‘আমি নাহিদ রানা, নাহিদ রানাই হতে চাই বাংলাদেশের’
টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ দলে অভিষেকের কদিন আগে টিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ রানা জানিয়েছিলেন, কাউকে অনুসরণ করেন না। নিজের মতোই 'বিশেষ' থাকতে চান তিনি। বাংলাদেশের তরুণ ডানহাতি এই পেসার তখন পরিচিত কেউ নন, অপেক্ষায় ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পা রাখার। সে সময়ই নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা নাহিদ এখন দলের অন্যতম অংশ। গতির ঝড়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করতে তার ওপর ভরসা রাখছে দল।
আলোচনায় যেহেতু গতি, নাম চলে গতি তারকাদের। সেখানে দুটি নাম অবধারিত, পাকিস্তানের শোয়েব আখতার ও অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি। এই দুই সাবেক ফাস্ট বোলার বা অন্যদের মধ্য থেকে কার মতো হতে চান নাহিদ? এখনও উত্তর একই বাংলাদেশ পেসারের, কারও মতো হতে চান না তিনি। বাংলাদেশের নাহিদ রানা হতে চান ২১ বছর বয়সী এই পেস সেনসেশন।
লাইন-লেংন্থ বা স্পট বোলিংয়ে অনেক উন্নতি করার জায়গা থাকলেও গতির কারণেই মূলত শুরুতে জাতীয় দলে বিবেচনা করা হয় নাহিদকে। গত মার্চে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। আহামরি কিছু করতে না পারলেও গতিতে ধারাবাহিকতা রেখে আসেন আলোচনায়। সর্বশেষ পাকিস্তান সফরে দেখা গেছে নাহিদের গতির দাপট। সঙ্গে ছিল স্কিল, লাইন-লেংন্থ নিয়ন্ত্রণ ও পরিস্থিতি বুঝে বোলিং করার পারদর্শিতা। এক ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়াসহ দুই টেস্টে ৬ উইকেট শিকার করা বাংলাদেশের পেসার রীতিমতো চমক দেখিয়েছেন, তাকে প্রসংশায় ভাসিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অনেকেই।
নাহিদ যে দেশটিতে গতির ঝড় তুলে এসেছেন, সেই দেশটির পেস বোলিংয়ের ইতিহাস সুদীর্ঘ। দেশটি পেয়েছে ওয়াকার ইউনুস, মোহাম্মদ জাহিদ, শোয়েব আখতারদের মতো গতিময় পেসার। সর্বশেষ সফর পাকিস্তান বলেই কিনা বাংলাদেশের তরুণ পেসারকে তুলনা করা হয়েছে শোয়েবের সঙ্গে। পাকিস্তান কিংবদন্তির প্রসঙ্গ ওঠার পর নাহিদ নিজের ভাবনার কথা জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিসিবির পোস্ট করা ভিডিওতে তিনি বলেন, 'আমি কারও মতো হতে চাই না। আমি নাহিদ রানা, নাহিদ রানাই হতে চাই বাংলাদেশের।'
পেসারদের মধ্য থেকে কাউকে অনুসরণ না করলেও বাংলাদেশের পেসারদের ভালো লাগে নাহিদের। টিভিতে যাদের খেলা দেখে বড় হওয়া, সেই অগ্রজদের নিয়ে তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে সেভাবে কাউকে অনুসরণ করা হয় না আমার। তবে বাংলাদেশের সব পেস বোলারকেই ভালো লাগে আমার। কারণ টিভিতে তাদের খেলা দেখে বড় হয়েছি। সে রকম কেউ একজন (অনুসরণ করার) নেই। বাংলাদেশ দলের সবাই আমার সিনিয়র। তাদের খেলা টিভিতে দেখে বড় হয়েছি। সবার বোলিংই ভালো লাগে আমার।'
পাকিস্তান সফরে পরিকল্পনামাফিক এগোতে পেরেছেন নাহিদ। দুর্বল জায়গাগুলোতে উন্নতি করে দলের হয়ে অবদান রাখতে পারা ও নিজের প্রত্যাশার পথে হাঁটতে পেরে খুশি দীর্ঘদেহী এই পেসার। তবে সিরিজটা তার কাছে স্বপ্নের মতো কিছু নয়। তার ভাষায়, 'স্বপ্নের মতো নয়। তবে আমি যেটা আশা করেছিলাম, দল যেটা আশা করেছিল আমার কাছে, এই জিনিসটা করতে পেরেছি। দেশ ছাড়ার আগে আমি বলেছিলাম যে, দেশের জন্য কিছু করতে চাই। তো করতে পেরেছি, ভালো লেগেছে।'
সর্বশেষ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪৯.৭ কিলোমিটারে বোলিং করা নাহিদ গতির ঝড় তুলতে পারলেও নির্দিষ্ট কোনো গতিতে বোলিং করার লক্ষ্য নেই বলে জানান। দল এবং নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাই তার একমাত্র লক্ষ্য, 'এটা কখনও অনুভব করিনি যে, ১৫২ কি.মি. গতিতে বোলিং করতে হবে বা এর চেয়েও জোরে করতে হবে। একটা ব্যাপারই মাথায় নিয়ে বোলিং করেছি যে, দল আমাকে যে পরিকল্পনা দিয়েছে, সেভাবে করছি এবং নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী করেছি।'
পাকিস্তানে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে আসা বাংলাদেশ এখন ভারত সফরের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে ভারত যাওয়ার আগে মিরপুর স্টেডিয়ামে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এই সফরেও ভালো করার প্রত্যয় নাহিদের কণ্ঠে, 'প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। প্রস্তুতি যতো ভালো হবে, ওখানে গিয়ে ম্যাচে ততো ভালো করা যাবে। ভারত ভালো দল অবশ্যই। তবে ক্রিকেটে দুই দলের মধ্যে যে ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। ম্যাচেই তাই দেখা যাবে। অবশ্যই আমার লক্ষ্য আছে। দলকে সেরাটা এখনও দেওয়ার বাকি আছে। ইনশাআল্লাহ দেব।'