বিশ্বের দ্বিতীয় লম্বা খেলোয়াড়কে ঘুমোতে হয়েছে মেঝেতে, অবশেষে তার জন্য মিলল বিছানা
ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা প্যারালিম্পিয়ান মোরতেজা মেহেরজাদসেলাকজানি প্যারিস ২০২৪ গেমসে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন—তার বিশাল উচ্চতার কারণে তাকে মেঝেতে ঘুমোতে হয়। বিশাল এক মানুষ, যার উচ্চতা আট ফুট এক ইঞ্চি, তাকে মেঝেতে ঘুমাতে হয় কারণ তার উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শুরুতে বিছানার ব্যবস্থা করতে পারেনি প্যারালিম্পিয়ান কর্তৃপক্ষ।
তবে দুশ্চিন্তা নেই কারণ আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক কমিটি (আইপিসি) জানিয়েছে, সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। মেহেরজাদের জন্য ঠিকঠাক বিছানা তৈরি হয়েছে, যাতে করে তিনি এবার মেঝেতে না শুয়ে আরও আরামে ঘুমোতে পারেন।
মেহেরজাদের উচ্চতা আট ফুট এক ইঞ্চি (দুই মিটার ৪৬ সেন্টিমিটার) এবং তিনি যৌথভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লম্বা ব্যক্তি।
তিনি ইরানের পুরুষ সিটিং ভলিবল দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং গত দুটি প্যারালিম্পিক গেমসে ইরানকে স্বর্ণপদক জেতাতে তার বিশাল অবদান ছিল।
ইরানের প্রধান কোচ হাদি রেজাইগারকানি জানান, "মেহেরজাদের জন্য টোকিওতে বিশেষ বিছানা তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু প্যারিসে এমন ব্যবস্থা ছিল না। তাই তাকে মেঝেতে শুতে হয়েছিল।"
হাদি রেজাইগারকানি অলিম্পিকস ডট কম কে বলেন, "তার (মেহেরজাদ) বিশেষ কোনো বিছানা নেই। তবে তার মনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটাই (স্বর্ণ জয়) রয়েছে। তিনি মেঝেতে শুয়েছেন বা যথেষ্ট খাবার পাননি– এগুলো তার কাছে কোনো ব্যাপার না। যেকোনো পরিস্থিতিতেই তার মনোযোগ শুধুই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে।"
এই খবরের পরপরই প্যারালিম্পিক সংগঠকেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মেহেরজাদের জন্য বিশেষ বিছানার ব্যবস্থা করেন। এখন তিনি আরাম করে ঘুমোতে পারেন এবং হয়ত স্বপ্নে দেখেন আরও একাধিক স্বর্ণপদক জয়ের।
আইপিসি এক বিবৃতিতে জানায়, "প্যারালিম্পিক ভিলেজের বিছানাগুলো মডুলার ডিজাইনের। প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিকের আয়োজকদের কাছে ইরানের এনপিসি থেকে একটি অনুরোধ এসেছিল এবং তারা সাধারণ বিছানার সঙ্গে দুটি এক্সটেনশন সরবরাহ করেছিল। তবে এগুলো যথেষ্ট না হওয়ায় অতিরিক্ত এক্সটেনশন সরবরাহ করা হয়েছে।"
মেহেরজাদের জীবনের গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি অল্প বয়সেই অ্যাক্রোমেগালির মতো বিরল রোগে আক্রান্ত হন, যা তার শরীরকে অস্বাভাবিকভাবে লম্বা করে তোলে। এই রোগের ফলে গ্রোথ হরমোন [শারীরিক বৃদ্ধির জন্য আবশ্যিক হরমোন] অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি প্রায়। তারপর কিশোর বয়সে এক সাইকেল দুর্ঘটনায় তার পায়ের বৃদ্ধিও থেমে যায়। ফলে তার ডান পা বাম পায়ের চেয়ে ছোট হয়ে যায় এবং হাঁটতে সমস্যা হয়।
কিন্তু মেহেরজাদের উচ্চতা তাকে ভলিবল কোর্টে এক অমূল্য সম্পদে পরিণত করেছে। মেঝেতে বসে হাত তুলে তিনি ছয় ফুটেরও বেশি উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেন—যা তার প্রতিপক্ষদের জন্য সত্যিই ভয়ংকর!
ইরানের সিটিং ভলিবল দল গত কয়েক দশক ধরে প্যারালিম্পিক গেমসে দাপটের সঙ্গে খেলেছে এবং মেহেরজাদের মতো একজন খেলোয়াড় তাদের এই সাফল্যের অন্যতম কারণ। ১৯৮৮ সালের সিউল প্যারালিম্পিক থেকে শুরু করে নয়টি গেমসের মধ্যে সাতবারই ইরান সিটিং ভলিবলে স্বর্ণপদক জয় করেছে—যেটি সত্যিই এক অনন্য কীর্তি।