হাসানের হাসির পর হতাশায় দিন শেষ বাংলাদেশের
প্রথম সেশন ২৩ ওভারের। ভারত রান তুললো ৮৮, কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই তাদের ৪টি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দেন দুর্বার বোলিং করা হাসান মাহমুদ। ২৫ ওভারের দ্বিতীয় সেশনটিও ছিল বাংলাদেশের। প্রথম সেশনের সমান ৮৮ রান তোলা ভারত এই পর্বে হারায় দুই উইকেট, এবার শিকারী নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
কিন্তু ৩২ ওভারের তৃতীয় সেশনে পুরোপুরি ভিন্ন গল্প। যেখানে দেখা গেল কেবলই রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার দাপট। ওয়ানডে স্টাইলে এই সেশনে ১৬৩ রান তোলাসহ সপ্তম উইকেটে গড়লেন অবিচ্ছিন্ন ১৯৫ রানের জুটি। বাংলাদেশের কোনো বোলারই পারলেন না এই জুটি ভাঙতে। তাই হাসানের হাসিতে ঝলমলে শুরুর পরও চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনটা হতাশায় শেষ হলো বাংলাদেশের।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে স্বাগতিক ভারত। অথচ ১৪৪ রানেই ৬ উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে দলের হাল ধরে অসাধারণ ব্যাটিং করা অশ্বিন ও জাদেজা দিন শেষেও অপরাজিত। ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া অশ্বিন ১০২ রানে ও জাদেজা ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করেন।
অথচ কী দারুণ শুরুটাই না হয়েছিল বাংলাদেশের! ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দেন হাসান। এরপর দুই দফায় এক ওভারের ব্যবধানে শুভমান গিল ও বিরাট কোহলিকে ফেরান বাংলাদেশের ডানহাতি এই পেসার। ভারতের এই তিন ব্যাটসম্যানের কেউ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। রোহিত ও কোহলি ৬ রান করে করেন, রানের খাতা খোলার আগেই শুভমানকে ফেরান হাসান।
৩৪ রানেই নেই ৩ উইকেট, ভারত তখন দিকহারা। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজের দলের উইকেট পতন দেখে যাচ্ছিলেন জশস্বী জয়সওয়াল। নিজের উইকেটটি ধরে রাখলেও সঙ্গ পাচ্ছিলেন না বাঁহাতি এই ওপেনার। তৃতীয় উইকেট হারানোর পর ঋষভ পন্তের সঙ্গে জুটি হয় জয়সওয়ালের। এই জুটি থেকে ৬২ রান পায় ভারত। কিন্তু ১০০ পেরোনোর আগেই থামতে হয় পন্তকে।
হাসানের চতুর্থ শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫২ বলে ৬টি চারে ৩৯ রান করেন পন্ত। এরপর পঞ্চম উইকেটে লোকেশ রাহুলের সঙ্গে জুটি জয়সওয়ালের, এই জুটি থেকে আসে ৪৮ রান। কিন্তু চার বলে মধ্যে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও ভারতকে কোণঠাসা করে ফেলেন নাহিদ ও মিরাজ। নাহিদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়া জয়সওয়াল ১১৮ বলে ৯টি চারে ৫৬ রান করেন। মিরাজের শিকারে পরিণত হওয়া রাহুল করেন ১৬ রান।
১৪৪ রান থেকে লড়াই শুরু অশ্বিন ও জাদেজার। তবে দ্রুত দুই উইকেট পতনের পর উইকেটে গেলেও মানিয়ে নিতে সময়ই নেননি এ দুজন। উল্টো দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন তারা। বিশেষ করে অশ্বিন খেলতে থাকেন ওয়ানডে মেজাজে। দিনশেষেও তার অপরাজিত ইনিংসটি তেমনই, ৯১.০৭ স্ট্রাইক রেটে ১১২ বলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০২ রানে হার না মানা আছেন টেস্টে ৫১৬টি উইকেট নেওয়া অভিজ্ঞ এই স্পিনার।
জাদেজাও দ্রুত রান তুলেছেন, বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার ১১৭ বলে ৭৩.৫০ স্ট্রাইক রেটে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮৬ রানে অপরাজিত। টেস্টে এটা তার ২১তম হাফ সেঞ্চুরি। সপ্তম উইকেটে ১৯৫ রান যোগ করতে অশ্বিন ও জাদেজা বল খরচা করেছেন ২২৭টি। তাদের এই জুটিটি চেন্নাইয়ের মাঠে সপ্তম উইকেটে সেরা। বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া হাসান ১৮ ওভারে ৫৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ১৭ ওভারে ৮০ রানে একটি উইকেট নেন নাহিদ। ২১ ওভারে ৭৭ রানে মিরাজের শিকারও একটি উইকেট। তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান উইকেটের দেখা পাননি।