকি দুই ম্যাচে ২০৮ এবং ২৮০ রানে জেতে তারা। এই সিরিজের পরের টেস্ট কানপুরে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।
চতুর্থ দিন সকালেই বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া এই টেস্টে ব্যাটে-বলে ছড়ি ঘুরিয়ে গেছে ভারত। ম্যাচের প্রথম দুই সেশন বাদে বাকিটা সময় দাপট ছিল কেবলই ভারতের, বিশেষ করে ম্যাচটি হয়ে উঠেছিল ম্যাচসেরা অশ্বিনের। ব্যাটে-বলে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি বেগ দিয়েছেন অভিজ্ঞ ৩৮ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। প্রথম ইনিংসে দলের দুঃসময়ে সতীর্থের সঙ্গে জুটি বাধাসহ ১১৩ রানের মহাকার্যকর ইনিংস খেলেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংস একাই ধসিয়ে দেন তিনি। এই ইনিংসে ২১ ওভারে ৮৮ রানে ৬টি উইকেট নেন অশ্বিন। টেস্টে এ নিয়ে ৩৭তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন তিনি, যা ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ। টেস্টে দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২২ উইকেটের মালিক অশ্বিন আরও অনেক রেকর্ডেই নিজেকে সামনের সারিতে নিয়ে গেছেন।
টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম বোলার হিসেবে ২৫০, ৩০০ ও ৩৫০ উইকেট শিকার করেন অশ্বিন। দেশের পক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৮ বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। বল হাতে অনেক কীর্তি গড়া অশ্বিন ব্যাটসম্যান বা অলরাউন্ডার হিসেবেও উদাহরণযোগ্য। টেস্টে তার সেঞ্চুরি ছয়টি। আট নম্বর বা এর নিচে নেমে ৪টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, যা টেস্টের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৩০ বার ইনিংসে ৫ উইকেট ও ২০ ইনিংসে পঞ্চাশ বা তার বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন অশ্বিন। ১০১ টেস্টের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১০বার সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি, যা ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ।
৫১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ভালোই শুরু করে বাংলাদেশ, উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৬২ রান। দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম অনিক সাবলীলভাবেই খেলে যাচ্ছিলেন। এই জুটি ভাঙেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ভারতের পেসারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৩৩ রান করা জাকির। দলীয় রান ৮০ পেরোনোর পর অশ্বিনের বলে সহজ ক্যাচ তুলে বিদায় নেন সাদমান। ফ্লিক করতে গিয়ে গড়বড় টাইমিংয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ৩৫ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার।
ইনিংস বড় করতে পারেননি মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমও। অশ্বিনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৩ রান করেন মুমিনুল। মিড অফে সহজ ক্যাচ তুলে বিদায় নেওয়ার আগে মুশফিকও করেন ১৩ রান। এর কয়েক ওভার পরই আলোক স্বল্পতার কারণে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেন আম্পায়ার। ৩৭.২ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৮ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। এদিনই বাংলাদেশের ৩ উইকেট তুলে নেন অশ্বিন, বাকি উইকেটটি নেন বুমরাহ।
চতুর্থ দিন প্রথম সেশনেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের। এদিন অশ্বিনের সঙ্গে স্পিন ঘূর্ণিতে দাপট দেখান ৩ উইকেট নেওয়া জাদেজাও। চতুর্থ দিন ২৫.৩ ওভার টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে কেবল অধিনায়ক শান্ত লড়াই করতে পেরেছেন। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১২৭ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন। সাকিব আল হাসান করেন ২৫ রান। এর বাইরে তাদের আর কোনো ব্যাটসম্যান আজ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৭৬
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৪৯
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: ২৮৭/৪ ডিক্লে.
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৬২.১ ওভারে ২৩৪ (লক্ষ্য ৫১৫), (জাকির ৩৩, সাদমান ৩৫, শান্ত ৮২, মুমিনুল ১৩, মুশফিক ১৩, সাকিব ২৫; অশ্বিন ৬/৮৮, জাদেজা ৩/৫৮, বুমরাহ ১/২৪)।
ফল: ভারত ২৮০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: রবীচন্দ্রন অশ্বিন
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে