ডাচদের হারিয়ে সেমিতে ওঠার লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে রইলো আফগানিস্তান
বিশ্বকাপে রূপকথা লিখেই চলেছে আফগানিস্তান। স্বপ্নের পথচলায় আফগানদের প্রথম শিকার বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এরপর পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারায় দুর্বার ছন্দে থাকা দলটি। তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারানো আফগানরা আজ নেদারল্যান্ডসকে পাত্তাই দিলো না। ব্যাটে-বলে শাসন করে তুলে নিলো আরও একটি জয়।
শুক্রবার লক্ষ্ণৌর ভারত রত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। এবারের বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে এটা তাদের চতুর্থ জয়। এই জয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠার পথ খোলা রইলো তাদের জন্য। যদিও শেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেওয়াটা সহজ নয় পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে থাকা আফগানদের জন্য।
২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে খেলা আফগানিস্তানের বিশ্ব আসরে এরআগে একটি জয় ছিল। নিজেদের প্রথম আসরে তারা স্কটল্যান্ডকে হারায়। আর এবারের আসরেই তারা তুলে নিলো চারটি জয়। এই সাফল্য বাংলাদেশেরও নেই। আফগানদের অনেক আগে থেকে বিশ্বকাপে খেলে আসা বাংলাদেশের এক আসরে সর্বোচ্চ সাফল্য তিনটি জয়। অবশ্য বিশ্বকাপের চারটি আসরে তারা তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা নেদারল্যান্ডস ৪৬.৩ ওভারে ১৭৯ রানে অলআউট হওয় যায়। রান আউটের গোলক ধাঁধায় পড়ে যাওয়া ডাচরা আফগান স্পিনার মুজিব-উর-রহমান, মোহাম্মদ নবী, নুর আহমেদদের ভালোভাবে সামলাতে পারেনি। এরপরও লড়াকু পুঁজি পেতে পারতো তারা, কিন্তু চারজন ব্যাটসম্যান রান আউট হওয়ায় তা হয়নি।
জবাবে রহমত শাহ, অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদির হাফ সেঞ্চুরি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটে ৩১.৩ ওভারেই জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান, তখনও বাকি ছিল ১১১ বল। উইকেটের হিসাবে বিশ্বকাপে এটা তাদের দ্বিতীয় বড় জয়, সবচেয়ে বড় জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটে। বল হাতে রেখে জেতার দিক থেকে বিশ্বকাপে এটা আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়।
দাপুটে জয় তুলে নিলেও লক্ষ্য তাড়ায় আফগানদের শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ২৭ রানে ফিরে যান ১০ রান করা রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ৫৫ রানের মাথায় থামেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানও, ২০ রান করে ভ্যান যার মারওয়ার শিকারে পরিণত হন তিনি। অল্প রানের মধ্যে দুই উইকেট হারালেও দলকে চাপ বুঝতে দেননি রহমত ও হাশতউল্লাহ।
তৃতীয় উইকেটে ৭৭ বলে ৭৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দুজন। এই জুটি গড়ার পথে বিশ্বকাপের চতুর্থ এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রহমত। ৫৪ বলে ৮টি চারে ৫২ রান করে বিদায় নেন তিনি। এরপর ৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন হাশতউল্লাহ ও আজমতউল্লাহ।
৬৪ বলে ৬টিটি চারে ইনিংসসেরা ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন হাশমতউল্লাহ। বিশ্বকাপে এটা তার পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯তম। আজমতউল্লাহ ২৮ বলে ৩টি চার ৩১ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। নেদারল্যান্ডসের লোগান ভ্যান বিক, ভ্যান ডার মারওয়া ও সাকিব জুলফিকার একটি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করা নেদারল্যান্ডসের শুরুটা ভালো ছিল না। যদিও প্রথম ওভারেই ওয়েসলে বারেসিকে হারানো ডাচরা ম্যাক্স ও'দাউদ ও কলিন অ্যাকারম্যানের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে। দ্বিতীয় উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়ে তোলেন এ দুজন। ৪০ বলে ৯টি চারে ৪২ রান করা ম্যাক ও'দাউদ রান আউটে কাটা পড়লে হঠাৎ-ই দিক হারায় নেদারল্যান্ডস। কিছুক্ষণ পর রান আউট হয়ে ফিরে যান ৩৫ বলে ৪টি চারে ২৯ রান করা অ্যাকারম্যানও।
উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানকে দ্রুত হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস। এ সময় তাদের আরও চাপ বাড়ে অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের বিদায়ে। তিনিও রান আউট হন। ১০০ পেরোনোর আগে বাস ডে লেডেও সাজঘরে ফেরেন। ৭২ রানে ২ উইকেট থেকে ৯৭ রানে ৫ উইকেট, কোণঠাসা হয়ে পড়ে ডাচরা। কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট হারাতে থাকে তারা।
বিপর্যয়ের মাঝেও দলকে পথ দেখাতে থাকেন সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। কিন্তু দলীয় সংগ্রহ ১৫০ পেরনোর পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে রান আউটে কাটা পড়েন তিনিও। এর আগে ৮৬ বলে ৬টি চারে ইনিংস সেরা ৫৮ রান করেন এঙ্গেলব্রেখট। শেষ দিকে ভ্যান ডার মারওয়া ১১ ও আরিয়ান দত্ত ১০ রান করেন। ডাচদের পাঁচজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন, বাকিদের মধ্য থেকে কেউ-ই ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। নবী ৯.৩ ওভারে ২৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। নূর ২টি এবং মুজিব একটি উইকেট পান।