রক্তপাত বন্ধে তামিম-লিটনদের আকুতি
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে তৈরি হওয়া পরিস্থিতে নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল থেকে সবার আগে প্রতিক্রিয়া জানান তাওহিদ হৃদয়। সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন শরিফুল ইসলামও। জাতীয় দলের এই দুই ক্রিকেটারই শ্রীলঙ্কায় লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল) খেলছেন। সেখান থেকেই রক্তপাত বন্ধের আর্জি জানানোয় তাদেরকে প্রশংসায় ভাসানো হয়।
একই সঙ্গে সমালোচনা শুরু হয় দেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিশ্চুপ অবস্থানের কারণে। বিশেষ করে 'পঞ্চপাণ্ডব' নামে পরিচিত মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিক রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়। বুধবার সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেন মুশফিক, বলেন, 'আমার ভাই-বোনদের উপর আর কোনো সহিংসতা দেখতে চাই না।'
এদিন রাতে একই আর্জি জানালেন তামিম। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি হওয়ার কারণও উল্লেখ করেছেন সাবেক এই ওয়ানডে অধিনায়ক। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই ওপেনার লিখেছেন, 'আপনারা জানেন, বড় ভাইয়ের (নাফিস ইকবাল) অসুস্থতায় আমার পরিবারের একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। আমিও দেশের বাইরেই আছি। তবে দেশে যা হচ্ছে, তা জেনে মনটা আরও অস্থির হয়ে উঠেছে।'
তামিম তার পোস্টে আরও লিখেছেন, 'কোনো রক্তপাত, কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই কোনো সংঘাত নয়, আলোচনায় সমাধান হোক। এই অস্থিরতা দ্রুত কেটে যাক। দেশ ও দেশের মানুষ ভালো থাকুক।' মাশরাফি ও সাকিব এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি, এ দুজনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানাননি মাহমুদউল্লাহও।
ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাসেরও একই আহ্বান। তিনি লিখেছেন, 'কোথাও কোনো রক্তপাত, কোনো মৃত্যুই কেউ চায় না। দেশের তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই আর কোনো ভাই-বোনদের উপর সহিংসতা দেখতে চাই না। চলমান সংকটের যৌক্তিকভাবে সমাধান হোক। দেশটা আমাদের সবার।'
এর আগে অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ তার পেজ থেকে লিখেছেন, 'শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তবে শিক্ষার্থীরা হলো হৃদপিণ্ড। আমি চাই না আর রক্ত ঝরুক, খালি হোক কোনো মায়ের কোল। শান্তি চাই, শান্তি চাই!' আফিফ হোসেন ধ্রুব তার পোস্টে লিখেছেন, 'দেশটা আমাদের সবার। আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী, অশান্তিতে নয়। আমার কোনো ভাই-বোনের রক্ত আর না ঝরুক। যৌক্তিকভাবে চলমান সংকট নিরসন হোক। চলমান পরিস্থিতি দ্রুতই শান্তিতে রুপ নেবে। স্বাভাবিক হয়ে যাবে সবকিছু, এমনটাই আশা রাখি।'
বড় পোস্ট দিয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান, তিনি লিখেছেন, 'হাতে সার্জারির জন্য আমি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে আছি। দেশে কী হচ্ছে অনেক কিছুই ভালো ভাবে জানি না। তবে এইটুকু জানি যে, ছাত্র-ছাত্রীরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাই শিক্ষার্থীরা কখনোই দেশের ক্ষতি চাইতে পারে না। আমরা সবাই মিলে এই বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।'
'দেশের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে স্বাভাবিক থাকতে পারছি না। আমরা তরুণ প্রজন্মই এই দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এ জন্য দরকার সঠিক দিক নির্দেশনা। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে কখনই বিশ্ব মঞ্চে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবো না। দেশ সবার আগে, নিজের স্বার্থ পরে।' এভাবে প্রতিক্রিয়া জানান সোহান।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। একটি হল থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত, এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর কয়েক দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই ঘটনার প্রভাব পড়ে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন কয়েক অনেকেই।