দ্বিতীয় দিন শেষেই হারের চিন্তা বাংলাদেশ দলে
এক দিনের ব্যবধানে অবস্থানের কতো পার্থক্য! দারুণ বোলিংয়ে ৬ উইকেট নেওয়ার পর ভারতকে অলআউট করতে না পারায় প্রথম দিন শেষে আফসোস ছিল বাংলাদেশের। সেই দলটিই কিনা দ্বিতীয় দিন শেষে হারের চিন্তায়! বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় দিনে মোট ১৭টি উইকেট পড়েছে। এর মধ্যে ১০টি বাংলাদেশের, ভারতের ৭টি। স্বাগতিকরা দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট হারালেও তাদের ঝুলিতে আছে বড় লিড। কিন্তু ওই ১০ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সর্বস্বান্ত অবস্থা!
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে চলমান চলমান সিরিজের প্রথম টেস্টের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ভারতের হাতে। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে এই টেস্টে বাংলাদেশের জন্য হয়তো হারই অপেক্ষা করছে। প্রথম ইনিংসেই বড় লিড পাওয়ায় বাংলাদেশকে ফলোঅন করাতে পারতো ভারত। তা না করে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে তারা। ২৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৮৩ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে রোহিতম শর্মার দল। শুভমান গিল ৩৩ ও ঋষভ পন্ত ১২ রানে অপরাজিত আছেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে বেশি রান না হলেও ইতোমধ্যে বড় লিড মিলে গেছে ঘরের মাঠের দলটির। দ্বিতীয় দিন শেষে ৩০৮ রানে এগিয়ে ভারত। অবস্থা বিবেচনায় জয় তুলে নিতে এই রানই তাদের জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা, কিন্তু বাংলাদেশকে আরও বড় লক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টায় ঘরের মাঠের দলটি। প্রথম ইনিংসে ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে ৩৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৪৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। প্রথম ইনিংসেই ২২৭ রানের লিড পায় ভারত।
২২৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা দলটির শুরুটা ভালো ছিল না। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই হারাতে হয় অধিনায়ক রোহিতকে। তাসকিন আহমেদের দারুণ এক ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন ৫ রান করা রোহিত। দুই ওভার পর ১০ রান করা যশস্বী জয়সওয়ালকে ফেরান নাহিদ রানা। এরপর শুভমান গিলের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়েন বিরাট কোহলি। মিরাজের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৭ রান করেন তিনি। যদিও ভারতের এই ব্যাটিং তারকা আউট ছিলেন না। বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার কোহলিকে আউট ঘোষণা করেন। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট ছুঁয়ে এরপর লেগে প্যাডে লেগেছে। কিন্তু রিভিউ না নেওয়ায় বাঁচতে পারেননি কোহলি।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ পুরোটা সময় ধুঁকেছে। ভারতের পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, আকাশ দীপদের সামনে লড়াই করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যানই। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল ৩২ রানের, যা করেন সাকিব আল হাসান। বাকিদের কেউ ৩০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই ব্যর্থ হয়েছেন দুই অঙ্কের রান করতে। ভারতের পেসারদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ কেবল হতাশাই জাগিয়েছে।
ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধুঁকেছে বাংলাদেশ। কোনো ব্যাটসম্যানই পারেননি দলের হাল ধরতে। শুরুর চাপ কাটিয়ে জুটি গড়লেও বাজে শটে আউট হয়ে আরও হতাশা বাড়িয়েছেন লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাদমান ইসলামকে ফেরান বুমরাহ। তার দারুণ এক ডেলিভারি ছাড়তে গিয়ে স্টাম্প ভেঙে যায় সাদমানের।
নবম ওভারে বাংলাদেশকে চেপে ধরেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা আরেক ভারতীয় পেসার আকাশ। টানা দুই বলে তার শিকার জাকির হাসান ও মুমিনুল হক। বাংলাদেশের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই বোল্ড হন। এর মাঝেও দ্রুত রান তুলতে থাকা অধিনায়ক শান্তকে সাবলীল মনে হলেও তিনি ইনিংস বড় করতে পারেননি। দলীয় ৩৬ রানে সিরাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২০ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
কিছুক্ষণ পর মুশফিকুর রহিমকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন বুমরাহ। ৪০ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন সাকিব ও লিটন। ষষ্ঠ উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়ে দুই ওভারের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের এই দুই ব্যাটসম্যান। ২৯তম ওভারে সুইপ করতে গিয়ে আউট হন ৪২ বলে ২২ রান করা লিটন। দলের দুঃসময়ে আরও বেশি হতাশা জাগিয়ে ফেরেন সাকিব। ৬৪ বলে ৩২ রান করা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ঋষভ পন্তের গ্লাভসে আটকা পড়েন।
এরপর বোলারদের নিয়ে কিছুটা পথ পাড়ি দেন মেহেদী হাসান মিরাজ, সঙ্গীর অভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হয়নি তার। ৫২ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের টপ অর্ডারের অনেক ব্যাটসম্যানের তুলনায় ভালো ব্যাটিং করেছেন তিন পেসার। হাসান মাহমুদ ৯ এবং তাসকিন আহমেদ ও নাহিদ রানা ১১ রান করে করেন। বুমরাহ সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান সিরাজ, আকাশ ও জাদেজা। এর আগে দিনের শুরুতে ৩৭ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ।